আজ: শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪ইং, ১৩ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৫ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

২৬ এপ্রিল ২০১৭, বুধবার |

kidarkar

সর্বোচ্চ ভ্যাট প্রদানের তালিকায় ব্যাটবিসি-জিপি

শেয়ারবাজার রিপোর্ট: ২০১৫-২০১৬ অর্থবছরে মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট বাবদ ৫৬ হাজার ৮০ কোটি টাকা সংগ্রহন করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এর মধ্যে ৪৩ শতাংশই যোগান দিয়েছে দেশের শীর্ষ ১০ প্রতিষ্ঠান। আর এই তালিকায় রয়েছে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশ কোম্পানি লিমিটেড (ব্যাটবিসি) ও গ্রামীন ফোন লিমিটেড।

জানা গেছে, পণ্য ও সেবার ওপর ভোক্তার কাছ থেকে ভ্যাট আহরণ করা হলেও তা পরিশোধ করতে হয় সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকেই। বড় কোম্পানির অধিকাংশই এ রাজস্ব পরিশোধ করে এনবিআরের বৃহৎ করদাতা ইউনিটে (এলটিইউ)। সর্বশেষ অর্থবছর এলটিইউয়ে সর্বোচ্চ ভ্যাট পরিশোধকারী শীর্ষ ১০ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে প্রথম দুটিই তামাক খাতের। কোম্পানি দুটি হলো ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো (বিএটি) বাংলাদেশ কোম্পানি লিমিটেড ও ঢাকা টোব্যাকো ইন্ডাস্ট্রিজ। তালিকায় টেলিকম খাতের প্রতিষ্ঠান রয়েছে তিনটি— গ্রামীণফোন, বাংলালিংক ও রবি। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের প্রতিষ্ঠান রয়েছে চারটি— পেট্রোবাংলা, তিতাস, হবিগঞ্জ গ্যাস ফিল্ড ও বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। একটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে খাদ্য ও পানীয় খাতের— আকিজ ফুড অ্যান্ড বেভারেজ লিমিটেড।  আর এ ১০ প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে গত অর্থবছর ভ্যাট বাবদ রাজস্ব এসেছে ২২ হাজার ৯৪৯ কোটি টাকা।

তামাক কোম্পানিগুলোর ওপর উচ্চ করারোপ, বিদ্যুৎ-জ্বালানি ও টেলিযোগাযোগ খাতের ব্যবসায় বিস্তৃতির কারণে তারা রাজস্বে অনেক বেশি ভূমিকা রাখছে বলে জানান এনবিআর কর্মকর্তারা। কিছু খাতে বেশি করারোপ এবং কয়েকটি কোম্পানির ব্যবসা বড় হওয়ায় তারাই রাজস্বে সবচেয়ে বেশি অবদান রাখছে। বড় কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে রাজস্ব আহরণ নিশ্চিত করতে এলটিইউ জোরালো ভূমিকা রাখছে। ফলে এসব কোম্পানি থেকে সরকারের রাজস্ব আহরণ বেড়েছে। তবে নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন হলে অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকেও রাজস্ব আহরণ বাড়বে বলে মনে করে এনবিআর।

এলটিইউর হিসাব অনুযায়ী, ভ্যাট বাবদ এনবিআরকে রাজস্ব প্রদানকারী কোম্পানিগুলোর মধ্যে বরাবরের মতো গত অর্থবছরও শীর্ষ ছিল বিএটি বাংলাদেশ। সিগারেট উত্পাদনের পর স্ল্যাবভেদে টার্নওভারের সর্বোচ্চ ৬৫ শতাংশ পর্যন্ত সম্পূরক শুল্ক ও ১৫ শতাংশ হারে মূসকসহ প্রায় ৭৫ শতাংশ ভ্যাট দিতে হয় তামাক উত্পাদনকারী প্রতিষ্ঠানকে। সর্বশেষ অর্থবছরে রাজস্ব খাতে এ বাবদ ১১ হাজার ৮৪ কোটি টাকা দিয়েছে বিএটিবিসি, যা এ খাতে এনবিআরের মোট রাজস্বের ১৯ দশমিক ৭৬ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসেও ৭ হাজার ২৪৩ কোটি টাকার ভ্যাট প্রদান করেছে কোম্পানিটি।

