আজ: বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪ইং, ১৪ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ১৭ই রমজান, ১৪৪৫ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

১৫ জানুয়ারী ২০১৭, রবিবার |

kidarkar

৪ কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদন নিয়ে যা বললো নিরীক্ষক

Arthik Protibadon Reportশেয়ারবাজার রিপোর্ট: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ৪ কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদনে অসঙ্গতি পাওয়া গেছে। কোম্পানিগুলোর ৩০ জুন, ২০১৬ সমাপ্ত হিসাব বছরের আর্থিক প্রতিবেদন মূল্যায়নের ভিত্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে নিরীক্ষক প্রতিষ্ঠান। কোম্পানিগুলো হলো- এমারাল্ড অয়েল, ইনটেক অনলাইন, ইনফর্মেশন সার্ভিস নেটওর্য়াক এবং সমতা লেদার কমপ্লেক্স লিমিটেড। ডিএসই সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

এমারাল্ড অয়েল: খাদ্য ও আনুষাঙ্গিক খাতের কোম্পানিটির সর্বশেষ ২০১৫-১৬ অর্থবছরের আর্থিক হিসাবে ৭২ কোটি ১৫ লাখ টাকার মজুদ পণ্য আছে বলে এমারেল্ড অয়েল কর্তৃপক্ষ তথ্য প্রকাশ করেছে। কিন্তু কোম্পানিটির নিরীক্ষক এই মজুদ পণ্যের কোন সত্যতা না পেয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করেছে নিরীক্ষিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান।

নিরীক্ষক জানায়, চালের কূড়া কেনার জন্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছে ১৬ কোটি ৫৪ লাখ টাকা অগ্রিম প্রদান আছে বলে এমারেল্ড অয়েলের আর্থিক হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে। এ বিষয়ে সত্যতা যাছাইয়ে সংশ্লিষ্টদের কাছে চিঠি পাঠানো হলেও নিরীক্ষক কোন সাড়া পায়নি। যাতে কোম্পানির অগ্রিম প্রদান তথ্য নিয়ে নিরীক্ষক সত্যতা যাছাই করতে না পেরে আপত্তিকর মন্তব্য করেছে।

এদিকে এমারেল্ড অয়েল বেসিক ব্যাংকের ঋণ পরিশোধে অক্ষম বলে নিরীক্ষক জানিয়েছে। একইসঙ্গে বেসিক ব্যাংক কর্তৃপক্ষ এমারেল্ড অয়েলের ঋণ সুবিধা বাতিল ও কোম্পানির এবং পরিচালকদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে।

উল্লেখ্য রবিবার (১৫ জানুয়ারি) লেনদেন শেষে এমারেল্ড অয়েলের শেয়ার দর দাঁড়িয়েছে ৩৯.১০ টাকায়।

ইনটেক অনলাইন:  আইটি খাতের এ কোম্পানির ড্যাফার্ড ট্যাক্স আয় দেখিয়েছে ৭ লাখ ১৮ হাজার ১৫০ টাকা  এবং ড্যাফার্ড ট্যাক্স সম্পদের পরিমাণ দেখিয়েছে ২৩ লাখ ১৩ হাজার ৯৫৩ টাকা। কোম্পানির ড্যাফার্ড ট্যাক্স সম্পদ ও আয়ের বিবরণ যা দেখানো হয়েছে তা বাংলাদেশ অ্যাকাউন্টিং স্ট্যান্ডার্ড (বাস) হিসাব অনুযায়ী হয়নি।

এদিকে, কোম্পানির হিসাবে সম্পত্তি, কারখানা এবং সরঞ্জাম ট্যাক্স অবচয় হিসেবে নির্ধারণ করেছে। যার ফলে ড্যাফার্ড ট্যাক্স সম্পদ এবং আয়ের পরিমাণ নিশ্চিত করতে পারেনি। এমনকি কোম্পানিটি তাদের মাছ চাষের প্রকল্পের টাকা ৩ কোটি ৮৩ লাখ ৪৬ হাজার টাকা এবং অফিস স্পেসের ৩ কোটি ৮৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা হিসাবে অন্তভূক্ত করেছে। যার ফলে আয়ের পরিমাণ নিশ্চিত করা যায়নি।

এছাড়া কোম্পানিটি বিএসইসির নোটিফিকেশন নং SEC / CMRRCD / 2009-193 / 119/22 না মেনে চলছে। কোম্পানিটির উদ্যোক্তা ও পরিচালকের কাছে কমপক্ষে ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণ করার কথা থাকলেও।  নভেম্ববর ২০১৬ অনুযায়ী কোম্পানির উদ্যোক্তা ও পরিচালকের কাছে মাত্র ২.৫৫ শতাংশ শেয়ার রয়েছে। যা বিএসইসির আইন অমান্য।

