গতিশীল হচ্ছে পুঁজিবাজার
শেয়ারবাজার রিপোর্ট: দেশের শেয়ারবাজার অনেকটাই ইতিবাচক ধারায় লেনদেন করছে গত জুলাই মাস থেকে। চলতি বছরের জুলাই মাসের মাঝামাঝি সময় থেকেই ছোট খাটো কারেকশনের মধ্য দিয়ে শেয়ারবাজারে দৈনিক লেনদেন, বাজার মূলধন ও সূচকের পরিমাণ বাড়ছে। এতে বিনিয়োগকারীদের আস্থাও ফিরে আসতে শুরু করেছে। তবে বাজারের কিছু মহল শেয়ারবাজারকে জুয়ার দান হিসেবে ব্যাখ্যা করে আসছে। কারণ বাজারে সাম্প্রতিক সময়ে কিছু গুজব ছড়িয়ে, অনেকেই বাজার থেকে মুনাফা তুলে নিচ্ছে। কিন্তু বাজার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাজারের বর্তমান অবস্থাকে গুজব বললে হবে না।
তারা মনে করছেন, বিগত সময়ের ধারাবাহিক মন্দায় বাজারে বিনিয়োগকারীদের আস্থার জায়গাটা একেবারেই শুণ্যের কোঠায় নেমে এসেছিল। তবে সাম্প্রতিক সময়ে গৃহীত কিছু ইতিবাচক সিদ্ধান্তে বিনিয়োগকারীদের মনে নতুন করে আশার সঞ্চার করেছে। যার ফলে গত কয়েকদিন বাজারে সূচক ও লেনদেনের পরিমাণ বেড়েছে।
এ বিষয়ে একাধিক মার্চেন্ট ব্যাংকের কর্মকর্তা জানান, ২০১০ সালের ধসের পর বাজারে যে আস্থা সংকট দেখা দিয়েছিল, তা এখন নেই বলেই মনে হচ্ছে। বাজারে বেশ কিছুদিন ধরে অস্বাভাবিক উত্থান বা পতন দেখা যাচ্ছে না। এটা ভালো লক্ষণ। কিন্তু শেয়ারবাজার নিয়ে মানুষের মধ্যে জুয়া বা গুজবের ভুল ধারণা রয়েছে। এ ভুল ধারণা দূর করা হলে শেয়ারবাজারের মাধ্যমে ব্যাপক বিনিয়োগ বাড়ানো সম্ভব। তবে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ঝুঁকি রয়েছে, তাই বিনিয়োগের আগে অবশ্যই বিনিয়োগকারীদের ভালো করে তথ্য যাচাই-বাছাই করতে হবে বলে মনে করেন তারা।
ডিএসই’র বাজার বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, বছরের শুরুতে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ছিল ৪ হাজার ৬২৪ পয়েন্টে। আর লেনদেন ছিল ৩৬৬ কোটি ৪২ লাখ টাকা। মে মাসের উত্থানের পর জুন মাসে নেতিবাচক প্রবণতা দেখা দেওয়ায় সূচক ও লেনদেন উভয় কমে যায়। জুলাইয়ের শুরুতে ডিএসইএক্স সূচক কমে দাঁড়ায় ৪ হাজার ৪৯৫ পয়েন্টে এবং গত ১১ জুলাই লেনদেন নেমে আসে ২০৯ কোটি ৫৪ লাখ টাকায়। তবে এর পরেই ঘুরতে থাকে শেয়ারবাজার। ছোট ছোট উত্থানে বাজারের লেনদেন ৫০০ কোটিতে চলে আসে। সর্বশেষ গত ২৯ সেপ্টেম্বর বাজারের লেনদেন প্রায় ৭০০ কোটির কাছাকাছি লেনদেন হয়। ওইদিন ডিএসইএক্স ৪ হাজার ৬৯৫ পয়েন্টে এসে দাঁড়ায়।
এদিকে চলতি বছরের প্রথম কার্যদিবস ডিএসইর বাজার মূলধন ছিলো ৩ লাখ ১৫ হাজার ৮৪৮ কোটি টাকা। এরপর ১৭ অক্টোবর বাজারে মূলধনের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়ায় ৩ লাখ ২৭ হাজার ৩২ কোটি টাকায়। অর্থাৎ চলতি বছরে ডিএসইর বাজার মূলধন বেড়েছে ১১ হাজার ১৮৪ কোটি টাকা। আর শেষ সাড়ে তিন মাসে বেড়েছে ১০ হাজার ৩১ কোটি টাকা।
তবে লেনদেন ও সূচকে গতি ফিরলেও শেয়ারবাজারে সার্বিক সুশাসনে এখনো কিছুটা ঘাটতি আছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, ‘১৯৯৬ এবং ২০১০ সালের শেয়ার কারসাজির হোতাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে পারেনি নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
সর্বশেষ কারসাজির ঘটনায় খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদের তদন্ত প্রতিবেদনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুললেও পুনর্গঠিত নিয়ন্ত্রক সংস্থা ওই কারসাজির হোতাদের খুঁজে পেতে দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগই নেয়নি। ফলে সুশাসন নিয়ে কিছুটা প্রশ্ন রয়েই গেছে। যদি কারসাজিকারীদের বিচারের করা সম্ভব হতো তাহলে মানুষের মধ্যে আস্থা আরও বাড়ত বলে মনে করছেন তারা।
এ বিষয়ে ডিএসই’র পরিচালক শাকিল রিজভী শেয়ারবাজারনিউজ ডটকমকে জানান, আসলেই শেয়ারবাজার বড় কঠিন। এ বাজারে শেয়ারের দর বাড়াতে গুজব ও হুজুগ বেশি কাজ করে। এখানে আশার বাণী, অনুদান বা প্রণোদনা কোনো কাজে আসে না। তবে গুজব ও হুজুগ সবসময়ই ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তাই এসব পরিত্যাগ করে বিনিয়োগের আগে জেনে বুঝে বিনিয়োগ করতে হবে বলে মনে করেন তিনি।
বিনিয়োগকারীদের পরামর্শ হিসেবে তিনি আরো বলেন, সব টাকা এক সাথে বিনিয়োগ না করে ধাপে ধাপে কিনুন এবং ধাপে ধাপে বিক্রি করুন ।
এদিকে ডিএসইর পরিচালক রকিবুর রহমান বলেন, শেয়ারবাজারের বর্তমান অবস্থা ইতিবাচক ও স্বাভাবিক। মানি মার্কেটের চেয়ে শেয়ারবাজার ভালো অবস্থানে রয়েছে। বাজারে বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ বাড়ছে। এখানে আস্থার ও ইমেজের কোনো সংকট নেই। এ ছাড়া রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও অর্থনীতির বিভিন্ন সূচক ইতিবাচকতায় অবস্থায় রয়েছে। ফলে আশা করা যায় শেয়ারবাজার গতিশীল হবে।
শেয়ারবাজারনিউজ/এম.আর