আজ: মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪ইং, ৩রা বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৫ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

১১ এপ্রিল ২০১৫, শনিবার |

kidarkar

অর্থ আত্মসাৎ করে উধাও: বিএসইসির দায়সারা জবাব

BSECশেয়ারবাজার রিপোর্ট : পুঁজিবাজার থেকে অর্থ আত্মসাৎ করে পালিয়ে রয়েছে বেশকিছু কোম্পানির পরিচালক। এসব কোম্পানির অস্তিত্ব বলতে কিছুই নেই। গোপনে কোম্পানি বিক্রি করে লাপাত্তা রয়েছে অনেক পরিচালক। আবার ভুল ঠিকানা ও ফোন নাম্বার দিয়ে মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে চলেছে অনেকে। অন্যদিকে কারখানা ভাড়া দিয়ে নিজেদের পকেট টিকিয়ে রাখলেও পুঁজিবাজারের প্রতি ভ্রুক্ষেপ করছে না এমনও কিছু কোম্পানি রয়েছে। কিন্তু এ ব্যাপারে নিয়ন্ত্রক সংস্থার কোনো মাথাব্যাথা নেই। তারা এসব কোম্পানির ক্ষেত্রে শুধু নিয়ম রক্ষার্থেই শোকজ,জরিমানা করে যাচ্ছে। অস্তিত্বহীন কোম্পানি এমনকি মৃত ব্যক্তিকে পর্যন্ত জরিমানা করে যাচ্ছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। যা বিনিয়োগকারীসহ সংশ্লিষ্টদের কাছে হাস্যকর বিষয় হিসেবে পরিগণিত হয়েছে।
তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, ওভার দ্য কাউন্টার (ওটিসি) মার্কেটে অবস্থানরত ১৭ কোম্পানির কোনো অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। সংশ্লিষ্ট কোম্পানির যাবতীয় সম্পত্তি বিক্রি করে পরিচালকরা উধাও হয়ে গেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এসব কোম্পানির অস্তিত্ব বলতে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে কাগজ নামে কিছু শেয়ার রয়েছে। অভিযুক্ত কোম্পানিগুলো হলো: চিকটেক্স, সালেহ কার্পেট, রাসপিট ডাটা ম্যানেজমেন্ট,ফিনিক্স লেদার,ল্যাক্সো,কাশেম টেক্সটাইল,কাশেম সিল্ক, রাসপিট ইনকরপোরেশন,আমাম সি ফুডস, বেমকো, ডায়নামিক টেক্সটাইল, জার্মান বাংলা জেভি ফুডস, এম. হোসাইন গার্মেন্টস, মেটালেক্স করপোরেশন, ফার্মাকো ইন্টারন্যাশনাল, রোজ হ্যাভেন বলপেন এবং টিউলিপ ডেইরি। এসব কোম্পানির কারখানাতো দূরের কথা, অফিস বলেও কিছু নেই। আছে প্রায় ৭ হাজার বিনিয়োগকারীর হাতে থাকা কিছু কাগুজে শেয়ার।
ডিএসই সূত্রে জানা যায়, এক সময় কোম্পানিগুলো ‘জেড’ ক্যাটাগরির আওতায় ছিল। এক পর্যায়ে এসব কোম্পানি ক্রমাগত ডিভিডেন্ড না দেয়া, উৎপাদন বন্ধ থাকা, নিয়মিত আর্থিক প্রতিবেদন দাখিল না করা,বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) না করায় এগুলোকে দুই বছর আগে মূল মার্কেট থেকে ওটিসি মার্কেটে সরিয়ে নেয়া হয়। সেই থেকে বন্ধ রয়েছে এসব কোম্পানির লেনদেন। বিনিয়োগকারীদের কাছে ওই ১৭ কোম্পানির প্রায়  ২ কোটি শেয়ার রয়েছে। ফেসভ্যালু অনুসারে এসব শেয়ারের মূল্য প্রায় ২০০ কোটি টাকা।
এ ব্যাপারে ডিএসইর পরিচালক মো: শাকিল রিজভী শেয়ারবাজার নিউজ ডটকমকে জানান, পুঁজিবাজারের এসব কোম্পানি নিয়ে ইতিমধ্যে ডিএসইর এক পরিদর্শক দল এসব কোম্পানির অনুসন্ধানে গিয়ে কোম্পানিগুলোর অস্তিত্বহীনতার তথ্য উদঘাটন করেছে। ডিএসই এখন এসব কোম্পানিকে ওটিসি থেকে তালিকাচ্যুত করার কথা ভাবছে। এছাড়া এই ওটিসি মার্কেট নিয়ে যুগপোযোগী পদক্ষেপ নেয়া হবে বলে জানান তিনি।
এদিকে এসব কোম্পানিকে তালিকাচ্যুত করা বাজারের জন্য ইতিবাচক হলেও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের জন্য তা সুখকর নয়। তাদের যে পরিমাণ টাকার শেয়ার রয়েছে তা অনাদায়ী হিসেবে ভুলে যেতে হবে। কিন্তু এটা কি কোনো সমাধান কিনা এমন প্রশ্ন বাজার সংশ্লিষ্টদের। তারা বলছেন, কোম্পানিগুলোকে তালিকাচ্যুত করে কর্তৃপক্ষ তাদের দায় এড়াতে পারে না। উদ্দেশ্য প্রণোদিত হয়ে এসব দুর্বল কোম্পানি কিভাবে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হলো সেই অভিযোগের তীর ঘুরে ফিরে নিয়ন্ত্রক সংস্থার দিকে পড়ে। এসব কোম্পানি সম্পর্কে বিএসইসির যে কতটুকু নজরদারি রয়েছে তা তাদের কার্যকলাপেই বুঝা যায় বলে মনে করেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।
জানা যায়, ইতিমধ্যে চিকটেক্স,এম হোসেন গার্মেন্টস এবং মেটালেক্স করপোরেশনের ১৩ পরিচালককে মোট ১৩ লাখ টাকা জরিমানা করে বিএসইসি। এর মধ্যে এম হোসেন গার্মেন্টস এর চেয়ারম্যান এবিএম কামালউদ্দিন আহমেদও রয়েছেন। কিন্তু তিনি মারা গেছেন অনেকদিন হলো। মৃত ব্যক্তিকে জরিমানা করা, আবার এসব অস্তিত্বহীন কোম্পানিকে জরিমানা করা রীতিমতো হাস্যকর বলে মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে নিয়ন্ত্রক সংস্থার এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা শেয়ারবাজার নিউজ ডটকমকে জানান, আসলে এসব কোম্পানি সম্পর্কে আমাদের কাছে তেমন বেশি তথ্য নেই। যার নেপথ্যে জনবল সংকট রয়েছে বলে মনে করেন তিনি।
তিনি আরো বলেন , এসব কোম্পানির নামে জরিমানার পরিমাণ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। সরকারি খরচে এসব অস্তিত্বহীন কোম্পানির জরিমানা করার মানে কি এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটা শুধুমাত্র নিয়ম রক্ষার জন্য করা হয়। মূলত আইন আছে এবং অন্যান্য কোম্পানি যেন হুঁশিয়ার থাকতে পারে সেজন্য এগুলোকে শোকজ ও জরিমানা করা হয়।

শেয়ারবাজার/সা/মু

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published.

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.