আজ: বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪ইং, ১১ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৪ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

২৫ ফেব্রুয়ারী ২০১৭, শনিবার |

kidarkar

তিতাসের গ্যাস বিতরণ চার্জ বাড়েনি: মুনাফায় প্রভাব পড়বে না

titas-gasশেয়ারবাজার রিপোর্ট: সরকার গ্যাসের মূল্য দুই ধাপে ২২.০৭ শতাংশ বাড়িয়েছে। কিন্তু শেয়ারহোল্ডার এবং স্টক এক্সচেঞ্জগুলোর দাবী সত্ত্বেও সরকার তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিসন এন্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লি: এর ডিস্ট্রিবিউশন মার্জিন না বাড়িয়ে অপরিবর্তীত রেখেছে। অর্থাৎ তিতাসের গ্যাস বিতরণ চার্জ বাড়ানো হয়নি। অর্থাৎ তিতাসের গ্যাস বিতরণ চার্জ দশমিক ২২৬৮ টাকা অপরিবর্তিত রয়েছে।

এতে গ্রাহক পর্যায় গ্যাসের মূল্য বাড়ানোর কারণে সরকারের আয় বাড়লেও তিতাসের মুনাফায় তেমন কোন প্রভাব পড়বে না বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

গত ২৩ ফেব্রুয়ারি জ্বালানি নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি করেছে। আগামী ১ মার্চ থেকে প্রথম দফা এবং পহেলা জুন থেকে দ্বিতীয় ধাপের মূল্যবৃদ্ধি কার্যকর হবে। দুই ধাপে ৮ খাতে গড়ে ২২.০৭ শতাংশ দাম বাড়ানো হয়েছে।

মূল্যবৃদ্ধির ফলে বছরে সরকারের অতিরিক্ত আয় হবে ৪ হাজার ১৮৫ কোটি টাকা। এর ৮১ শতাংশ অর্থ যাবে সরকারি কোষাগারে। বাকি ১৯ শতাংশ অর্থ যাবে সুন্দরবন গ্যাস কোম্পানি এবং পশ্চিমাঞ্চলীয় গ্যাস কোম্পানির কোষাগারে। অন্যান্য কোম্পানির আয় দিয়ে সরকারের বিভিন্ন ধরনের উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালিত হবে।

তিতাস গ্যাসের কোম্পানি সচিব মোশতাক আহমেদ শেয়ারবাজারনিউজ ডটকমকে জানান, প্রতি ঘনমিটার সিএনজি গ্যাসের প্রথম ধাপ এবং দ্বিতীয় ধাপের পুনঃনির্ধারিত মূল্যহারের মধ্যে ফিড গ্যাসের মূল্যহার যথাক্রমে ৩০ টাকা এবং ৩২ টাকা এবং উভয় ধাপে অপারেটর মার্জিন ৮ টাকা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এছাড়া গ্যাস সরবরাহে বিদ্যমান অন্যান্য শর্তাবলি অপরিবর্তিত রয়েছে। পাশাপাশি তিতাসের গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন মার্জিন অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে।

এর আগে গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি নিয়ে অনুষ্ঠিত গণশুনানিতে, তিতাস গ্যাসের বিতরণ মার্জিন ভারিত গড়ে ১.০৩৮৮ টাকা করার প্রস্তাব করেছে। এর আগে যা ছিল দশমিক ২২৬৮ টাকা।

বিইআরসি সূত্র জানায়, শেয়ারহোল্ডারদের পক্ষে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ তিতাসের গ্যাস বিতরণ চার্জ বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে।

২০১৫ সালে তিতাসের গ্যাস বিতরণ মার্জিন ৫৫ পয়সা থেকে কমিয়ে ২৩ পয়সা নামিয়ে আনা হয়। এতে প্রতিষ্ঠানটির মুনাফা কমে যায়। ফলে কমে গেছে প্রতিষ্ঠানের ইপিএস।

ডিএসই সূত্র মতে, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে প্রতিষ্ঠানটির কর-পূর্ববর্তী মুনাফা ছিল এক হাজার ২১০ কোটি ১৩ লাখ টাকা। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে তা নেমে এসেছে ৪৩৪ কোটি ৯ লাখ টাকায়।

যদিও চলতি হিসাব বছরের প্রথম ভাগে তিতাসের শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ১ টাকা ৯১ পয়সা। যা এর আগের বছর ছিল ১ টাকা ৮৯ পয়সা। অর্থাৎ ইপিএস সামান্য বেড়েছে।

