আজ: শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ইং, ৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১০ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

২৫ ফেব্রুয়ারী ২০১৭, শনিবার |

kidarkar

নিজেদের ফাঁদে আটকেই গেল ভারত: তিনদিনেই ম্যাচ শেষ

austraia_indiaশেয়ারবাজার রিপোর্ট: নিজেদের পাতা ফাঁদে আটকে গেল ভারত। অস্ট্রেলিয়াকে উড়িয়ে দিতে তারা তৈরি করেছিল স্পিন ফাঁদ! কিন্তু শত্রুকে বধ করার বদলে নিজেরাই তছনছ হয়ে গেল! অজি স্পিনাররা নাস্তানাবুদ করে ছেড়েছেন ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের। দুই ইনিংস মিলিয়ে উইকেট নিয়েছেন ১৭টি। আর তাতেই শনিবার পুনে টেস্টের তৃতীয় দিনেই নাস্তানাবুদ ভারত। অজিদের বিপক্ষে চার ম্যাচ টেস্ট সিরিজের প্রথমটিতে ৩৩৩ রানে শোচনীয়ভাবে হেরে গেছেন বিরাট কোহলিরা।

প্রথম ইনিংসে ১০৫ রানে চুরমার হয়ে যাওয়ার পর দ্বিতীয় ইনিংসেও ভেঙে পড়লো ১০৭ রানে! পৌনে তিন দিনেই খেলা শেষ! হায় ভারত! এ কোন ভারত? টাইমস অব ইন্ডিয়ার পাঠকদের মতে ভারত কি তবে তার ‘পুরনো চেহারায়’ ফিরে গেল?

এদিকে, ঘরের মাটিতে বেশ কিছুদিন ধরেই ভারত দেখাচ্ছিল দাপুটে নৈপুণ্য। বিরাট কোহলির নেতৃত্বে টানা ছয়টি টেস্ট সিরিজ জয়ের নতুন রেকর্ড গড়েছিল ভারত। অপরাজিত ছিল টানা ১৯টি ম্যাচ। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে চার ম্যাচের টেস্ট সিরিজ শুরুর আগে প্রায় সবাই ভারতের গায়েই সেঁটে দিয়েছিলেন ফেভারিটের তকমা। কিন্তু উড়তে থাকা সেই ভারতকে একটানে মাটিতে নামিয়ে আনল স্টিভেন স্মিথের দল। চার ম্যাচ টেস্ট সিরিজের প্রথমটি হারার মধ্য দিয়ে ভারতের টানা ১৯ ম্যাচে অপরাজিত থাকার রেকর্ড ভাঙলো।

অস্ট্রেলিয়ার ৪৪১ রানের বিশাল টার্গেটে নেমে দলীয় ১০০ রান তুলতেই টপঅর্ডারের সাত ব্যাটসম্যান সাজঘরে ফেরেন। নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারাতে থাকা ভারতের ওপেনার মুরালি বিজয় ২ রান করেন। আরেক ওপেনার লোকেশ রাহুল করেন ১০ রান। তিন নম্বরে নামা চেতশ্বর পুজারার ব্যাট থেকে আসে ৩১ রান। চার নম্বরে ব্যাটিংয়ে নেমে ১৩ রানে বোল্ড হন স্বাগতিক দলপতি কোহলি। ১৮ রানে সাজঘরে ফেরেন আজিঙ্কা রাহানে। অশ্বিন ৮ আর রিদ্ধিমান সাহা ৫ রানে ফেরেন।