উল্লেখ্য, ২৯ ডিসেম্বর ২০১৬ অনুযায়ী কোম্পানিটির বর্তমান উদ্যোক্তা ও পরিচালকের কাছে ৪.৫৬ শতাংশ শেয়ার রয়েছে।

ইনফর্মেশন সার্ভিস নেটওর্য়াক: নিয়ম অনুযায়ী আইটি খাতের এ কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদনে ঋণ গ্রহীতাদের মোট ১১ কোটি ৬৪ লাখ ১০ হাজার ২৭১ টাকা প্রকাশ করা হয়নি এবং নির্দিষ্ট করে ঋণ গ্রহীতাদের নির্দিষ্ট করে প্রকাশ করা হয়নি। যা ১৯৯৪ সালের কোম্পানি আইনের ১১ ধারার উপধারা ১ এর লংঘন। অডিটর ধারণা করছে এ অনির্দিষ্ট স্থানে কিছু একটা ক্ষতিকারক বস্তু থাকতে পারে যা কোম্পানির মুনাফা বা লোকসানের কারণ হতে পারে। কিন্তু কোম্পানির বুঝতে পারেনি ক্ষতিকর লোকসানের সম্ভাবনাকে এড়িয়ে যেতে প্রভিশনিংয়ের প্রয়োজন। যা বাংলাদেশ এ্যাকাউন্টিং স্ট্যান্ডার্ড (বাস) ৩৯ এর ৬৩ প্যাড়ায় বলা আছে।

এছাড়া কোম্পানির লোকসান সহজেই হতে পারে, যদি এর আর্থিক সম্পদ বিক্রয় করা হয়। আর আর্থিক সম্পদ হচ্ছে কোম্পানির ব্যাপক আয়ের প্রয়োজনীয় উৎস। যা বাংলাদেশ এ্যাকাউন্টিং স্ট্যান্ডার্ড (বাস) ৩৯ এর ৫৬(বি)তে বলা আছে। অন্যদিকে, ইনফর্মেশন সার্ভিস নেটওয়ার্ক লিমিটেডের সাবসিডিয়ারী কোম্পানি গোল্ডেন কি আইএসন প্রাইভেট লিমিটেডের আর্থিক প্রতিবেদন মূল কোম্পানির অডিটর দ্বারাই অডিট করা হয়েছে। কিন্তু অডিটের পর পরিবর্তীত প্রতিবেদনের বদলে অপরিবর্তীত প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে।

সমতা লেদার কমপ্লেক্স: চামড়া খাতের এ কোম্পানির সম্পত্তি, প্লান্ট এবং সরঞ্জাম পুর্ণমূল্যায়িত করেছে ১৯৯৭ সালে। কোম্পানির পুনর মূল্যায়িত অর্থের উপর অবচয় না ধরে ক্রয় মূল্যের উপর ধরেছে। যার ফলে ড্যাফার্ড টেক্সের ১৫ লাখ ৬৮ হাজার ৯৫৮ টাকা কোম্পানি তাদের আর্থিক প্রতিবেদনে দেখায়নি। এর ফলে কোম্পানি ১৫ লাখ ২৭ হাজার ৯৯৪ টাকা অবচয় কম দেখিয়েছে। তাদের এক বছরের অর্থিক প্রতিবেদনে সম্পত্তি, প্লান্ট এবং সরঞ্জামের উপর ৪ লাখ ৩১ হাজার ১০৬ টাকা বাড়তি অবচয় দেখিয়েছে।  তাই কোম্পানির পুনমূল্যায়িত অর্থের উপর অবচয় ১৫ লাখ ২৭ হাজার ৯৯৪ টাকা না ধরার অভিযোগ আনা হয়েছে।

এদিকে, কোম্পানির ব্যবসার ধরন অনুযায়ি পণ্য রপ্তানিযোগ্য কিন্তু এ বছরে কোন রপ্তানি হয়নি। কোম্পানির অর্থিক প্রতিবেদনে প্রারম্ভিক ব্যয় ২২ লাখ ৫৮ হাজার ৭৩০ টাকার পরিবর্তে সম্পদের আয়ের হিসেবে ১৮ লাখ ১৮ হাজার টাকা অগ্রিম কিস্তি হিসেবে ভুল দেখানো হয়েছে। যা বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী হয়নি।

কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, কোম্পানির শেয়া্র প্রতি লোকসান হয়েছে ০.৫৪ টাকা, যা আগের বছর ছিল ০.০৬ টাকা। আর শেয়ার প্রতি নিট সম্পদ মূল্য (এনএভি) ৩০ জুন ২০১৬ পর্যন্ত হয়েছে ১৩.১৮ টাকা, যা আগের বছর ছিল ১৪.৭৬ টাকা।

শেয়ারবাজারনিউজ/এম.আর

 

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published.

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.