কঠোর শর্তের বেড়াজালে প্রণোদনা প্যাকেজ: সুফল আসেনি ৯০০ কোটি টাকায়
শেয়ারবাজার রিপোর্ট: ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের প্রণোদনা বাবদ ৯ শতাংশ সুদে ৯০০ কোটি টাকা দিয়েছিল সরকার। আর এই টাকা বিতরনে কঠিন শর্ত আরোপের কারণে এ প্যাকেজ বাজারের স্বার্থে সঠিক ভাবে কাজে লাগেনি। বরং তা বিনিয়োগকারীদের জটিলতায় ফেলেছে বলে মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।
বিষয়টি নিয়ে কতিপয় বাজার সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এই প্রণোদনা প্যাকেজের যুগোপযোগী সিদ্ধান্তের কারনে তা বিনিয়োগকারী তথা পুঁজিবাজারের জন্য তেমন কোনো সুফল বয়ে আনতে পারেনি। মন্দা বাজার পরিস্থিতিতে মাত্র ৩ মাসের মাথায় সুদসহ কিস্তি পরিশোধ করার শর্তে এ টাকা নেয়ার পর বিনিয়োগকারীরা তাদের নেগেটিভ ইক্যুইটি থেকে আর বের হতে পারেনি। এর সাথে যুক্ত হয়েছে প্রণোদনার সুদ। যা এখন হয়ে দাঁড়িয়েছে বিনিয়োগকারীদের গলার কাঁটা।
বিষয়টি নিয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন বাজার সংশ্লিষ্ট বলেন, প্রণোদনা প্যাকেজের টাকা নেয়ার পর মাত্র তিন মাসের মধ্যে এর কিস্তি দেয়া শুরু করার সিদ্ধান্ত একটা অবাস্তব চিন্তা ছাড়া আর কিছুই না। কেননা শেয়ারবাজারের ধর্ম অনুযায়ী বাজার পরিস্থিতি কখন কেমন যাবে তা কেউ বলতে পারে না। তিন মাসে বাজারের একটা প্রান্তিক প্রতিবেদন আসা ছাড়া আর কিছুই হয় না। যে সময়ে কেউ বিনিয়োগ করে লাভবান হবে তা আমরা আশা করতে পারি না।
কমপক্ষে রিফান্ডের টাকা এক বছর পর নেওয়া শুরু করলে বাজার এবং বিনিয়োগকারীদের উপকারে আসত এই প্রণোদনা প্যাকেজ। আরেকটা বিষয় হল: প্রণোদনার টাকা দেয়ার শেষ সময় চলতি বছরের ডিসেম্বর মাসে। আর বাজার পরিস্থিতি ভাল হতে শুরু করেছে এই ডিসেম্বরেই। এখন তারা বাজারের এই সুবিধা ভোগতো দূরে থাকা সুদ সমেত তাদের টাকা ফেরত দিতে হচ্ছে। তার সাথে নেগেটিভ ইক্যুইটির বোঝাতো আগে থেকেই তাদের ঘাড়ে ঝুলে আছে।
জানা গেছে, বেশ কয়েকটি মার্চেন্ট ব্যাংক এবং স্টক ব্রোকার বিষয়টি আগে থেকেই ধারণা করতে পেরেছেন। যার কারণে তারা এই টাকা নেয়ার ব্যাপারে তেমন আগ্রহ দেখাননি। এরই ফলশ্রুতিতে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পুরো টাকা বিতরন করা সম্ভব হয়নি। সর্বশেষ তথ্যমতে বিতরন বাকি রয়েছে আরও ২৫৭ কোটি টাকা। যা বিতরনের মেয়াদ আবারও বাড়ানো হয়েছে। কমানো হয়েছে সুদের হারও।
আর মার্চেন্ট ব্যাংকাররা এ ব্যাপারে বলছেন বাজার পরিস্থিতি ভাল না হলে বিনিয়োগকারীরা কিভাবে লাভ করবে, আর কিভাবে লোন পরিশোধ করবে? আমরা যা মার্জিন লোন দিয়েছি তা ওই সময় পর্যন্ত বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে তুলতে পারিনি।
উল্লেখ্য, চলতি বছরেই এই প্রণোদনার অর্থ বিতরণের শেষ সময় থাকলেও এখনো বাকি রয়েছে ২৫৭ কোটি টাকা। আর এই অর্থ বিতরণের জন্য আগামী বছরের ৩১ মার্চ পর্যন্ত সময় বাড়িয়েছে ইনভেষ্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি)। তবে যেসব বিনিয়োগকারী ইতিমধ্যে প্রণোদনার অর্থ পেয়েছেন তারা আর আবেদন করার সুযোগ পাচ্ছেন না। আইসিবি সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সূত্র মতে, যারা এখনো প্রণোদনার অর্থ পেতে আবেদন করেননি শুধুমাত্র তাদের জন্যই বাকি ২৫৭ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। বিনিয়োগকারীরা নিজ নিজ সিকিউরিটিজ হাউজ বা মার্চেন্ট ব্যাংকের মাধ্যমে আবেদন করে প্রণোদনার অর্থ ব্যবহার করতে পারবেন। এক্ষেত্রে সুদের হারও কমিয়ে দেয়া হয়েছে।
সূত্রমতে, যেসব ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারী এর মধ্যে তাদের নেগেটিভ ইক্যুইটি থেকে বের হবার জন্য এখান থেকে সহায়তা নিয়েছেন তারা আর আবেদন করতে পারবে না। আর যারা এর মধ্যে আবেদন করেননি শুধুমাত্র তারাই এর জন্য আবেদন করতে পারবেন। এর আগে চলতি বছরের ২৯ জুন অনুষ্ঠিত তদারকি কমিটির এক বৈঠকে সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নতুন এর সুদের হার ৯ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৭.৫০ শতাংশ করা হয়েছে।
সর্বশেষ তথ্য মতে, প্রণোদনা প্যাকেজের ৯০০ কোটি টাকার মধ্যে বিতরণ হয়েছে ৬৪৩ কোটি টাকা, আর বাকি রয়েছে ২৫৭ কোটি টাকা। বিতরনকৃত টাকা থেকে ফিরে পাওয়া গেছে ৫৬৬ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। এর মাধ্যমে উপকৃত হয়েছেন ২৫ হাজার ২৬২ জন ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারী। এখান থেকে সহায়তা নিয়েছে ২২টি মার্চেন্ট ব্যাংক এবং ২১টি স্টক ব্রোকার।
শেয়ারবাজারনিউজ/রু