টানা ১৯ টেস্টে অপরাজিত থাকা টিম ইন্ডিয়াকে থামিয়ে দিয়েছে সফরকারী অস্ট্রেলিয়া। দুইবার ব্যাটিং ব্যর্থতার পরিচয় দেওয়া অতিথিরা ম্যাচ জিতে নিয়েছে ৩৩৩ রানে বড় ব্যবধানে। পুনের মহারাষ্ট্র ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন স্টেডিয়ামে জিততে হলে চতুর্থ ইনিংসে ৪৪১ রান করতে হতো ভারতকে। বিরাট কোহলির দল গুটিয়ে যায় ১০৭ রানের মাথায়। ভারতের মাটিতে তো বটেই, টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসেই চতুর্থ ইনিংসে এত রান করে জেতার রেকর্ড ছিল না কোনো দলের। স্পিনবান্ধব উইকেট বানিয়ে নিজেদের পাতা ফাঁদে নিজেরাই নাকাল হয়েছে ভারত। এক অজি স্পিনার স্টিভ ও’কেফিই তুলে নিয়েছেন ১২ ভারতীয় ব্যাটসম্যানকে।

প্রথম ইনিংসে ২৬০ রানে অলআউট হয় অস্ট্রেলিয়া। অজিদের স্পিন বিষে নীল হয়ে মাত্র ১০৫ রানে গুটিয়ে যায় ভারত। দ্বিতীয় ইনিংসেও ব্যাটিং ব্যর্থতায় সফরকারী অস্ট্রেলিয়া ২৮৫ রান তোলে। ১৫৫ রানে এগিয়ে থেকে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নামা অজিরা ভারতের সামনে টার্গেট দাঁড় করায় ৪৪১ রান।

প্রথম ইনিংসে ৮২ রানের ওপেনিং জুটিতে ভালো শুরু এনে দেন ডেভিড ওয়ার্নার (৩৮) ও ম্যাট রেনশ (৬৮)। ভারতের মাটিতে সবচেয়ে কম বয়সী অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটসম্যান হিসেবে পঞ্চাশোর্ধ ইনিংস খেলার রেকর্ড গড়েন ২০ বছর বয়সী রেনশ। ওয়ার্নারের বিদায়ের পরেই রিটায়ার্ড হার্ট হয়ে মাঠ ছাড়েন রেনশ। অজিরাও যেন খেই হারিয়ে ফেলে! নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারিয়ে বড় স্কোরের লক্ষ্য থেকে ছিটকে যায় তারা। স্মিথ ২৭, শন মার্শ ১৬, পিটার হ্যান্ডসকম্ব ২২, মিচেল মার্শ ৪, ম্যাথু ওয়েড ৮ রান করে আউট হন।

স্টার্ক–হ্যাজেলউডের দশম উইকেট জুটিতে প্রথম দিনে অলআউট এড়ায় অস্ট্রেলিয়া। দ্বিতীয় দিনের প্রথম ওভারেই আউট হয়ে যান দুর্দান্ত ব্যাটিং নৈপুণ্য দেখানো মিচেল স্টার্ক। দু’জনের ৫৫ রানের পার্টনারশিপের কল্যাণে প্রথম ইনিংসে অজিদের সংগ্রহ দাঁড়ায় ২৬০। রবিচন্দ্রন অশ্বিনকে স্লগ–সুইপ করতে গিয়ে ডিপ মিড–উইকেটে রবিন্দ্র জাদেজার হাতে ধরা পড়েন স্টার্ক। অজি পেসারের ৬১ রানের ইনিংসটিতে ছিল ৬টি চার ও ৩টি ছক্কার মার। অপর প্রান্তে ৩১ বলে ১ রান করে অপরাজিত থেকে যান জস হ্যাজেলউড। এর আগে ৯ উইকেটে ২৫৬ রান নিয়ে চার ম্যাচ সিরিজের প্রথম টেস্টের প্রথম দিন পার করে সফরকারীরা।

একাই চারটি উইকেট দখল করেন পেসার উমেশ যাদব। টেস্টের দুই শীর্ষ বোলার রবিচন্দ্রন অশ্বিন তিনটি ও রবিন্দ্র জাদেজা নেন দু’টি। বাকি উইকেটটি আরেক স্পিনার জয়ন্ত যাদবের।

