আজ: শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ইং, ৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৮ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

০৪ ফেব্রুয়ারী ২০১৭, শনিবার |

kidarkar

বাজারে মিশ্র প্রতিক্রিয়া: ৫ দিনে নেই ৩ হাজার ৮৬০ কোটি টাকা

bazarশেয়ারবাজার রিপোর্ট: বর্তমান পুঁজিবাজারকে ঘিরে মিশ্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। বাজার বিশ্লেষকরা সাম্প্রতিক দরপতনের চিত্রকে স্বাভাবিক হিসেবে দেখলেও বিনিয়োগকারীদের মনে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। বিনিয়োগকারীরা বলছেন, বাজারকে ঘিরে এক শ্রেণীর চক্র সক্রিয় থেকে কৃত্রিমভাবে দরপতন ঘটিয়ে নিজেরা শেয়ার কিনে নিচ্ছে। অন্যদিকে বিশ্লেষকরা বলছেন, গত সপ্তাহের আগের সপ্তাহে সূচকের ব্যাপক উত্থান ঘটেছে। গত সপ্তাহে তাই কারেকশন হওয়া স্বাভাবিক। বিনিয়োগকারীদের এ নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। শিগগিরই বাজার আবার ঘুরে দাঁড়াবে বলে মনে করেন তারা।

এদিকে বর্তমান বাজারের মিশ্র অবস্থায় গত সপ্তাহে অর্থাৎ ৫ কার্যদিবসের ব্যবধানে লেনদেন কমেছে ৩ হাজার ৮৬ কোটি টাকা। ডিএসই থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, সাপ্তাহিক ব্যবধানে দেশের উভয় স্টক এক্সচেঞ্জে সূচক উর্ধ্বমুখী প্রবণতা বিরাজ করেছে। সূচকের পাশাপাশি লেনদেন কিছুটা বেড়েছে। সপ্তাহজুড়ে লেনদেন হওয়া ৫ কার্যদিবসের ৩দিন কারেকশন হলেও ২ কার্যদিবসই বেড়েছে সূচক। এরই ধারাবাহিকতায় সূচক বাড়লেও গড় লেনদেন কমেছে। আর সপ্তাহজুড়ে ডিএসইর লেনদেন কমেছে ৪৪.৫৯ শতাংশ।

তবে বিশ্লেষকরা এতে আতঙ্কের কিছু দেখছেন না। কারণ সূচকে এর আগে ব্যাপক উত্থান ঘটেছে। আবার স্বাভাবিক নিয়মে সূচকের পতনও ঘটেছে। এটাই শেয়ারবাজারের নিয়ম। যারা এ বাজারে নিয়মিত লেনদেন করেন তারা বিষয়টি নিয়ে অবগত রয়েছেন।

এ বিষয়ে অধ্যাপক ড. আবু আহমেদ শেয়ারবাজারনিউজ ডটকমকে বলেন, বাজারে সূচকের যেমন অনেক উত্থান ঘটেছে তেমনি চলতি সপ্তাহে ব্যাপক পতনও ঘটেছে। এটাই বাজারের স্বাভাবিক নিয়ম। তাছাড়া ব্রোকারেজ হাউজে বসে যারা লেনদেন করছেন তারা বাজারের গতি প্রকৃতিতে অস্বাভাবিক লক্ষ্য করেন নি।

তিনি আরো বলেন, জাতীয় নীতিতেও সাম্প্রতিক বড় ধরণের কোন পরিবর্তন আসেনি। বিদেশি বিনিয়োগেও অস্বাভাবিক কিছু লক্ষ্য করা যায়নি। এছাড়া কেন্দ্রীয় ব্যাংক গভর্নর ফজলে কবীর মুদ্রানীতি ঘোষণাকালে পুঁজিবাজার নিয়ে সতর্ক থাকতে বলেছেন। তবে তিনি বাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে তেমন কোন বক্তব্য দেননি। যা বলেছেন সঠিক বলেছেন। কারণ যারা এ বাজারে অনেকদিন ধরে লেনদেন করেন তারা এ উত্থান পতন দেখে অভ্যস্ত রয়েছেন। গত কয়েক মাস যেমন পড়ছে সামনে আবার উত্থান ঘটবে। তাই এখানে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসই ব্রড ইনডেক্স বা ডিএসইএক্স সর্বোচ্চ অবস্থানে পৌঁছেছে। কমিশনের আইনি সংস্কারের পাশাপাশি বিগত কয়েক বছরের বাজারের মন্দাভাবে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা অধৈর্য হয়ে শেয়ার বিক্রি করেছেন। আর অল্প অল্প করে কিছুসংখ্যক সম্ভাবনাময় বিনিয়োগকারী তা কিনে নেন। একপর্যায়ে এসে বাজারে আতঙ্কিত বিক্রির চাপ একেবারে কমে যায়। এ সময়ের মধ্যে ব্যাংকে আমানতের সুদ হারও কমে গেছে। এতে করে কিছু কিছু অর্থ শেয়ারবাজারে আসতে থাকে। অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক পরিবেশেও একধরনের স্থিতিশীলতা আসে।

