আর্থিক প্রতিষ্ঠান কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে যেসব দাবী করেছে
শেয়ারবাজার রিপোর্ট: আর্থিক প্রতিষ্ঠানে বীমা কোম্পানির বিনিয়োগ নীতিমালা আধুনিকায়নের বিষয়ে প্রস্তাব করা দেয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে এককভাবে আর্থিক প্রতিষ্ঠানে প্রস্তাবিত বীমা কোম্পানির লাইফ ফান্ডের ২ শতাংশ বিনিয়োগের পরিবর্তে ১০ শতাংশ এবং সমন্বিত ১৫ শতাংশের পরিবর্তে ৫০ শতাংশ নির্ধারণ করার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। তবে বিষয়টির সাথে বীমা নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএরের সংশ্লিষ্টতা থাকায় এ বিষয়ে আলোচনা অব্যাহত রাখার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে।
এছাড়া বৈঠকে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সাবসিডিয়ারির মাধ্যমে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে, বর্তমানে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ৭ থেকে ৮ টি প্রতিষ্ঠানের সাবসিডিয়ারি কোম্পানির মাধ্যমে পুঁজিবাজারে ২৫ শতাংশের বেশি বিনিয়োগ রয়েছে। এ ধরনের প্রতিষ্ঠানগুলোর অতিরিক্ত বিনিয়োগ সমন্বয়ের ক্ষেত্রে কোন শেয়ার বিক্রি ছাড়াই ইতিপূর্বে ব্যাংকের ক্ষেত্রে যে ধরনের নীতি অনুসরণ করা হয়েছে অর্থাৎ ইক্যুইটি বৃদ্ধির মাধ্যমে অতিরিক্ত বিনিয়োগকে মূলধন হিসেবে গণ্য করতে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।এক্ষেত্রে এককভাবে প্রতিষ্ঠানগুলোকে তাদের পর্ষদের মাধ্যমে এ সংক্রান্ত প্রস্তাব পাশ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে পাঠাতে হবে। পরবর্তীতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে প্রতিষ্ঠানগুলোর অতিরিক্ত বিনিয়োগ সমন্বয়ের জন্য নীতি সহায়তা প্রদান করবে।
বর্তমানে ১৩ টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানে সরকারি আমানত রাখার সুযোগ থাকলেও এক্ষেত্রে ব্যাংকের মত সকল আর্থিক প্রতিষ্ঠানে সরকারি আমানত রাখার সুযোগ রাখার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে অর্থ মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব দিতে বলা হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মতামত চাইলে সেক্ষেত্রে সুপারিশ করার কথা বলা হয়েছে।
তাছাড়া, বৈঠকে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো বিদ্যমান সার্ভিস চার্জ ০.৫০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১ শতাংশ এবং সর্বোচ্চ সীমা ২ লাখ থেকে বাড়িয়ে ৫ লাখ টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। এ বিষয়টি যাচাই-বাছাই করে দেখতে আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বাজার বিভাগকে বলা হয়েছে।
বন্ডে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ৫ বছর কর রেয়াত সুবিধা প্রদানের জন্য বলা হয়েছে। তাছাড়া ৫ বছর পরে বন্ডে যৌক্তিক হারে করারোপের কথা বলা হয়েছে। তবে বিষয়টি সাথে এনবিআর সংশ্লিষ্ট থাকায় এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে এনবিআরকে সুপারিশ করার কথা বলা হয়েছে।
বর্তমানে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর গ্রাহকদের ক্ষেত্রে ১ বছর পর্যন্ত ঋণ পরিশোধ না করলে খেলাপী হিসেবে সিআইবিতে রিপোর্ট করতে হয়। তবে প্রতিষ্ঠানগুলো এক্ষেত্রে ব্যাংকের মত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রেও ৬ মাস ঋণ পরিশোধ না করলে সিআইবি রিপোর্টিং করার কথা বলা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক এ ব্যাপারে সম্মতি জানিয়েছে।
এছাড়াও বৈঠকে প্রস্তাবিত ফাইন্যান্স কোম্পানি আইনের বিষয়ে বলা হয়, আইনটি অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে পাঠানো হয়েছে এবং বিষয়টি তাদের বিবেচনায় রয়েছে।
তাছাড়া, আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ঋণের নিরাপত্তা ভ্যালুয়েশনের ক্ষেত্রে অতিরঞ্জিত তথ্য উপস্থাপনের বদলে প্রকৃত অবস্থা তুলে ধরতে গভর্ণর আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহীদের নির্দেশনা প্রদান করেন। সেইসাথে গভর্ণর আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে সুশাসনের ব্যত্যয় ঘটেছে উল্লেখ করে কঠোরভাবে সুশাসন বজায় রাখতে নির্দেশনা প্রদান করেন।
উল্লেখ্য, আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহীদের সাথে গভর্ণরের সমন্বয় সভায়, কেন্দ্রীয় ব্যাংক গভর্ণর ফজলে কবীর, আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন বিএলএফসিএর চেয়ারম্যান মফিজউদ্দিন সরকার, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বাজার বিভাগের মহাব্যবস্থাপক শাহ আলম সহ সকল আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহীগণ উপস্থিত ছিলেন।
শেয়ারবাজারনিউজ/আ