আজ: শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ইং, ৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৯ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

১২ ফেব্রুয়ারী ২০১৭, রবিবার |

kidarkar

মানবতার ফাঁসি

bazarশেয়ারবাজার ডেস্ক: দিনটি ছিল ১৯১৬ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর। এদিন পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল এক ঘটনা ঘটে। কারণ এই দিন পৃথিবীতে প্রথম এবং শেষ কোনও হাতিকে ফাঁসির দড়িতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়।

ঘটনাটি ঘটেছিল আমেরিকার শহর টেনিসে, সেখানকার এক সার্কাস দলে কাজ করতো ম্যারি নামের এক হাতি। ম্যারি সার্কাসে দুর্দান্ত সব কসরত করে মানুষকে অভিভূত করে রাখতো। ম্যারিকেই দেখতেই সার্কাসে ভীর হতো অনেক বেশি। আর এই সার্কাস দলের নাম ছিলো চার্লি স্পার্কস। এই দলের মালিক হাতিদের পুরোনো মাহুতকে অপসারণ করে নতুন কর্মচারী রেড এল্ড্রিক্সকে নিয়োগ দেন হাতিদের দেখাশুনা করতে এবং হাতিদের নিয়ে সার্কাস দেখাতে।

রেড হাতিদের বিষয়ে অতটা অভিজ্ঞ ছিলোনা। এছাড়া নতুন কর্মচারী হওয়ায় সে হাতিদের আচরণ ইচ্ছে এসবও ঠিকঠাক বুঝতোনা। একদিন খেলা চলার সময় রেড ম্যারির উপরে বসে সার্কাস দেখাচ্ছে। সব কিছু ঠিকঠাক চলছে ম্যারি দুই পা তুলে পেছন পায়ে ভর দিয়ে দর্শকদের মনোরঞ্জন করে যাচ্ছে। কিন্তু মাহুত রেড অযথাই ম্যারির কানে লোহার শিক দিয়ে আঘাত করতে থাকে। এক সময় ম্যারির মেজাজ চড়ে যায়, সে রেডকে টেনে নিছে নামিয়ে পা দিয়ে পিষে মেরে ফেলে।

আকস্মিক এ ঘটনায় সমগ্র সার্কাস প্রাঙ্গণ এবং শহর জুড়ে ম্যারি বিরোধী আন্দোলন গড়ে উঠে। সবার এক দাবি হত্যাকারী হাতিকে সাঁজা দিতে হবে। তা না হলে আন্দোলন থামবেনা। একটি হাতি থেকে একজন মানুষের মূল্য অনেক বেশি। কেউই চার্লি স্পার্কস এর কোন শো দেখতে যাচ্ছিলোনা।

সার্কাস দলটিই এক সময় বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম। সার্কাস মালিক কোন মতেই জনগণকে বুঝাতে পারছিলেন না রেড হত্যায় ম্যারির দোষ যতটা তার চেয়ে বেশি রেড ম্যারিকে রাগিয়ে দিতে কাজ করেছিল তাই ম্যারি রেগে যায়। ম্যারি একটি অবলা প্রাণী তার দোষ নেই।

কিন্তু মানুষ তা বুঝলোনা। শেষে বাধ্য হয়েই সার্কাস মালিক সিদ্ধান্ত নিলেন ম্যারিকে হত্যা করা হবে, কিন্তু কিভাবে? বিশাল দেহী এশিয়ান এই হাতি এতোই বড় ছিলো তার মৃত্যুদন্ড কার্যকর করার পন্থা নিয়েই অনেক ভাবতে হয় সবাইকে। শেষে সিদ্ধান্ত হয় ম্যারিকে ক্রেনে ঝুলিয়ে ফাঁসি দেয়া হবে।

তাই বিশাল ক্রেন নিয়ে আসা হল। শহরের বিক্ষুব্দ সব নাগরিককে দাওয়াত দেয়া হলো। সবাই মেতে উঠলো ভয়ংকর এক হত্যা প্রত্যক্ষ করতে। সবার চোখে তখন প্রতিশোধের ক্রোধ টগবগ করছে। ম্যারিকে অবশেষে বিশাল এক চেইন দিয়ে ক্রেনের হুকে বাঁধা হলো।

ক্রেন যেই চালু করা হলো মুহূর্তে ম্যারিকে এক টানে ২০ ফুট উপরে তুলে নিলো। ম্যারি অনেক স্বাস্থ্যবান হওয়াতে ক্রেনের চেইন ছিঁড়ে ২০ ফুট উপর থেকে পড়ে যায় সে। এসময় ম্যারির মেরুদণ্ড ভেঙ্গে যায়। পা ভেঙ্গে যায়, গলা কেটে প্রচুর রক্ত ক্ষরণ হতে থাকে।

কিন্তু মানুষগুলো! ম্যারির করুণ অবস্থা দেখেও কারো মন গলেনি। আবারও ম্যারিকে ক্রেনের চেইনের সাথে বাঁধা হলো। থেমে গেলে চলবেনা, শাস্তি নিশ্চিত করতেই হবে। পরের চেষ্টায় ম্যারি ফাঁসির চেইনে ছটফট করতে করেই মারা যায়। আসলে সেদিন সার্কাস দলের ম্যারি মারা যায়নি, ওইদিন চেইনে ঝুলে ফাঁসি দেয়া হয়েছে মানুষের মানবতাকে। আমরা আশরাফুল মাখলুকাত, সৃষ্টির সেরা জীব, আর আমরা মাঝে মাঝে এমন কাজ করি যা আমাদের পৃথিবীর নিকৃষ্ট প্রাণী থেকেও নিচে নামিয়ে দেয়!

শেয়ারবাজারনিউজ/মু

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published.

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.