কোম্পানিটি ২০১৩ ও ২০১৪ বছরে শেয়ারহোল্ডারদের যথাক্রমে ৩৫ শতাংশ এবং ৩৮ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড দিয়েছিল। কিন্তু গ্যাস বিতরণ চার্জ কমানোর কারণে কোম্পানির মুনাফা কমার পাশাপাশি ডিভিডেন্ডও কমেছে। এর জেরে ২০১৫ ও ২০১৬ সালে কোম্পানিটি শেয়ারহোল্ডারদের যথাক্রমে ১৫ শতাংশ এবং ২০ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড দিয়েছে।

উল্লেখ্য, ২০০৮ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত তিতাসের মোট শেয়ারের ৭৫ শতাংশ রয়েছে সরকারের হাতে। প্রাতিষ্ঠানিক ও বিদেশি বিনিয়োগকারীরা যথাক্রমে ১৪ দশমিক ১১ ও ১ দশমিক ৮৩ শতাংশ শেয়ার ধারণ করছে। বাকি ৯ দশমিক ০৬ শতাংশ শেয়ার রয়েছে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে।

‘এ’ ক্যাটাগরির এ কোম্পানিটির অনুমোদিত মূলধন দুই হাজার কোটি টাকা। আর পরিশোধিত মূলধন ৯৮৯ কোটি টাকা। কোম্পানিটির বর্তমান শেয়ারদর ৫৯ টাকা ২০ পয়সা। গত ৬ মাসে কোম্পানিটির শেয়ার দর ৪৭ টাকা থেকে সর্বশেষে ৫৯ টাকা ২০ পয়সা পর্যন্ত উঠেছে।

বিউআরসি জানায়, মূল্যবৃদ্ধির ফলে আগামী ১ মার্চ থেকে আবাসিক খাতে দুই চুলার জন্য ৮০০ এবং এক চুলার জন্য ৭৫০ টাকা গুনতে হবে গ্রাহকদের। দ্বিতীয় ধাপে ১ জুন থেকে দাম আরও বাড়বে। এ সময় থেকে দুই চুলার জন্য ৯৫০ এবং এক চুলার জন্য ৯০০ টাকা দিতে হবে। আগে এক চুলার জন্য ৬০০ টাকা এবং দুই চুলার জন্য ৬৫০ টাকা দিতে হয়েছে। এ ক্ষেত্রে এক লাফে দাম বেড়ে গেছে ৩০০ টাকা। এ ছাড়া অন্যান্য খাতে যেমন বিদ্যুৎ, ক্যাপটিভ পাওয়ার, সার, শিল্প, চা-বাগান, বাণিজ্যিক, সিএনজি ও গৃহস্থালিতে মিটার ব্যবহারকারীদের জন্যও একই হারে দাম বাড়ানো হয়েছে।

বাণিজ্যিকে প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের জন্য ১১.৩৬ টাকা থেকে বেড়ে মার্চে হবে ১৪.২০ টাকা এবং জুনে ১৭.০৪ টাকা। সিএনজির দাম ৩৫ টাকা থেকে বেড়ে মার্চে প্রতি ঘনমিটারে ৩৮ টাকা ও জুনে ৪০ টাকা দাঁড়াবে।

ক্যাপটিভ পাওয়ারে ৮.৩৬ টাকা থেকে বেড়ে ১ মার্চ থেকে প্রতি ঘনমিটারের দাম ৮.৯৮ এবং ১ জুন থেকে ৯.৬২ টাকা হবে। বিদ্যুৎ খাতের গ্যাসের দাম ২.৮২ টাকা থেকে বাড়িয়ে মার্চ থেকে ২.৯৯ টাকা ও জুন থেকে ৩.১৬ টাকা করা হয়েছে।

চা-বাগানে গ্যাসের বর্তমান দাম ৬.৪৫ টাকা। ১ মার্চ থেকে এটা ৬.৯৩ টাকা আর ১ জুন থেকে ৭.৪২ টাকা করা হয়েছে। সার কারখানায় ২.৫৮ টাকা থেকে বাড়িয়ে মার্চে ২.৬৪ টাকা এবং জুনে ২.৭১ টাকা করা হয়েছে। শিল্পে ৬.৭৪ টাকা থেকে বাড়িয়ে মার্চে ৭.২৪ টাকা আর জুনে ৭.৭৬ টাকা করা হয়েছে। এ ছাড়া গৃহস্থালি কাজে মিটার ব্যবহারকারীদের ৭ টাকার পরিবর্তে গ্যাসের দাম প্রতি ঘনমিটার ১ মার্চ থেকে ৯.১০ টাকা এবং ১ জুন থেকে ১১.২০ টাকা করা হয়েছে।

 

শেয়ারবাজারনিউজ/আ

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published.

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.