নামেই সিএসআর: ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীরা বঞ্চিতই থাকছেন
শেয়ারবাজার রিপোর্ট: কর্পোরেট স্যোসাল রেসপনসিবিলিটি (সিএসআর) বা প্রাতিষ্ঠানিক সামাজিক দায়বদ্ধতা খাতে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর যথেষ্ট ব্যয় থাকলেও পুঁজিবাজারে ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীদের প্রতি দায়বদ্ধতা দেখাচ্ছে না কেউই। পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলো বিশেষ করে ব্যাংক ও বহুজাতিক কোম্পানিগুলো এ খাতে বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করলেও ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীদের জন্য কোনো ধরণের প্রণোদনা থাকছে না। আর নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোকেও বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষায় কোনো ধরণের উদ্যোগ নিতে দেখা যায়নি।
বিভিন্ন সময় পুঁজিবাজারের সাথে সংশ্লিষ্টরা সিএসআর খাতে ব্যয়ের একটি অংশ ২০১০ সালে ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীদের মধ্যে বণ্টনের সুপারিশ করেন। কিন্তু নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও নীতি-নির্ধারণী মহলের এ ব্যাপারে কোনো নির্দেশনা ও উদ্যোগ না থাকায় ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীরা বঞ্চিতই থেকে যাচ্ছেন।
জানা যায়, সিএসআরের বরাদ্দ ও নিয়মের ব্যাপারে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একটি নির্দেশনা থাকলেও সেখানে ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীদের বরাদ্দ দেয়ার ব্যাপারে কোনো কিছুই বলা নেই। এমনকি বরাদ্দ পাওয়ার যোগ্যদের তালিকায়ও এমন কিছু নেই। এর মধ্যে পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) উদ্যোগে বিশ্ব-ব্যাংক, এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি), বাংলাদেশ ব্যাংক, অর্থ মন্ত্রণালয় ও রাষ্ট্রায়ত্ব বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) সহযোগিতায় বিভিন্ন সময় প্রণোদনা প্যাকেজ গঠন করা হয়। ক্ষতিগ্রস্থ বিনিয়োগকারীদের ক্ষতি পোষাতে এসব প্যাকেজ যথেষ্ট না হওয়ায় এ খাতে বেসরকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর অংশগ্রহণ ক্ষতি পোষাতে সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারবে বলে মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।
নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে বিএসইসি এ ব্যাপারে সবার আগে উদ্যোগী হবার কথা থাকলেও এ পর্যন্ত তাদের পক্ষ থেকে কোনো ধরণের উদ্যোগ বা আইন তৈরীর পদক্ষেপ নেয়নি।
২০১০ সালে পুঁজিবাজারে ব্যাপক ধসের পর নিঃস্ব হয়ে পথে বসে গিয়েছেন অনেক বিনিয়োগকারীই। ঋণের দায়ে জর্জরিত ও বাধ্য হয়ে অনেকেই আত্মাহুতি দিয়েছেন ধ্বসের পরে। কিন্তু এতদিন পর এসেও ঐসব সাধারণ বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষার স্বার্থে নেয়া হয়নি কোনো কার্যকর পদক্ষেপ। পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ও অ-তালিকাভুক্ত অনেক প্রতিষ্ঠানই প্রতিবছর সিএসআর খাতে বড় অঙ্কের অর্থ ব্যায় করে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা থাকায় ব্যাংক খাতের প্রতিষ্ঠানগুলো সিএসআর খাতে ব্যয় নিয়মিতই হয়। অনেক ক্ষেত্রে সিএসআর খাতে অর্থ ব্যয়ের হিসাবের ব্যাপারে ও অর্থ ব্যয় করার ক্ষেত্রের ব্যাপারে অনিয়ম ও দূর্নীতিও দেখা যায়। প্রয়োজন নেই কিংবা পূর্বে যথেষ্ট অর্থায়ন হয়েছে এমন অনেক খাতেই অর্থ ব্যয় করে তা ফলাও করে প্রচার করা হচ্ছে।
পুঁজিবাজারে তালিকাভূক্ত অধিকাংশ কোম্পানি বিশেষ করে ব্যাংক কোম্পানিগুলোর পরিশোধিত মূলধন একসময় ৪০ থেকে ৫০ কোটি টাকা থাকলেও এখন প্রায় সব কোম্পানির মূলধন ৫০০ থেকে ৬০০ কোটি টাকা। এর অধিকাংশই বিভিন্ন সময় পুঁজিবাজার থেকে নেয়া হয়েছে। অথচ, এখন এসব কোম্পানি পুঁজিবাজারের প্রতি কোনো ধরণের দায়িত্বশীলতা দেখাচ্ছে না। আর এখানেও বাঁধ সেধেছে বাংলাদেশ ব্যাংকের আইন।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক ম.মাহফুজুর রহমান শেয়ারবাজারনিউজ ডট কমকে বলেন, ‘বিদ্যমান আইনে এ খাতে বিনিয়োগ করার কোনো সুযোগ নেই। কিন্তু যদি কোনো প্রতিষ্ঠান লিখিতভাবে আবেদন করে তবে সেক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত জানাবে’।
সিএসআরের অর্থ ব্যয়ের খাতের মধ্যে পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো আসতে পারে কি না জানতে চাওয়া হলে এমটিবি ক্যাপিটাল লিমিটেড এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা খায়রুল বাশার শেয়ারবাজারনিউজ ডট কমকে বলেন, ‘নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো এ ব্যাপারে আগ্রহী হলে হয়তো অনেক প্রতিষ্ঠানই এ খাতে ব্যয় করতে আগ্রহী হবে। পুঁজিবাজারের জন্য এমন উদ্যোগে বিনিয়োগকারীরা অবশ্যই লাভবান হবেন। কিন্তু সেক্ষেত্রে বিএসইসি, এনবিআর, বাংলাদেশ ব্যাংকের মতো সংশ্লিষ্ট নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর আপত্তি-অনাপত্তি আমলে নিয়ে সমন্বয় করতে হবে।’
শেয়ারবাজারনিউজ/ও/তু