পুঁজিবাজারকে ভাল থাকতে দিচ্ছে না কেন্দ্রীয় ব্যাংক
শেয়ারবাজার রিপোর্ট: পুঁজিবাজার যখনই ভালোর দিকে যায়, সূচক যখন ঊর্ধ্বমুখী হয়, তখন তাকে জোর করে টেনে নিচে নামানোর চেষ্টা করে একটি গোষ্ঠী। আর এক্ষেত্রে এগিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যাংকিং খাতের এই নিয়ন্ত্রক সংস্থা মানি মার্কেট ও ব্যাংকিং সেক্টর নিয়ে যতটা না ব্যস্ত তার চেয়ে বেশি ব্যস্ত পুঁজিবাজার নিয়ে। আর তাদের হস্তক্ষেপে আতঙ্কে থাকে ব্যাংকের সাবসিডিয়ারি কোম্পানিগুলো। ফলে পুঁজিবাজারে এক ধরনের অস্থিরতা কাজ করছে। গতকাল এনটিভির মার্কেট ওয়াচ অনুষ্ঠানে এ বিষয়ে আলোকপাত করা হয়। আহমেদ রশীদ লালীর সঞ্চালনায় আলোচনায় অংশ গ্রহণ করেন বাংলাদেশ ব্যাংক পর্ষদের পরিচালক ড. জামালউদ্দীন আহমেদ ও এএফসি ক্যাপিটেল লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহবুব হোসেন মজুমদার।
আলোচনার শুরুতে আহমেদ রশীদ লালী বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কাজ ব্যাংকিং খাতকে নজরদারি করা। পাশাপাশি মানি মার্কেট নিয়ন্ত্রণ করা। কিন্তু তারা এ বিষয়ে যতটা না নজরদারি করছে, তার চেয়ে বেশি পুঁজিবাজারের বিষয়ে মাথা ঘামাচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ১১ হাজার কোটি টাকা। এসএমই ঋণের ২২ শতাংশ খেলাপি। এসব দেখার দায়িত্ব বাংলাদেশ ব্যাংকের। কিন্তু এদিকে নজর না দিয়ে কেবল পুঁজিবাজারের দিকে তাদের মনোযোগ।
এএফসি ক্যাপিটাল লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহবুব হোসেন মজুমদার বলেন, দেশের ব্যাংকিং খাত প্রতিবছর ৬৫ হাজার কোটি টাকার মেয়াদি ঋণ দেয়। ব্যাংকগুলোর সাবসিডিয়ারি কোম্পানির মাধ্যমে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ হয় মাত্র ৪৩০ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংক ৬৫ হাজার কোটি টাকা নিয়ে যত না নজরদারি করে, তার চেয়ে অনেক বেশি চিন্তা করে ৪৩০ কোটি টাকা নিয়ে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা ব্যাংকের সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠানকে প্রতিদিন টেলিফোনে শেয়ার বিক্রির জন্য চাপ দিচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, দেশে ব্যক্তিখাতের বিনিয়োগ কমছে। রেমিট্যান্স কমছে। এ অবস্থায় পুঁজিবাজার বড় ভূমিকা রাখতে পারে। ব্যবসা-বাণিজ্য বৃদ্ধিতে পুঁজিবাজার বড় একটা মাধ্যম। আইপিও আবেদনের মাধ্যমে ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণ করা যায়। কিন্তু আইপিও আবেদন কমছে। সরকারি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার পুঁজিবাজারে নিয়ে আসার কথা থাকলেও তা হচ্ছে না। আর মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিগুলো আইনের মারপ্যাঁচে বের হয়ে যাচ্ছে। গত ৫ বছরে পুঁজিবাজারে বহুজাতিক কোনো কোম্পানি আসেনি। বহুজাতিক কোম্পানি বাজারে এলে পুঁজিবাজার আরও গতিশীল হতো বলে মন্তব্য করেন তিনি।
ড. জামালউদ্দীন আহমেদ বলেন, প্রতিষ্ঠানগুলোতে সুশাসনের অভাব রয়েছে। আর এটা হচ্ছে নজরদারির অভাব থেকে। একটি প্রতিষ্ঠান নজরদারি করবে তার পরিচালনা পর্ষদ। কিন্তু তারা ঠিকমতো করতে পারছে না। ফলে সমস্যা দেখা দিচ্ছে। তিনি বলেন, তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানে নজরদারির জন্য অনেকগুলো পক্ষ রয়েছে। সেখানে পরিচালনা পর্ষদ, আইপিও ম্যানেজার, ভ্যালুয়েশন ফার্ম, লিগ্যাল অ্যাডভাইজার নজরদারি করতে পারে। কিন্তু সুশাসনের অভাবে সেটি হচ্ছে না।
শেয়ারবাজারনিউজ/মু