আজ: শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ইং, ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ১৮ই রমজান, ১৪৪৫ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

২৭ নভেম্বর ২০১৬, রবিবার |

kidarkar

প্রথমবারের মতো লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করেছে এনবিআর

nbrশেয়ারবাজার ডেস্ক: প্রথমবারের মতো লক্ষমাত্রা অতিক্রম করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর)। বাজেটের আকার বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে প্রতি বছরই বাড়ে এনবিআরের রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা। তবে প্রথম প্রান্তিকের রাজস্ব আহরণে বরাবরই লক্ষ্যমাত্রা থেকে পিছিয়ে থাকলেও এবার ব্যতিক্রম ঘটেছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকের সাময়িক হিসাবে, লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৪ হাজার কোটি টাকা বেশি রাজস্ব আহরণ করেছে সংস্থাটি।

এনবিআরের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৬-১৭ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে আয়কর, মূল্য সংযোজন কর (মূসক) ও শুল্ক খাতে ৩৭ হাজার ৭০০ কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে রাজস্ব আহরণ হয়েছে ৪২ হাজার কোটি টাকার বেশি। ২০১৫-১৬ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে ৩২ হাজার ২১০ কোটি টাকার বিপরীতে সংস্থাটি আহরণ করেছিল ৩০ হাজার ৯২৮ কোটি টাকা। অর্থাত্ গত অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকেও লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা পিছিয়ে ছিল এনবিআর।

রাজস্ব আহরণের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সময়োপযোগী কৌশল গ্রহণ, লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বাজেট বাস্তবায়ন ফোরাম গঠন, নিয়মিত মনিটরিং ও মাঠপর্যায়ে কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণের কারণেই রাজস্ব আহরণে এ সাফল্য এসেছে। সেসঙ্গে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির মাধ্যমে পুরনো মামলা নিষ্পত্তি, সর্বস্তরে সুশাসন বাস্তবায়ন ও তথ্যপ্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করার কারণেও অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে লক্ষ্যমাত্রার অতিরিক্ত রাজস্ব আহরণ সম্ভব হয়েছে।

জানতে চাইলে এনবিআর চেয়ারম্যান ও অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. নজিবুর রহমান বলেন, রাজস্ব আদায়ে অন্যতম শর্ত সময়োপযোগী যথাযথ কৌশল নির্ধারণ। এ কৌশল বাস্তবায়নে রাজস্ব বিভাগে কর্মরত সবাই মিলে কাজ করেছি। সঠিক সময়ে যোগ্য ব্যক্তিকে উপযুক্ত পদে পদায়ন করেছি। চলমান মামলা নিষ্পত্তিতে সন্তোষজনক অগ্রগতি হয়েছে। ভালো অগ্রগতি হয়েছে বকেয়া আদায়েও। এসব কারণেই লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সফল হয়েছে এনবিআর।

তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, বিগত সময়ে রাজস্ব আহরণে আয়কর খাতে বছরের প্রথম দিকে ভাটা থাকলেও এর ব্যতিক্রম দেখা গেছে এবার। আয়কর খাতে চলতি অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৪ হাজার ১৭৯ কোটি টাকা বেশি আহরণ করেছে এনবিআর। গত অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকেও আয়কর থেকে রাজস্ব আহরণে প্রায় ৭০০ কোটি টাকা ঘাটতি ছিল।

চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে আয়কর থেকে রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১০ হাজার ৪৩০ কোটি টাকা। এর বিপরীতে আহরণ হয়েছে ১৪ হাজার ৬০৯ কোটি টাকা। ২০১৫-১৬ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে এনবিআর আয়কর আহরণ করেছিল ৮ হাজার ৬৪১ কোটি টাকা।

রাজস্ব আহরণের আরেক গুরুত্বপূর্ণ খাত আমদানি-রফতানি শুল্ক বাবদ চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে ১২ হাজার ১১ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে এনবিআর আহরণ করেছে ১২ হাজার ২৫৪ কোটি টাকার রাজস্ব। এ হিসাবে শুল্ক বাবদ চলতি অর্থ বছরের প্রথম প্রান্তিকে রাজস্ব আহরণ লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২৪৩ কোটি টাকা বেশি হয়েছে। আর আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় এ খাতে রাজস্ব আহরণ বেড়েছে ২ হাজার ৩৮৬ কোটি টাকা বা ২৪ দশমিক ১৮ শতাংশ। ২০১৫-১৬ অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে শুল্ক বাবদ ১০ হাজার ৬৩৪ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে এনবিআর আহরণ করেছিল ৯ হাজার ৮৬৮ কোটি টাকা।

এনবিআর চেয়ারম্যান এ প্রসঙ্গে বলেন, রাজস্ব আহরণকারী কর্মকর্তাদের অতিরিক্ত পরিশ্রমে অর্থবছরের প্রথম মাস থেকেই লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি রাজস্ব আহরণ সম্ভব হয়েছে। রাজস্ব আদায়-সংক্রান্ত কার্যক্রম আমি সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করেছি। রাজস্বভাণ্ডারকে শক্তিশালী ও সুসংহত করার লক্ষ্যে সরকারের রাজনৈতিক নির্দেশনাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে করদাতাদের সঙ্গে আলোচনা ও অংশীদারির ভিত্তিতে সহযোগিতা নেয়া হয়েছে। সারা দেশে রাজস্ববান্ধব সংস্কৃতি তৈরি হয়েছে।

রাজস্ব আহরণের সবচেয়ে বড় খাত পরোক্ষ কর বা মূসকের ক্ষেত্রে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কিছুটা পিছিয়ে আছে এনবিআর। ২০১৬-১৭ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে এ খাতে ১৪ হাজার ৯০০ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে এনবিআর আহরণ করেছে ১৪ হাজার ৮৮৪ কোটি টাকা। অর্থাত্ লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে এ খাতে মাত্র ১৬ কোটি টাকা পিছিয়ে আছে সংস্থাটি। যদিও আগের বছরগুলোয় এ খাতে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে হাজার কোটি টাকা পিছিয়ে থাকত এনবিআর।

উল্লেখ্য, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ২৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ধরে ১ লাখ ৭৬ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। তবে অর্থবছরের শুরুতে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থ হয় এনবিআর। পরবর্তীতে সংশোধিত ১ লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ১ লাখ ৫৫ হাজার কোটি টাকা আহরণে সক্ষম হয় সংস্থাটি। চলতি (২০১৬-১৭) অর্থবছর ৩২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ধরে রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ২ লাখ ৩ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে শুল্ক থেকে ৫৫ হাজার ৬৭০ কোটি, মূসক থেকে ৭৪ হাজার ১১৪ কোটি ও আয়কর থেকে ৭৩ হাজার ৩৭৮ কোটি টাকা আহরণের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।

শেয়ারবাজারনিউজ/মু

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published.

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.