আজ: বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪ইং, ১১ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৩ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

২৮ নভেম্বর ২০১৬, সোমবার |

kidarkar

ইটিএফের আদি-অন্ত: তৈরি হতে পারে নতুন সূচক

etf_sharebazarnewsশেয়ারবাজার রিপোর্ট: দেশের পুঁজিবাজারে আসন্ন এক্সচেঞ্জ ট্রেডেড ফান্ডের (ইটিএফ) জন্য নতুন সূচক তৈরীর প্রয়োজন হতে পারে। কারন ইটিএফের ইতিহাস থেকে প্রয়োজনে নতুন সূচক গঠন ও পুরাতন সূচকের ব্যবহার দুটোই পাওয়া যায়।

ইটিএফের পূর্ব ইতিহাস থেকে জানা যায় যে, বেশিরভাগ ইটিএফকেই আগের তৈরী করা সূচককে অনুসরন করতে দেখা গেছে। তবে আমাদের দেশের বাজার মূলধন এবং বাজার গভীরতায় নতুন কোন সূচকের প্রয়োজন হলেও হতে পারে।

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম. সাইফুর রহমান মজুমদার শেয়ারবাজারনিউজ’কে বলেন, আমরা আসলে ইটিএফের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি। এখন আমরা দেখছি ইটিএফের জন্য নতুন কোন সূচক তৈরী করতে হবে কিনা। যদি সম্ভব হয় আমাদের বর্তমান সূচক থেকেই যে কোন একটি ব্যবহার করা যেতে পারে।

অন্যদিকে, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) একটি সূত্র জানিয়েছে বিষয়টি নিয়ে ডিএসই পুরোপুরি প্রস্তুত রয়েছে। সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে যে কোন মূহুর্তে ইটিএফের কার্যক্রম শুরু করা যাবে।

তবে বিশ্লেষকরা মনে করছেন, একদিকে ইটিএফ’কে জনপ্রিয় ও সক্রিয় একটি পন্য হিসেবে চালু করতে এর সেটেলমেন্ট সাইকেল সংক্ষিপ্ত রাখা প্রয়োজন। এতে করে বিনিয়োগকারীরা ইটিএফের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠবে। অন্যদিকে, নেটিং পদ্ধতি ছাড়া মার্কেট মেকাররা কার্যকরী ভূমিকা পালন করতে সক্ষম হয় না। অন্তত মার্কেট মেকারদের জন্য হলেও সিকিউরিটিজ নেটিং আবার চালু করা প্রয়োজন। কেননা মার্কেট মেকার ছাড়া ইটিএফ’কে সক্রিয় করা দু:স্বাধ্য হতে পারে।

বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো স্টক এক্সচেঞ্জের নির্দিষ্ট সূচক, সূচকভুক্ত কোম্পানি কিংবা নির্দিষ্ট খাতের শেয়ারে বিনিয়োগের জন্য এটি প্রয়োজন। ইটিএফ গঠনের লক্ষ্যে অনেকদিন ধরে যৌথভাবে কাজ করছে দেশের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও স্টক এক্সচেঞ্জগুলো ।

বিদ্যমান মিউচুয়াল ফান্ড বিধিমালার আওতায় বিশেষ ধরনের এ সামষ্টিক তহবিল চালু বা পরিচালনা সম্ভব না হওয়ার কারণেই আলাদা বিধিমালা তৈরির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। কারণ বিশ্বের পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রকদের সংঘ ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন অব সিকিউরিটিজ কমিশনসের (আইওএসসিও) সিদ্ধান্ত অনুসারে, ইটিএফ ও মিউচুয়াল ফান্ডের মতো অন্যান্য সমষ্টিগত বিনিয়োগ তহবিলের (সিআইএস) জন্য আলাদা বিধিমালা থাকতে হবে সদস্য নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর।

