প্লেসমেন্ট শেয়ারে অনিয়ম! সন্দেহে বিএসইসি
শেয়ারবাজার রিপোর্ট: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হতে ইচ্ছুক কোম্পানির অর্থাৎ প্রি-আইপিও প্লেসমেন্ট শেয়ারে বিনিয়োগ করতে পারে মিউচ্যুয়াল ফান্ড ব্যবস্থাপকেরা(এসেট ম্যানেজার)। এতে অবশ্যই নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) অনুমোদন থাকতে হবে। তবে বেশ কয়েক মাস কমিশন লক্ষ্য করছে প্রি-আইপিও প্লেসমেন্ট শেয়ারে বিনিয়োগের তথ্য গোপন করছে এসেট ম্যানেজাররা। তাই এখানে কোন অনিয়ম ঘটে থাকতে পারে কমিশনের সন্দেহ।
এ বিষয়ে কমিশনের অভিযোগ তারা প্লেসমেন্ট শেয়ারে বিনিয়োগের বিস্তারিত তথ্য জমা দিচ্ছে না। তাই বিনিয়োগকারীর অর্থে গঠন করা মিউচ্যুয়াল ফান্ডের টাকা প্রি-আইপিও প্লেসমেন্টের নামে কোথায় কোথায় বিনিয়োগ হয়েছে তার বিস্তারিত তথ্য জানাতে এসেট ম্যানেজারদের নির্দেশ দিয়েছে বিএসইসি। কমিশনের একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা শেয়ারবাজারনিউজ ডটকমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
কমিশনের এক কর্মকর্তা শেয়ারবাজারনিউজ ডটকমকে জানান, আইন অনুযায়ী মিউচ্যুয়াল ফান্ডের টাকা দিয়ে প্লেসমেন্ট শেয়ারে বিনিয়োগ করতে চাইলে শুধুমাত্র পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হতে আবেদন করা কোম্পানিরই কিনতে হবে। এর জন্য ফান্ড ম্যানেজারদের অবশ্যই কমিশনের অনুমোদন লাগবে। তাছাড়া ফান্ড ম্যানেজাররা মিউচ্যুয়াল ফান্ডের টাকা কোথায় কীভাবে বিনিয়োগ করছে এবং এর থেকে রিটার্ন কী আসছে তার বিস্তারিত তথ্য প্রতি ৩ মাস পরপর প্রতিবেদন আকারে কমিশনে জমা দিতে হয়। কিন্তু প্রান্তিক প্রতিবেদনে এসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানিগুলো তাদের ফান্ডের বিনিয়োগের তথ্য বিন্তারিতভাবে দিচ্ছে না। বিশেষ করে প্রি-আইপিও প্লেসেমন্ট শেয়ারে বিনিয়োগের তথ্য। এমনকি কয়েকটি ফান্ড ম্যানেজার প্রান্তিক প্রতিবেদনে প্রি-আইপিও প্লেসেমন্ট শেয়ার কেনা কোম্পানির নামও প্রকাশ করেনি। তাই প্রি-আইপিও প্লেসমেন্টের নামে কোথায় কোথায় বিনিয়োগ হয়েছে তার বিস্তারিত তথ্য জানাতে ফান্ড ম্যানেজারদের কাছে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, প্রি-আইপিও প্লেসমেন্ট শেয়ারে বিনিয়োগের অনুমোদন পত্র জমা দেওয়ারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বিএসইসি সূত্রে জানা যায়, সিকিউরিটিজ আইন অনুযায়ী মিউচ্যুয়াল ফান্ডগুলো তাদের আকারের ৬০ শতাংশ অর্থ পুঁজিবাজারে, প্রাথমিক গণপ্রস্তাবে এবং প্রি-আইপিও প্লেসমেন্ট শেয়ারে বিনিয়োগ করতে পারে। এর মধ্যে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির শেয়ারে ৩০ শতাংশ বিনিয়োগ থাকতে হবে। অপরদিকে মেয়াদি মিউচ্যুয়াল ফান্ডগুলো তাদের আকারের ৪০ শতাংশ অর্থ পুঁজিবাজারে তালিকা বহির্ভুত খাতে বিনিয়োগ করতে পারে।
উল্লেখ্য, প্লেসেমেন্ট শেয়ার কেনায় ফান্ড ম্যানেজারদের অনিয়ম ২০১০ সালে প্রথমবারের মতো বিএসইসির নজরে আসে। সেসময় সম্পদ ব্যবস্থাপক কোম্পানি এলআর গ্লোবাল আইন ভেঙ্গে ৪৬ কোটি ৩৯ লাখ টাকা প্রি-আইপিও প্লেসমেন্টে বিনিয়োগ করেছিল। এর জন্য কোম্পানিটিকে ৫০ লাখ টাকা জরিমানার পাশাপাশি নতুন ফান্ড গঠনে এক বছরের নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল বিএসইসি। পাশাপাশি এলআর গ্লোবাল পরিচালিত ফান্ডগুলোর ট্রাস্টি বাংলাদেশ জেনারেল ইন্স্যুরেন্সকে ২৫ লাখ টাকা এবং অডিটর হুদা ভাসী চৌধুরীকে ৫ লাখ টাকা জরিমানা করেছিল কমিশন।
এছাড়া এলআর গ্লোবাল মিউচ্যুয়াল ফান্ড ওয়ানের ৬ কোটি ৮২ লাখ টাকা ইউনিকম ইন্ডাস্ট্রিজে বিনিয়োগ করেছে ফান্ডটির সম্পদ ব্যবস্থাপক এলআর গ্লোবাল; যা ওই কোম্পানির পরিশোধিত মূলধনের ২০.৬৭ শতাংশ। এতে ফান্ডটি বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) মিউচ্যুয়াল ফান্ড বিধিমালা-২০০১ লঙ্ঘন করেছে। ফান্ডটির ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৬ সমাপ্ত হিসাব বছরের আর্থিক প্রতিবেদন মূল্যায়নের ভিত্তিতে এ তথ্য জানিয়েছেন নিরীক্ষক প্রতিষ্ঠান। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে নিরীক্ষকের আপত্তি প্রকাশও হয়েছে।
শেয়ারবাজারনিউজ/