২০১৫-১৬ অর্থবছরে ভ্যাট বাবদ রাজস্ব প্রদানে দ্বিতীয় অবস্থান রয়েছে আকিজ গ্রুপের প্রতিষ্ঠান ঢাকা টোব্যাকো। এ গ্রুপের আরেক প্রতিষ্ঠান আকিজ ফুড অ্যান্ড বেভারেজ রয়েছে শীর্ষ ১০ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে নবম স্থানে। সর্বশেষ অর্থবছরে ঢাকা টোব্যাকো ৩ হাজার ৩৭১ কোটি টাকার ভ্যাট প্রদান করেছে, যা ওই অর্থবছরে এ খাতের মোট রাজস্বের ৬ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসেও ১ হাজার ৭৬১ কোটি টাকার ভ্যাট পরিশোধ করে তৃতীয় স্থানে রয়েছে কোম্পানিটি। যদিও ভ্যাট খাতে মোট রাজস্বে তাদের অবদান কিছুটা কমে ৪ দশমিক ৪১ শতাংশে নেমে এসেছে। অন্যদিকে ২০১৫-১৬ অর্থবছর ৩১৩ কোটি টাকার ভ্যাট পরিশোধ করেছে আকিজ ফুড অ্যান্ড বেভারেজ লিমিটেড।

ভ্যাট বাবদ রাজস্ব প্রদানে তামাক কোম্পানির পরই রয়েছে পেট্রোবাংলাসহ এর নিয়ন্ত্রণাধীন কোম্পানিগুলো। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ২ হাজার ২৫৭ কোটি টাকা রাজস্ব পরিশোধ করে তৃতীয় স্থানে ছিল পেট্রোবাংলা। যদিও চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে এরই মধ্যে ২ হাজার ৪৪০ কোটি টাকার ভ্যাট পরিশোধ করে দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছে প্রতিষ্ঠানটি।

পেট্রোবাংলার পরিচালক (অর্থ) মো. তৌহিদ হাসনাত খান বলেন, দেশের অন্য বড় কোম্পানির তুলনায় গ্যাস কোম্পানিগুলোর টার্নওভার বেশি না হলেও মূলত সম্পূরক শুল্কের কারণে এ খাতে পেট্রোবাংলা ও এর কোম্পানিগুলোকে অনেক বেশি রাজস্ব প্রদান করতে হয়। আন্তর্জাতিক তেল কোম্পানি (আইওসি) থেকে নেয়া পণ্যের বিপরীতেই এ ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক প্রদান করতে হয়।

২০১৫-১৬ অর্থবছরে ১ হাজার ৬৮২ কোটি টাকার রাজস্ব পরিশোধ করে পঞ্চম স্থানে রয়েছে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড। আর ৬০৮ কোটি টাকার রাজস্ব প্রদান করে অষ্টম স্থানে রয়েছে হবিগঞ্জ গ্যাস ফিল্ড লিমিটেড।

ভ্যাট বাবদ সরকারকে রাজস্ব প্রদানে শীর্ষ ১০ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে তিনটিই রয়েছে টেলিকম খাতের। এর মধ্যে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ১ হাজার ৮৬০ কোটি টাকা পরিশোধ করে গ্রামীণফোন রয়েছে তালিকায় চতুর্থ স্থানে। ষষ্ঠ স্থানে থাকা বাংলালিংক ডিজিটাল কমিউনিউকেশনস পরিশোধ করেছে ৮০৩ কোটি টাকা। এছাড়া ভ্যাট বাবদ ৬৭৯ কোটি টাকা পরিশোধ করে সপ্তম স্থানে রয়েছে রবি আজিয়াটা লিমিটেড। গ্রাহকদের রিচার্জের ওপর ১৫ শতাংশ মূসক ও ৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক বাবদ এনবিআরকে এ অর্থ পরিশোধ করে সেলফোন অপারেটরগুলো।

রবির ভাইস প্রেসিডেন্ট (করপোরেট কমিউনিকেশন ও করপোরেট রেসপনসিবিলিটি) মো. ইকরাম কবীর বলেন, মোবাইল কোম্পানিগুলো মুনাফায় না থাকলেও রাজস্ব প্রদানে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখছে। সেলফোন অপারেটরদের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের কর ব্যবস্থা কিছুটা জটিল হওয়ায় ব্যবসায় ভালো করছে না মোবাইল অপারেটগুলোর। সব অপারেটরই সরকারকে আরো বেশি কর দিতে চায়। কর প্রদানের মাধ্যমে সরকারের উন্নয়নে সহযোগিতা করতে সবাই আগ্রহী। তবে স্পেক্ট্রামের মূল্য কমানোসহ মোবাইল ব্যবহার আরো সহজলভ্য করতে হবে।

শেয়ারবাজারনিউজ/ম.সা

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published.

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.