ইটিএফ হচ্ছে এক প্রকার বে-মেয়াদি (ওপেন-এন্ড) সমষ্টিগত বিনিয়োগ তহবিল। তবে বে-মেয়াদি হলেও এসব ফান্ডের ইউনিট সেকেন্ডারি বাজারে কেনাবেচা সম্ভব। প্রথাগত বে-মেয়াদি মিউচুয়াল ফান্ড সাধারণত শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয় না। এছাড়া প্রথাগত মিউচুয়াল ফান্ড থেকে তালিকাভুক্ত ও তালিকা-বহির্ভূত যেকোনো কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগ করা যায়। অন্যদিকে ইটিএফ কেবল শেয়ারবাজারের সূচক, সূচকভুক্ত কোম্পানির শেয়ার বা পূর্বনির্দিষ্ট খাতের তালিকাভুক্ত কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগ করতে পারে।

প্রচলিত মিউচুয়াল ফান্ডের সঙ্গে ইটিএফের বৈশিষ্ট্যগত আরেকটি বড় পার্থক্য হচ্ছে, প্রচলিত মিউচুয়াল ফান্ডের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে সংগ্রহ করা গেলেও ইটিএফ তা করতে পারে না। ইটিএফ বাজারে শুধু বড় ব্লক ইস্যু করতে পারে, যা ‘ক্রিয়েশন ইউনিট’ নামে পরিচিত। সাধারণত ব্যাংক, ব্রোকার-ডিলার, পেশাদার ট্রেডিং হাউজ, ইনস্টিটিউশনাল ফার্ম বা বিশেষজ্ঞ দ্বারা অনুমোদিত অংশগ্রহণকারীরা ম্যাচিং পোর্টফোলিও (ইটিএফে যে পোর্টফোলিও প্রতিফলিত হয়) বিনিময়ের মাধ্যমে ইটিএফের ক্রিয়েশন ইউনিট নিতে পারবেন।

ক্রিয়েশন ইউনিট কেনার পর প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা এর পৃথকীকরণ করতে পারবেন এবং সেগুলো সেকেন্ডারি বাজারে বিক্রি করতে পারবেন। এক্ষেত্রে ক্রিয়েশন ইউনিটের আকার-সংখ্যার হ্রাস-বৃদ্ধির বিষয়গুলো প্রসপেক্টাসে স্পষ্ট উল্লেখ থাকতে হবে। এছাড়া ইটিএফ শুধু প্রসপেক্টাসে উল্লিখিত নির্ধারিত সূচকে অন্তর্ভুক্ত সিকিউরিটিজেই বিনিয়োগ করতে পারবে। প্রথা অনুযায়ী, স্টক এক্সচেঞ্জ তার সূচকে অন্তর্ভুক্ত কোম্পানির তালিকায় কোনো পরিবর্তনের বিষয়টি আগেই ফান্ডকে জানিয়ে দেবে।

উল্লেখ্য, এক্সচেঞ্জ ট্রেডেড ফান্ড (ইটিএফ) হচ্ছে একগুচ্ছ নির্দিষ্ট শেয়ারে বিনিয়োগের উদ্দেশ্যে গঠিত ফান্ড। যার জন্ম হয়েছিল ১৯৮৯ সালে আমেরিকান স্টক এক্সচেঞ্জের এসএন্ডপি ৫০০ সূচকের মাধ্যমে। একই বছরে এটি আবার ব্যাবহার হয় ওই দেশের ফিলাডেলফিয়া স্টক এক্সচেঞ্জে। পরে শিকাগো মার্কেন্টাইল এক্সচেঞ্জের এক মামলার মূখে এটা বেশি দিন স্থায়ী হয়নি। তবে এ প্রতিরোধ সত্তেও ইটিএফ পুরো যুক্তরাষ্ট্রে সফল ভাবে এগিয়ে চলে।

একই ধরনের জিনিস ১৯৯০ সালে টরেন্টো স্টক এক্সচেঞ্জ (টিএসই) তাদের বাজারে নিয়ে আসে। যা প্রথমে টিএসই-৩৫ এবং টিএসই-১০০ নামে পরিচিত। এগুলো পরবর্তীতে বেশ জনপ্রিয়তার প্রমান দিয়েছে। এই পন্যের জনপ্রিয়তা হয়েছে আমেরিকান স্টক এক্সচেঞ্জের নেতৃত্বে। কেননা এই স্টক এক্সচেঞ্জটি এমন কিছু ডেভেলপ করতে চেয়েছে যা দিয়ে আমেরিকার সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনকে সন্তুষ্ট করা যায়।