তারা বলছেন, শেয়ারের দামের বিবেচনায় যে বৃদ্ধি ঘটেছে, সেটি স্বাভাবিক ও যৌক্তিক। পাশাপাশি যা কারেকশন হয়েছে যা বিনিয়োগকারীদের স্বস্তি ফেরাতে সহায়তা করবে।  তবে বাজারে নতুন যেসব বিনিয়োগকারী আসেন, তাঁদের অনেকে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে কোম্পানির গুণমানকে বিবেচনায় নেন না। এমনকি তাঁদের কাছে সেগুলো তেমন একটা গুরুত্বও পায় না। কোম্পানির পারফরম্যান্সের চেয়ে তাঁরা বাজারে শেয়ারের দাম দেখে বিনিয়োগ করেন। এ বিষয়টি এড়িয়ে সকলকে জেনে বুঝে বিনিয়োগ করারও পরামর্শ দিয়েছেন তারা।

সাপ্তাহিক ব্যবধানে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসই ব্রড ইনডেক্স বা ডিএসইএক্স সূচক বেড়েছে ৪.৫১ শতাংশ বা ২৫৩.৫১ পয়েন্ট। সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসই৩০ সূচক বেড়েছে ৪.০০ শতাংশ বা ৮১.৫৮ পয়েন্ট। অপরদিকে, শরীয়াহ বেড়েছে ২.৯২ শতাংশ বা ৩৭.৭০ পয়েন্টে।

সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে তালিকাভুক্ত মোট ৩৩১টি কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের শেয়ার লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে দর বেড়েছে ৪৪টি কোম্পানির। আর দর কমেছে ২৮১টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৫টির। আর লেনদেন হয়নি ১টি কোম্পানির শেয়ার।

আর এসব কোম্পানির ওপর ভর করে সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে মোট ৪ হাজার ৭৯৬ কোটি ৯৩ লাখ ৯৮ হাজার ২৯৭ টাকার লেনদেন হয়েছে। যা আগের সপ্তাহে লেনদেন হয়েছিল ৮ হাজার ৬৫৭ কোটি ১৭ লাখ ৩১ হাজার ২২৫ টাকা। সে হিসেবে এ সপ্তাহে লেনদেন কমেছে ৩ হাজার ৮৬০ কোটি ২৩ লাখ ৩২ হাজার ৯৪৬ টাকা বা ৪৪.৫৯ শতাংশ।

আর দৈনিক গড় হিসাবে লেনদেন ৯৫৯ কোটি ৩৮ লাখ ৭৯ হাজার ৬৬৫ টাকা। যা আগের সপ্তাহে ছিল ১ হাজার ৭৩১ কোটি ৪৩ লাখ ৪৬ হাজার ২৪৫ টাকা।

মোট লেনদেনের ‘এ’ ক্যাটাগরির অবদান ৯৫.০৫ শতাংশ। ‘বি’ ক্যাটাগরির কোম্পানির লেনদেন হয়েছে ২.৬৯ শতাংশ। ‘এন’ ক্যাটাগরির কোম্পানির শেয়ার লেনদেন হয়েছে ১.০৯ শতাংশ। ‘জেড’ ক্যাটাগরির লেনদেন হয়েছে ১.১৭ শতাংশ।

এদিকে, দেশের অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) সার্বিক সূচক কমেছে ৪.৬০ শতাংশ। সপ্তাহজুড়ে সিএসইতে তালিকাভুক্ত মোট ২৮৮টি কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের শেয়ার লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে দর বেড়েছে ৩৯টি কোম্পানির। আর দর কমেছে ২৪৫টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৪টির। আর সপ্তাহজুড়ে লেনদেন হয়েছে ২৮৫ কোটি ৫৪ লাখ ২১ হাজার ৫০৯ টাকার শেয়ার।

শেয়ারবাজারনিউজ/মু

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published.

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.