ব্যাটিংয়ে নেমে শুরু থেকেই ধুঁকতে থাকে ভারত। ৪০.১ ওভারে তোলে মাত্র ১০৫ রান। ওপেনার মুরালি বিজয় ১০ রানে সাজঘরে ফেরেন। তবে, আরেক ওপেনার লোকেশ রাহুল করেন ৬৪ রান। তিন নম্বরে নামা চেতশ্বর পুজারা ৬ রানে বিদায় নেন। চার নম্বরে ব্যাটিংয়ে নামেন বিরাট কোহলি। প্রায় আড়াই বছর পর শূন্য রানে বিদায় নেন তিনি। ১০৪টি ইনিংস পর ভারতীয় ব্যাটিং জিনিয়াসকে ‘ডাক’ অভিজ্ঞতার সামনে দাঁড় করান অস্ট্রেলিয়ান ‘গতিদানব’ মিচেল স্টার্ক। ভুলে থাকার মতো মুহূর্তের শিকার হন কোহলি। বিশ্বের সবচেয়ে ফর্মে থাকা ব্যাটসম্যান দ্বিতীয় বলেই আউট হয়ে যান। আজিঙ্কা রাহানে করেন ১৩ রান। এছাড়া, অশ্বিনের ব্যাট থেকে আসে ১ রান। রিদ্ধিমান সাহা ০, রবীন্দ্র জাদেজা ২, জয়ন্ত যাদব ২, উমেস যাদব ৪, ইশান্ত শর্মা ১ রান করেন।

অজিদের চার বোলার বল করেন। পেসার মিচেল স্টার্ক দুটি উইকেট নেন। একটি উইকেট নেন আরেক পেসার জস হ্যাজেলউড। ছয়টি উইকেট তুলে নেন স্পিনার স্টিভ ও’কেফি। আর একটি উইকেট দখল করেন আরেক স্পিনার নাথান লিয়ন।

১৫৫ রানে এগিয়ে থেকে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নামে অজিরা। শুরুটা ভালো হয়নি তাদেরও। দলীয় ১০ রানে ফেরেন ডেভিড ওয়ার্নার। আরেক ওপেনার মিচেল মার্শের ব্যাট থেকে কোনো রান আসেনি। দলীয় ২৩ রানের মাথায় দ্বিতীয় উইকেট হারায় অজিরা। ৬১ রানের মাথায় তৃতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে বিদায় নেন চার নম্বরে নামা পিটার হ্যান্ডসকম্ব (১৯)। তিন ব্যাটসম্যানকেই ফেরান অশ্বিন। এরপর জুটি গড়েন দলপতি স্টিভেন স্মিথ এবং ম্যাট রেনশ। চতুর্থ উইকেট জুটিতে ৫২ রান যোগ করেন তারা। দলীয় ১১৩ রানের মাথায় রেনশ ব্যক্তিগত ৩১ রানে জয়ন্ত যাদবের বলে ইশান্ত শর্মার তালুবন্দি হয়ে সাজঘরে ফেরেন। তৃতীয় দিন ৫৯ রানে অপরাজিত থাকা অজি দলপতি স্মিথ ব্যাটিংয়ে নামেন। ১০৯ রানের দারুণ এক ইনিংস খেলেন তিনি। ৩১ রানে বিদায় নেন মিচেল মার্শ। ম্যাথু ওয়েডের ব্যাট থেকে আসে ২০ রান। আর ৩০ রান করেন মিচেল স্টার্ক।

ভারতের হয়ে অশ্বিন ৪টি, জাদেজা ৩টি, উমেস যাদব ২টি আর জয়ন্ত যাদব ১টি উইকেট লাভ করেন।

এদিকে, অজিদের হয়ে প্রথম ইনিংসে ঘূর্ণি জাদু দেখানো স্টিভ ও’কেফি তুলে নেন আরও ৬টি উইকেট। বাকি চারটি উইকেট তুলে নেন আরেক স্পিনার নাথান লিয়ন।

শেয়ারবাজারনিউজ/এম.আর

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published.

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.