ইন্টারন্যাশনাল সিকিউরিটিজ এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান ইভার্স রিলের নির্দেশনায় নাথান মোস্ট এবং স্টিভেন ব্লুম গঠন করেন স্ট্যান্ডার্ড এন্ড পুওর’স ডিপোজিটরি রিসিপ্টস (এসপিডিআর)। যা এসএন্ডপি ৫০০ সূচককে দীর্ঘ সময় ধরে অনুসরন করে। ২০১২ সালের আগস্টের দিকে এটিই ছিল পৃথিবীর সবচেয়ে বড় এবং গতিশীল এক্সচেঞ্জ ট্রেডেড ফান্ড (ইটিএফ)।

১৯৯৬ সালে ওয়ার্ল্ড ইক্যুইটি বেঞ্চমার্ক শেয়ার্স (ডব্লিউইবিএস) নামে একটি নতুন ইটিএফ গঠন করা হয়। যেখানে যৌথভাবে কাজ করে ব্রিটিশ মাল্টিন্যাশনাল ব্যাংকিং এবং ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস কোম্পানি বার্কলে পিএলসি’র সাবসিডিয়ারী বার্কলে গ্লোবাল ইনভেস্টরস, আমেরিকা ভিত্তিক এমএসসিআই ইনকর্পোরেশন, একই সাথে তার আন্ডার রাইটার এবং বোস্টন ভিত্তিক ফান্ডস ডিস্ট্রিবিউটর ইনকর্পোরেশন। এ এক্সচেঞ্জ ট্রেডেড ফান্ডে (ইটিএফ) একে অপরের পরিপূরক হিসেবে কাজ করে।

পরবর্তীকালে নতুন করে এ ইটিএফ ফান্ডের নাম পরিবর্তন করে iShares MSCI ইনডেক্স ফান্ড শেয়ার্স রাখা হয়। ডব্লিউইবিএস মূলত অনুসরন করতো MSCI সূচক ভুক্ত মরগ্যান স্ট্যানলি এর তহবিল প্রদানকারী ১৭টি দেশের সূচকগুলোকে। ডব্লিউইবিএস ছিল বিশেষ ভাবে উদ্ভাবনমূলক, কেননা তারা বিনিয়োগকারীদের আন্তর্জাতিক বাজারে পরিচয় হতে সুযোগ করে দিয়েছে।

এরপর যখন বিশ্বব্যাপী ইটিএফ পরিবার স্পাইডার বা এসপিডিআর ইউনিট ইনভেস্টমেন্ট ট্রাস্ট গঠন করেছিল তখন ডব্লিউইবিএস’কে প্রথম ধরনের মিউচুয়াল ফান্ড হিসেবে গঠক করা হয়েছিল। উল্লেখ্য, স্পাইডার বা এসপিডিআর হল: এক্সচেঞ্জ ট্রেডেড ফান্ডের (ইটিএফ) একটি পরিবার। যার লেনদেন হয়েছিল আমেরিকা, ইউরোপ এবং এশীয় অঞ্চলে। যা পরিচালনা করত স্টেট স্ট্রীট গ্লোবাল এডভাইজর্স (এসএসজিএ)। এসএসজিএ হচ্ছে স্টেট স্ট্রিট কর্পোরেশন এর ইনভেস্টমেন্ট ম্যানেজমেন্ট ডিভিশন। স্টেট স্ট্রিট কর্পোরেশন হল পৃথিবীর তৃতীয় বৃহত্তম এ্যাসেট ম্যানেজার এবং এর সম্পদ মূল্য ২.৪০ ট্রিলিয়ন ইউএস ডলারের বেশি।

এসএসজিএ ১৯৯৮ সালে ‘সেক্টর স্পাইডার’ এর সূচনা করে, যা এসএন্ডপি ৫০০ সূচকের ৯টি খাতকে অনুসরন করে। একই সাথে ১৯৯৮ সালে আর্কিফেলেগো এক্সচেঞ্জ বা এনওয়াইএসই ‍আর্কে ‘ডো ডায়মন্ডস’ ইটিএফ সংযুক্ত করে। যা বেশ জনপ্রিয় ‘ডো জোনস ইন্ডাস্ট্রিয়াল এভারেজ’কে অনুসরন করে। ‘ডো জোনস ইন্ডাস্ট্রিয়াল এভারেজ’ হচ্ছে একটি সুচক এবং এটি প্রথম ১৮৯৬ সালে মে মাসের ২৬ তারিখ গঠন করা হয়েছিল। ১৯৯৯ সালে প্রভাবশালী “কিউব” (নাসডাক: QQQ) চালু করার চেষ্টা করা হয়েছিল। যা নাসডাক-১০০ এর প্রতিরুপ হিসেবে কাজ করবে।

