বস্ত্র ও আইটিসহ ২৫ প্রকল্পে বিনিয়োগ করবে চীন
শেয়ারবাজার রিপোর্ট: বাংলাদেশের বস্ত্র ও আইটিখাতসহ ২৫ প্রকল্পে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী প্রকাশ করেছে চীন। চলতি মাসে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিন পিংয়ের বাংলাদেশ সফরেই এ ২৫টি প্রকল্প অনুমোদন হতে পারে বলে অর্থমন্ত্রনালয় সূত্রে জানা গেছে।
সূত্র মতে, পটুয়াখালীর পায়রায় প্রস্তাবিত গভীর সমুদ্রবন্দর, পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগসহ যশোর পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণ, চট্টগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা, কর্ণফুলী নদীর নিচে টানেল নির্মাণ, ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ডিপিডিসি) শক্তিশালীকরণ, এবং মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় তৈরি পোশাক খাতে বড় অঙ্কের প্রকল্পে বিনিয়োগে আগ্রহী চীন। বাংলাদেশের অবকাঠামো খাতে বড় আকারের মোট ২৫টি প্রকল্পে তাদের আগ্রহ। আর এসব প্রকল্প বাস্তবায়নের ২ হাজার ৩০০ কোটি মার্কিন ডলার অর্থাৎ ১ লাখ ৮৪ হাজার কোটি টাকা খরচ হবে।
সম্প্রতি ঢাকায় অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে ১৪তম যৌথ অর্থনৈতিক কমিশনের (জেইসি) সভায়ও বাংলাদেশে চীনের বিনিয়োগ নিয়ে আলোচনা গুরুত্ব পায়। ওই সভায় চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ভাইস মিনিস্টার গাও ইয়ান বাংলাদেশের অর্থনৈতিক জোনে বিনিয়োগ এবং তৈরি পোশাক খাতে চীন তাদের দেশের বেশকিছু বিনিয়োগ বাংলাদেশে স্থানান্তর করবে বলে জানান। চীনা প্রেসিডেন্টের সফরে এ বিষয়ে একটি ঘোষণা আসার সম্ভাবনা রয়েছে।
চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিন পিংয়ের বাংলাদেশ সফরে ২ হাজার ৩০০ কোটি ডলার সহায়তার প্রতিশ্রুতি পেতে পারে বাংলাদেশ। ৫ বছরে ২৫টি উন্নয়ন প্রকল্পে এ অর্থ ব্যয় হবে। এরই মধ্যে ইআরডি থেকে প্রকল্পের একটি তালিকা চীনা কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে। এছাড়া দুই দেশের প্রতনিধিদের নিয়ে দুটি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বাস্তবায়নের প্রস্তাব রয়েছে চায়না এক্সিম ব্যাংকের ঋণে। প্রকল্প ও অর্থায়নের পরিমাণ চূড়ান্ত হবে ইআরডি ও চায়না এক্সিম ব্যাংকের প্রতিনিধি দলের বৈঠকে।
চীনের ঋণে প্রকল্প বাস্তবায়নে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত চলতি বছরের শুরুতে মন্ত্রী নিজ কার্যালয়ে বলেছিলেন, চীনা কোম্পানিগুলো রাষ্ট্রীয় হলেও তাদের আচরণ বেসরকারি কোম্পানির মতো। কোনো কোনো ক্ষেত্রে পণ্য বিক্রিতে তারাও তৎপর। নিজেদের প্রয়োজনীয়তার দিকে নজর দেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
সূত্র জানায়, চীন সরকার চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার হয়ে মিয়ানমারের সীমান্ত ঘুমধুম পর্যন্ত ডুয়েলগেজ রেললাইন নির্মাণ, ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলওয়ে কর্ডলাইন নির্মাণ, পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগসহ যশোর পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণ, কর্ণফুলী নদীর নিচে টানেল নির্মাণ, চট্টগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা, ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে ডিজিটাল কানেকটিভিটি, ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ডিপিডিসি) শক্তিশালীকরণ, পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ, ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ এবং ইস্টার্ন রিফাইনারি অ্যান্ড সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং প্রকল্পে আগ্রহ দেখাচ্ছে।
