প্লেসমেন্ট শেয়ার বিক্রির টাকা দিয়ে পুরান বিমান কিনছে ইউনাইটেড এয়ার
শেয়ারবাজার রিপোর্ট: অর্থের অভাবে দেশ–বিদেশে পড়ে থাকা ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ লিমিটেডের ১১টি ফ্লাইট বন্ধ রয়েছে। এমনকি বন্ধ রয়েছে কোম্পানির অন্যান্য কার্যক্রমও। ফলে অযত্ন–অব্যবস্থাপনায় অকেজো পড়ে থাকায় বেশিরভাগ উড়োজাহাজের যন্ত্রাংশগুলো ক্ষয়ে পড়ছে। প্রতিনিয়তই বাড়ছে কোম্পানির ব্যয়। আর এ ব্যয় কমানোর জন্য প্লেসেমন্ট শেয়ার বিক্রি করে ৪০০ কোটি ৮০ লাখ টাকা উত্তোলন করে ইউনাইটেড এয়ার। কিন্তু উত্তোলিত টাকায় দিয়ে পুরাতন উড়োজাহাজগুলো সচল না করে বিদেশ থেকে পুরাতন সাতটি উড়োজাহাজ আনছে কোম্পানি। কোম্পানি সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
জানা যায়, প্রথমদিকে সিঙ্গাপুরের কোম্পানি থেকে দু’টি উড়োজাহাজ আনার পরিকল্পনা থাকলেও তা পরিবর্তন করে পাকিস্তানসহ পাঁচটি দেশে দীর্ঘদিন ব্যবহৃত সাতটি উড়োজাহাজ কিনছে ইউনাইটেড এয়ার। আর তা চারশ কোটি টাকার শেয়ারের বিনিময়ে বিদেশি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে উড়োজাহাজগুলো আনা হচ্ছে। এতে নেতৃত্ব দিচ্ছেন প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ক্যাপ্টেন তারসবিরুল আহমেদ চৌধুরী। ফলে শেয়ার হোল্ডারদের মধ্যে নতুন করে প্রতারণার শিকার হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
এ বিষয়ে একাধিক শেয়ারহোল্ডারগণ জানায়, প্রতিষ্ঠানের প্রধান কাজ ১১টি উড়োজাহাজের ফ্লাইট চালু করে কোম্পানির ঋণ পরিশোধ ও ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীদের শেয়ারের দাম বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া। কিন্তু এমডি তার বিদেশি পার্টনারদের অকেজো উড়োজাহাজ এনে প্রতিষ্ঠানকে আরো ডোবাতে চাচ্ছেন।
তারা আরো বলেন, উদ্যোক্তা–পরিচালকদের মতোই কয়েকদিন পর বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের হাতে থাকা শেয়ারগুলো বিক্রি করে ইউনাইটেড এয়ার ছাড়বেন। বিদেশিরা যাতে এক বছরের মধ্যে শেয়ার বিক্রি করতে পারেন সে জন্য কোম্পানির পক্ষ থেকে লগইনের সময় তিন বছর থেকে কমিয়ে এক বছর করার জন্য আবেদন করেছে।
সর্বশেষ তথ্য মতে, কোম্পানির উদ্যোক্তা/পরিচালকরা ২.০২ শতাংশ শেয়ার বিক্রি করে ইউনাইটেড এয়ার ছেড়েছেন। বর্তমানে কোম্পানির উদ্যোক্তা/পরিচালকদের কাছে শেয়ার রয়েছে ৫.০২ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে ১৭.৪৩ শতাংশ এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে রয়েছে ৭৭.৫৫ শতাংশ শেয়ার।
উল্লেখ্য, ২০১০ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভূক্ত হওয়া কোম্পানির এখন নিজস্ব নয়টি ও দু’টি ভাড়া উড়োজাহাজ রয়েছে। এর মধ্য কক্সবাজারে দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত উড়োজাহাজটি মালিকের হেফাজতে রয়েছে। ভারতে দুর্ঘটনার পর পড়ে আছে আরেকটি। দেশে থাকা নয়টির মধ্যে চারটি চলাচলের উপযোগী আর অপর পাঁচটির অবস্থা নাজুক।
এ অবস্থায় সিঙ্গাপুরের সুইফট এয়ার কার্গো কোম্পানি থেকে বোয়িং–৭৭৭ এবং ফনিক্স এয়ারক্রাফট লিজিং পিটিই ও বাংলাদেশি কোম্পানি টিএসি এভিয়েশনের কাছ এটিআর–৭২–৫০০ নতুন প্রজন্মের উড়োজাহাজ আনার অনুমোদন দেয় পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি)। দু’টি উড়োজাহাজের মূল্য চারশ কোটি ৮০ লাখ ৮৮ হাজার টাকা। কিন্তু ওই টাকায় কেনা হচ্ছে সাতটি উড়োজাহাজ। এসব উড়োজাহাজের প্রতিটিতে তিনশর বেশি আসন থাকবে। ফলে সস্তায় কেনা উড়োজাহাজের সক্ষমতা ও মান নিয়ে বিনিয়োগকারী এবং সংশ্লিষ্টদের প্রশ্ন রয়েছে।
এদিকে নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও ইস্যু ব্যবস্থাপক বিদেশি বিনিয়োগের বিষয়ে দিনক্ষণ নির্ধারণ করলেই চলতি বছরেই অন্তত দুটি উড়োজাহাজ কোম্পানিতে যোগ হবে। সবমিলে আগামী বছরেই ১৭ থেকে ১৯টি উড়োজাহাজের মাধ্যমে দেশ–বিদেশে ফ্লাইট পরিচালনার স্বপ্ন ইউনাইটেড এয়ারের।
শেয়ারবাজারনিউজ/এম.আর