আজ: বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪ইং, ১১ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৪ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

১৩ ফেব্রুয়ারী ২০১৭, সোমবার |

kidarkar

প্রাণ এগ্রো ও এডিবি’র হাত ধরে কৃষকদের দিনবদল

Pranশেয়ারবাজার রিপোর্ট: প্রান্তিক কৃষকরা চাকুরির মাধ্যমে সরাসরি শিল্প উৎপাদনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে প্রয়োজনীয় অর্থ উপার্জন করতে পারছেন। কৃষি পণ্য উৎপাদনে শীর্ষ প্রতিষ্ঠান প্রাণের ‘প্রাণ এগ্রিবিজনেস প্রজেক্ট’ এর মাধ্যমে প্রান্তিক কৃষকদের এমন দিন বদল সম্ভব হয়েছে। এতে অর্থায়ন করেছে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি)।

৩১ ডিসেম্বর, ২০১৬ পর্যন্ত এডিবির অর্থায়নে বাংলাদেশের উন্নয়ন প্রসঙ্গে এক প্রতিবেদনে প্রান্তিক কৃষকদের দিনবদলের এমন চিত্র দেখানো হয়।

প্রতিবেদনে প্রাণের এ প্রজেক্টের এক চাষীর উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়েছে, পর্যাপ্ত জমি নেই সত্ত্বেও একজন কৃষক ৬ সদস্যের একটি পরিবার চালাতে পারছেন। কারণ সে কৃষক এখন অনেক উপার্জন করতে পারেন।

কীভাবে কৃষকের দিনবদল হচ্ছে? এমন প্রসঙ্গে এডিবি’র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘প্রাণ এগ্রিবিজনেস প্রজেক্টের’ মাধ্যমে কৃষকদের বিদ্যমান ফসল থেকে সরিয়ে সুদ বিহীন ঋণ দিয়ে বিশেষ ফসল ‘কাসাভা’ (বাংলায় শিমুল আলু নামে পরিচিত) ফলনে উৎসাহিত করা হয়েছে।  কাসাভা উৎপাদনে কারিগরি সহায়তা দেওয়ার পাশাপাশি উৎপাদিত ফসল সম্পূর্ণ কিনে নেওয়ার শতভাগ গ্যারান্টিও কৃষকদের দিয়েছে প্রাণ এগ্রো।

চাষিরা জানান, সেচ কিংবা অন্যান্য সমস্যার কারণে যেসব জমিতে কোনো ফসলই ভালো হয় না, সেগুলোতে কাসাভার চাষ করে লাভবান হওয়ায় এ শস্য চাষে তারা আগ্রহী হয়ে উঠছেন।

কাসাভা(শিমুল আলু): পতিত শুষ্ক জমিতে চাষের সু্বিধা, খরচ ও রোগ-বালাইয়ের ঝুঁকি কম; সঙ্গে অল্প সেচ, সার আর কীটনাশকে ভালো ফল মেলায় একসময়ের ‘ফেলনা’ শিমুল আলু। গ্লুকোজ, বার্লি, সুজি, রুটি, নুডলস, ক্র্যাকার্স, কেক, পাউরুটি, বিস্কুট, পাঁপড়, চিপসসহ শুকনো প্যাকেটজাত খাবারের অন্যতম উপাদান শর্করা বা স্টার্চ মেলে কাসাভা মাড়াই করে।

এক একরে গড়ে ৭ টন কাসাভা মেলে। এ বছর প্রতি টন ৭ হাজার টাকায় একরে ৪৯ হাজার টাকা আসছে। আর একরপ্রতি খরচ হয়েছে ৩০ হাজার টাকার মতো।

বর্তমানে টাঙ্গাইল ও ময়মনসিংহ এলাকায় প্রাণের অর্থায়নে কাসাভা চাষ হচ্ছে।

প্রাণ এগ্রো প্রতিমণ কাসাভার দাম নির্ধারণ করেছে ২৮০ টাকা।

প্রতিমাসে কেবল প্রাণের বিভিন্ন অঙ্গ প্রতিষ্ঠানেই লাগে ১২০০ টন স্টার্চ। এর অর্ধেকটা নিজস্ব কারখানা থেকে, বাকিটা বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। নিজেদের প্রয়োজন মিটিয়ে অন্যান্য কোম্পানির কাছে খোলা বাজারে বিক্রির জন্যও থাইল্যান্ড, ভারত, চীন, ভিয়েতনাম থেকে ৪২ থেকে ৪৪ টাকা কেজি দরে স্টার্চ আমদানি করে প্রাণ।

প্রাণ এগ্রো বিজনেস লিমিটেডের চিফ অপারেটিভ অফিসার মাহতাব উদ্দিন শেয়ারবাজারনিউজ ডটকমকে জানান, প্রাণের অধীনে ৭৮ হাজার চুক্তি ভিত্তিক কৃষক রযেছে। মৌসুমের শুরুতে তালিকাভুক্ত কৃষকদের বিনাসুদে একরপ্রতি ১৭ হাজার টাকা করে ঋণ দেওয়া হযেছে। পাশাপাশি চাষের প্রশিক্ষণ, কৃষি উপকরণ সহায়তা ও স্বল্পমূল্যে বীজও দেয়া হচ্ছে। কাসাভার ফল পেতে ১১ মাস অপেক্ষা করতে হয়। ভবিষ্যতে বছরে দুইবার এই ফসল উৎপাদন করা যায় কিনা সেই গবেষণা চালাচ্ছে প্রাণ। পাশাপাশি কুমিল্লা, পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন পাহাড়ী এলাকাকেও কাসাভা চাষের আওতায় আনার চেষ্টা হচ্ছে।