২০০০ সালে, বার্কলে গ্লোবাল ইনভেস্টরস ইটিএফ বাজারে শিক্ষা ও ডিস্ট্রিবিউশনের দিকে একটি শক্তিশালী জোড় দিয়ে বিনিয়োগকারীদের দীর্ঘ মেয়াদে বিনিয়োগের দিকে পৌছানোর জন্য একটি উল্লেখযোগ্য চেষ্টা চালায়। আই ‍শেয়ার্স লাইন ২০০ সালের শুরুতে চালু হয়। মাত্র ৫ বছরের মধ্যে আই শেয়ার্স আমেরিকা এবং ইউরোপের অন্য যেকোন ইটিএফ এর সম্পদ ছাড়িয়ে যায়। ২০০৯ সালে বার্কলে গ্লোবাল ইনভেস্টর্স ‘ব্ল্যাকরক’ এর কাছে বিক্রি হয়ে যায়। যা ১৯৮৮ সালে প্রতিষ্ঠিত নিউইয়র্ক ভিত্তিক আমেরিকান গ্লোবাল ইনভেস্টমেন্ট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি। এটি পৃথিবীর সবচেয়ে বড় এ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি এবং বিশ্বব্যাপী এর সম্পদমূল্য ৫.১০ ট্রিলিয়ন ইউএস ডলারের বেশি।

এরপর ২০০১ সালে ইটিএফ মার্কেটে দ্যা ভ্যানগার্ড গ্রুপ প্রবেশ করে। নিউইয়র্ক স্টক এক্সচেঞ্জে ভ্যাগার্ডের প্রথম ইটিএফ ফান্ড হচ্ছে ‘ভ্যানগার্ড টোটাল স্টক মার্কেট ইটিএফ’ বা এনওয়াইএসই এআরসিএ: ভিটিআই। যা বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে এবং ভ্যানগার্ড এক্সটেন্ডেড মার্কেট ইনডেক্স ইটিএফ (ভিএক্সএফ) গঠন করে। কিছু ভ্যানগার্ড ইটিএফ বর্তমান মিউচ্যুয়াল ফান্ড ধরনের শেয়ার রয়েছে।

আই শেয়ার্স ২০০২ সালের জুলাই’তে ইউএস ট্রেজারী বন্ড এবং কর্পোরেট বন্ডের ওপর ভিত্তি করে প্রথম বন্ড তৈরী করে। যেমন আই শেয়ার্স আইবিওএক্সএক্স ইনভেস্ট গ্রেড সিআরপি বন্ড (এলকিউডি)। তারা আরও একটি টিআইপিএস ফান্ডও গঠন করে। ২০০৭ সালে জাঙ্ক এবং মুনি বন্ডের ওপর ভিত্তি করে ফান্ড চালু করে। প্রায় একই সময়ে এসপিডিআর এবং ভ্যানগার্ড একটি বিষয় খুজে পায় এবং তাদের কয়েকটি বন্ড ফান্ড গঠন করে।

তারপর থেকে ইটিএফ এর শুধু বৃদ্ধিই ঘটেছে ক্রমবর্ধমান আকারে অঞ্চল, পন্যদ্রব্য, বন্ড, ভবিশ্যৎ এবং অন্যান্য ধরনের সম্পদে। শুধু আমেরিকায় ২০১৪ সালের জানুয়ারীতে ১.৭০ ট্রিলিয়ন ইউস ডলারের ওপর সম্পদের সাথে দেড় হাজারের বেশি ইটিএফ লেনদেন হয়েছে। যা ২০১৪ সালের ডিসেম্বরের ইটিএফে লেনদেনকৃত সম্পদের পরিমান ২ ট্রিলিয়ন ইউএস ডলারের ওপরে চলে গেল।

শেয়ারবাজারনিউজ/রু

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published.

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.