আজ: শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ইং, ৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৯ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

২২ মার্চ ২০১৭, বুধবার |

kidarkar

এই পোকা থেকে সাবধান! এক রাতেই পঙ্গু হয়ে গেল শিশুটি! (ভিডিও সহ)

weird-paralysis-insectশেয়ারবাজার ডেস্ক: চিকিৎসাবিজ্ঞানের পরিসরে এমন এমন কিছুই ঘটে, যার ব্যাখ্যা খুঁজতে গিয়ে বিস্ময়ের ঘোর কাটতে চায় না খোদ চিকিৎসকদেরও। ৩ বছর বয়সী মার্কিন শিশু কলিনের কেসটা সে রকমই একটি ঘটনা। দুই বছর আগে এক রাতে যখন সে ঘুমোতে যায়, তখনও পর্যন্ত সে ছিল দিব্যি সুস্থ, স্বাভাবিক একটি বাচ্চা। তার মধ্যে প্রাণবন্ততার কোনো অভাব দেখেননি তার বাবা-মা ডিলন আর স্টেফানি। কিন্তু পরদিন সকালবেলা শিশুটিকে খাওয়াতে গিয়ে ডিলন আর স্টেফানি বুঝতে পারেন, বাচ্চাটি কোনো খাবার গিলতে পারছে না। এমনকি, পানি পর্যন্ত নামছে না তার গলা দিয়ে। বেলা একটু গড়ানোর পর ডিলন আর স্টেফানি লক্ষ করেন, কলিন তার গলার নিচের কোনো অংশই নাড়াতে পারছে না। হাত-পা সব কিছুই একেবারে পাথরের মতো স্থির হয়ে রয়েছে তার। আতঙ্কিত ডিলান-স্টেফানি বুঝে যান, তাদের ছেলে অকস্মাৎ পঙ্গু হয়ে গিয়েছে।

তড়িঘড়ি করে স্থানীয় হাসপাতাল‌ে নিয়ে যাওয়া হয় কলিনকে। তার বাবা-মা তখনও বুঝতে পারছেন না, ঠিক কী হয়েছে কলিনের। গত দু-এক দিনে কলিনের সঙ্গে অস্বাভাবিক কিছু ঘটে গিয়েছে কি না, ভাবতে গিয়ে তাদের মনে পড়ে, গতকাল বিকেলে নিজের দাদার সঙ্গে বেসবল খেলছিল কলিন। সেই সময়ই পড়ে গিয়ে মাথায় আঘাত পায় সে। সামান্য কান্নাকাটির পর অবশ্য কলিন একেবারে স্বাভাবিকই ছিল। কিন্তু ডিলন আর স্টেফানি তখন ভাবছেন, আপাতদৃষ্টিতে অতি নিরীহ মনে হয়েছিল যে আঘাত, তাই হয়তো ভেতরে ভেতরে গুরুতর আকার ধারণ করেছে। এতটাই গুরুতর যে পঙ্গুই হয়ে গিয়েছে তাদের ছেলে।

ডাক্তাররা ততক্ষণে কলিনকে নিয়ে গিয়েছেন ইমার্জেন্সি রুমে। প্রাথমিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরও তারা কোনো ধারণাই করতে পারেননি যে ঠিক কী ঘটে চলেছে কলিনের শরীরে। বিস্তারিত পরীক্ষার জন্য তারা হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করে নেন কলিনকে।

একটা গোটা দিন কেটে যাওয়ার পরও যখন কোনো উন্নতি হলো না শিশুটির, এমনকি ডাক্তাররা তার আকস্মিক পঙ্গুত্বর কারণটিও আবিষ্কার করতে পারলেন না, তখন তাকে মেমফিসের লে বোনিওর চিলড্রেনস হসপিটালে স্থানান্তরিত করার সিদ্ধান্ত নিলেন স্টেফানি আর ডিলন। প্রাথমিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরই বোনিওর ডাক্তাররা বুঝে যান, কলিনের এই আকস্মিক পঙ্গুত্বর কারণ কোনো আঘাত নয়। বরং এক বিচিত্র কারণে কাজ করছে না শিশুটির হাত-পা। তার বাবা-মাকে একেবারে বিস্মিত করে দিয়ে কলিনের কানের পিছন থেকে তারা বের করে আনেন একটি এঁটুলি পোকা। ডাক্তাররা জানান, এই সামান্য পোকাটির কামড়ই পঙ্গু করে দিয়েছিল কলিনকে।

কিন্তু কী ভাবে একটি সামান্য এঁটুলি পোকার কামড় পঙ্গু করে দিতে পারে একটি শিশুকে? এই প্রশ্নের উত্তরে ডাক্তার ট্রেভিস স্টর্ক বলেন, ‘এঁটুলি পোকার কামড় অত্যন্ত স্বাভাবিক। কিন্তু সেই কামড়ের ফলে শরীর পঙ্গু হয়ে যাওয়ার ঘটনা অত্যন্ত বিরল। আসলে এঁটুলে পোকার লালাগ্রন্থিতে নিউরোটক্সিন থাকে। এঁটুলি পরজীবী জীব। অর্থাৎ যে প্রাণীর দেহে তা বাসা বাঁধে, তার রক্তেই পুষ্ট হয় সে। এ ক্ষেত্রে সেই কীট কলিনের রক্ত শোষণ করছিল। সেই সময়ই জীবটির লালায় থাকা নিউরোটক্সিন মিশে যায় শিশুটির রক্তে। আর তার ফলেই তার শরীরে দেখা দেয় এক বিশেষ ধরনের পঙ্গুতা, যাকে ডাক্তারি পরিভাষায় বলা হয় অ্যাসেন্ডিং প্যারালাইসিস। ‘

পোকাটিকে কলিনের শরীর থেকে তুলে নেওয়ার একটু পর থেকে সে আস্তে আস্তে সুস্থ হতে থাকে। একদিনের মধ্যেই তার শরীরের সমস্ত অঙ্গ-প্রত্যক্ষ স্বাভাবিকভাবে কাজ করতে থাকে। একেবারে সুস্থ হয়ে যায় কলিন।

এ ঘটনার পরে বছর দুই কেটে গেছে। এখন পুরোপুরি সুস্থই আছে কলিন। সম্প্রতি তার সেই বিচিত্র পঙ্গুত্বর ঘটনাটি ভাইরাল হয়েছে সোশাল মিডিয়ায়। সেই ভিডিও হয়তো নতুন করে উসকে দিতে পারে স্টেফানি-ডিলনের সেই ভয়াবহ অভিজ্ঞতার স্মৃতি।

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published.

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.