এডিবির প্রতিবেদনে এক কৃষক বলেন, আমি নিশ্চিন্তে কাসাভা চাষ করতে পারি। কারণ কাসাভা চাষ করে লোকসানের কোন সুযোগ নেই।

প্রাণের চিফ অপারেটিভ অফিসার মাহতাব জানান, এবছর তারা হবিগঞ্জের প্রাণ ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কে কাসাভা প্রক্রিয়াজাতকরণ প্লান্ট স্থাপন করেছেন, যেখান বছরপ্রতি ৬০ হাজার টন কাসাভা প্রক্রিয়াজাত করা যাবে। এ বছর ২০ হাজার থেকে ২২ হাজার টন কাসাভা মাড়াইয়ের পরিকল্পনা রয়েছে। এ মৌসুমে পাঁচ হাজার কৃষক তিন হাজার ৭০০ একর পাহাড়ী ও সমতল জমিতে কাসাভার চাষ করলেও আগামী মৌসুম মোট ১০ হাজার একর জমিতে এ চাষ হবে বলে জানান তিনি।

কৃষকের দিনবদল শুরু হয়েছে ২০১২ সালে। সে সময় ‘প্রাণ এগ্রিবিজনেস প্রজেক্টে’ ২৫.১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার নন-সভরেন ঋণ দিয়েছিল এডিবি।  ‘প্রাণ’ এ ঋণ স্টার্ক এবং তরল গ্লুকোজ প্লান্ট, আটার মিল এবং হিমায়িত খাদ্য প্রক্রিয়াজাত করণ প্লান্টের উন্নয়নে ব্যবহার করেছে। পজেক্টির গ্লুকোজ প্লান্টি ছিল উচ্চমাত্রার অন্তর্ভুক্তিমূলক। এর মাধ্যমেই প্রান্তিক চাষীরা উপকৃত হয়েছেন। স্টার্ক এবং গ্লুকোজ উৎপাদনের জন্য কাসাভা চালে সে সময় ৯ হাজার চাষী প্রাণের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছিল। ২০১৪-২০১৫ হিসাব বছরে ৫টি পার্বত্য জেলায় ৫১৪ হেক্টর জমিতে ৪০ হাজার টন কাসাভা চাষ হয়েছিল, উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশে কৃষিপণ্য ও কৃষি উপকরনের দাম নিয়ে কৃষকদের অভিযোগের শেষ নেই। তাদের প্রধান অভিযোগ তাদের পণ্য উৎপাদন করে যথাযথ লাভ তারা পাচ্ছেন না।

এই অভিযোগ বিশেষভাবে সত্য গরীব ও প্রান্তিক চাষীদের জন্য। তাদের মাথার উপর রয়েছে ঋণশোধের তাড়া, তদুপরী অভাবের তাড়না- তাই ফসল ওঠার সংগে সংগে তাদের ফসল বিক্রী করতে হয় ফলে তখন তারা ফসলের সর্বনিম্ন দামটিই পেয়ে থাকেন। তাদের পক্ষে ফসল ধরে রাখা সম্ভব নয়। বিশেষ করে আলু, টমেটো, বেগুন জাতীয় শাকসবজি এগুলি দ্রুত পচনশীল বলে এগুলি ধরে রাখতে হলে প্রয়োজন হয় হিমাগারের। সেখানে ভাড়া দেওয়া তাদের ক্ষমতায় কুলায় না। বিশেষতঃ বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির সাথে সাথে সম্প্রতি এই ভাড়া আস্বাভাবিক রূপে বৃদ্ধি পাওয়ায় অনেক মাঝারি ও সম্পন্ন কৃষকের পক্ষেও হিমাগারে পণ্য মজুদ করা সম্ভব হচ্ছে না। তাছাড়া চাহিদার তুলনায় হিমাগার বা সংরক্ষনের জন্য (দানা শস্য) গুদামের সংখ্যা অপ্রতুল। তদুপরী প্রায় দেখা যায় গতবারের মজুদই হয়তো গুদাম বা হিমাগারের সিংহভাগ জায়গা দখল করে রেখেছে! ফলে ইচ্ছা ও অর্থ থাকলেও অনেকের পক্ষেই ফসল বিক্রী স্থগিদ রাখা সম্ভব নয়। উপযুক্ত প্রাতিষ্ঠানিকতার (সাংগঠিত ব্যবস্থা অর্থে) অভাবের জন্যও গরীব -মধ্য -ধনী ইত্যাদি সকল স্তরের কৃষকই ফসলের উপযুক্ত দাম পান না।

শেয়ারবাজারনিউজ/আ

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published.

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.