সূত্র আরও জানায়, প্রেসিডেন্টের সফরে চার প্রকল্পের ঋণচুক্তি হতে পারে। এ প্রকল্প চারটি হলো ডেভেলপমেন্ট অব ন্যাশনাল আইসিটি ইনফ্রা-নেটওয়ার্ক ফর বাংলাদেশ গভর্নমেন্ট ফেজ-৩, এতে চীনের বিনিয়োগ ধরা হয়েছে ১৫ কোটি ডলার। কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণ প্রকল্প, এর বিনিয়োগের পরিমাণ ৭০ কোটি ৫৮ লাখ ডলার, ২৮ কোটি ডলারে চট্টগ্রামে চীনের অর্থনৈতিক ও বিনিয়োগ অঞ্চল স্থাপন এবং চীনের ১৮ কোটি ৪৫ লাখ ডলার ঋণে ছয়টি জাহাজ ক্রয়।
এছাড়া বাণিজ্য চুক্তি হতে পারে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ককে চার লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পে, এতে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১৬০ কোটি ৩২ লাখ ডলার। পায়রা কয়লাভিত্তিক দুটি বিদ্যুৎকেন্দ্রে আসতে পারে ৩ বিলিয়ন ডলারের প্রতিশ্রুতি। সীতাকু-ু-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার উপকূলীয় সড়ক নির্মাণে রয়েছে ২৮৫ কোটি ৬৫ লাখ ডলার ঋণ প্রস্তাব। আখাউড়া থেকে সিলেট পর্যন্ত রেললাইন ব্রডগেজে উন্নীতকরণ প্রকল্পে রয়েছে ১৭৫ কোটি ৬০ লাখ ডলার ঋণ প্রস্তাব।
বাণিজ্য চুক্তির জন্য তালিকায় রয়েছে ৫০ কোটি ডলারের ইনস্টলেশন অব সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং উইথ ডাবল পাইপলাইন প্রজেক্ট, ৫০ কোটি ডলারের রাজশাহী ওয়াসার সারফেস ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট প্রজেক্ট, ১৬ কোটি ৬০ লাখ ডলারের সিস্টেম লস রিডাকশন বাই রিপ্লেসিং ফাইভ মিলিয়ন ইলেকট্রো মেকানিক্যাল এনার্জি মিটার উইথ ইলেকট্রনিক এনার্জি মিটার প্রজেক্ট ও ২০ কোটি ডলারের মর্ডানাইজেশন অব টেলিকমিউনিকেশন নেটওয়ার্ক ফর ডিজিটাল কানেকটিভিটি প্রকল্প।
এছাড়া ২০৩ কোটি ৮০ লাখ ডলার ব্যয়ে এক্সপানশন অ্যান্ড স্ট্রেনদেনিং অব পাওয়ার সিস্টেম নেটওয়ার্ক আন্ডার ডিপিডিসি এরিয়া প্রজেক্ট, ৯১ কোটি ৭১ লাখ ডলার ব্যায়ে পদ্মা ব্রিজ রেল লিঙ্ক ফেজ-২, ১৩২ কোটি ১৮ লাখ ডলার ব্যয়ে পাওয়ার গ্রিড নেটওয়ার্ক স্ট্রেনদেনিং প্রজেক্ট আন্ডার পিজিসিবি, ১৬৫ কোটি ৮৫ লাখ ডলার ব্যয়ে পদ্মা ব্রিজ রেল লিঙ্ক ফেজ-১ কনস্ট্রাকশন ও ১৩৯ কোটি ডলার ব্যয়ে ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ প্রকল্পসহ বেশকিছু প্রকল্পে চীনের প্রতিশ্রুতি পাওয়া যেতে পারে বলে জানা গেছে।
একই সূত্রে জানা গেছে, প্রকল্পে ঋণের প্রতিশ্রুতি ছাড়াও চীনের উদ্যোক্তাদের জন্য চট্টগ্রামে একটি অর্থনৈতিক ও শিল্প জোন এবং মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় তৈরি পোশাক খাতে বড় অঙ্কের চায়না বিনিয়োগ দেশটির প্রেসিডেন্টের সফরে নিশ্চিত হতে পারে। এরই মধ্যে চায়না অর্থনৈতিক ও শিল্প জোন স্থাপনে সহজ শর্তে ২৮ কোটি ডলার ঋণ দিবে।
শেয়ারবাজারনিউজ/এম.আর