আজ: বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ইং, ১২ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৫ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

০৯ মে ২০১৭, মঙ্গলবার |

kidarkar

মন্ত্রণালয়ভিত্তিক রূপকল্প নিয়ে আসছেন খালেদা

Khaledaশেয়ারবাজার ডেস্ক:  বহুল আলোচিত ‘ভিশন-২০৩০’-এ মন্ত্রণালয়ভিত্তিক রূপকল্প দেবেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। গতকাল সোমবার রাতে গুলশান কার্যালয়ে চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সভাপতিত্বে দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে ‘ভিশন-২০৩০’ অনুমোদন করা হয়। আগামীকাল বুধবার বিকেলে রাজধানীর হোটেল ওয়েস্টিনে সংবাদ সম্মেলনের ভিশন তুলে ধরবেন তিনি। দেশকে এগিয়ে নেওয়ার লক্ষ্যে ‘ভিশন ২০৩০’ শিরোনামের এ পরিকল্পনায় বলা হয়েছে, সৃজনশীল উদ্যোগের মাধ্যমে ২০৩০ সালের মধ্যে দেশকে উচ্চমধ্যম আয়ের দেশ করা হবে। প্রধানমন্ত্রীর নির্বাহী ক্ষমতায় ভারসাম্য আনা হবে। জাতীয় সংসদ হবে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট।

রাত সাড়ে ৯টায় শুরু হয়ে ১২টা পর্যন্ত বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান, তরিকুল ইসলাম, মির্জা আব্বাস, ড. আবদুল মঈন খান, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান ও আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া বিশেষ আমন্ত্রণে অর্থনীতিবিদ ড. মাহবুব উল্লাহ বৈঠকে অংশ নেন।

সূত্র জানায়, বৈঠকে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্থায়ী কমিটির সদস্যদের সামনে ‘ভিশন-২০৩০’ পড়ে শোনান। এরপর ভিশনের ওপর আলোচনা করেন নেতারা। বৈঠকে ভিশন উপস্থাপনের জন্য সংবাদ সম্মেলনের সার্বিক প্রস্তুতি সর্বশেষ পর্যালোচনা করেন নীতিনির্ধারক নেতারা। বিশেষ করে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, কূটনীতিক, বুদ্ধিজীবী, সম্পাদকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার ব্যক্তিদের আমন্ত্রণ জানানোর বিষয়ে মতবিনিময় করেন। এ ছাড়া বৈঠকে দেশের সর্বশেষ রাজনৈতিক পরিস্থিতি, এরশাদের নতুন জোট গঠন, দেশজুড়ে দলের সাংগঠনিক টিমের সফর ও সংঘর্ষ, মে দিবসে সোহরাওয়ার্দীতে সমাবেশের অনুমতি না দেওয়াসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করেন।

দলের সাংগঠনিক বিষয়ে কয়েকটি সিদ্ধান্তও নেন তারা।

সূত্র জানায়, দলের থিঙ্কট্যাঙ্ক ও শীর্ষ নেতারা দফায় দফায় বৈঠক করে রূপরেখা তৈরি করেন। এর আগে খালেদা জিয়া বিএনপির ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলে ভিশন-২০৩০ সারমর্ম উপস্থাপন করলেও বিস্তারিত বই আকারে কাল দেশবাসীর উদ্দেশে তা তুলে ধরা হবে। প্রতিটি মন্ত্রণালয় তথা বিষয়ভিত্তিক পৃথক পৃথক পরিকল্পনা তুলে ধরবেন বিএনপি নেত্রী। দল ক্ষমতায় গেলে কী করবে- তা দেশি-বিদেশিদের জানাতে দলের সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ এবং সাবেক আমলাদের পরামর্শে রূপকল্পটি তৈরি করা হয়।

‘ভিশন-২০৩০’-এ যা থাকছে: বর্তমান যুগের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে তথ্য ও প্রযুক্তিকে প্রাধান্য দিয়েই বিএনপি ‘ভিশন-২০৩০’ প্রণয়ন করছে। প্রধানমন্ত্রীর একক নির্বাহী ক্ষমতা সংসদীয় সরকারের আবরণে একটি স্বৈরাচারী একনায়কতান্ত্রিক শাসনের জন্ম দিয়েছে। এই অবস্থার অবসানকল্পে প্রজাতন্ত্রের নির্বাহী ক্ষমতার ক্ষেত্রে ‘ভারসাম্য’ আনার ঘোষণা থাকবে রূপরেখায়। রাষ্ট্রের এককেন্দ্রিক চরিত্র অক্ষুণ্ন রেখে বিদ্যমান সংসদীয় ব্যবস্থা সংস্কারের অংশ হিসেবে বিভিন্ন সম্প্রদায়, প্রান্তিক গোষ্ঠী ও পেশার জ্ঞানীগুণী ও মেধাবী ব্যক্তিদের সমন্বয়ে জাতীয় সংসদের উচ্চকক্ষ প্রতিষ্ঠা করা হবে। জাতীয় সংসদকে দ্বি-কক্ষবিশিষ্ট করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে বিএনপি।

আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর বাংলাদেশ গড়তে জনআকাঙ্ক্ষাকে মর্যাদা দিয়ে, তাদের সম্পৃক্ত করেই রাষ্ট্র পরিচালনা করার কথা থাকবে। সুধী সমাজ, গণমাধ্যম, জনমত জরিপ, জনগণের দৈনন্দিন চাওয়া-পাওয়া, বিশেষজ্ঞদের মতামত ও সব ধরনের অভিজ্ঞানের নির্যাস গ্রহণ করে দেশ পরিচালনা করাই বিএনপির লক্ষ্য।

বিএনপি রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় এলে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান শক্তিশালী করে গণতন্ত্রের প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তি সুদৃঢ় করার উদ্দেশ্যে সাংবিধানিক পদের নিয়োগ পদ্ধতি সংস্কার করবে। সততা, মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদের নিয়োগ করে এসব প্রতিষ্ঠানের কার্যকারিতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা নিশ্চিত করা হবে। এসব নিয়োগ প্রক্রিয়ায় ‘গণশুনানি’র ব্যবস্থা থাকবে।

যে কোনো মূল্যে জঙ্গি নির্মূলের অঙ্গীকার থাকবে বিএনপির পরিকল্পনায়। সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ তৎপরতার বিরুদ্ধে সব সময় সক্রিয় থাকবে বিএনপি। সংবিধানে জিয়াউর রহমান প্রবর্তিত গণভোটের ব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তন করে জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার অঙ্গীকার থাকবে। দলটি মনে করে, ‘রেফারেন্ডাম’ বা ‘গণভোট’ হচ্ছে জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে জনগণের সম্মতি গ্রহণের পন্থা।

এ ছাড়া বিএনপি ক্ষমতায় গেলে সর্বস্তরে ক্ষমতার ব্যাপক বিকেন্দ্রীকরণ করা হবে। বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড এবং আটক অবস্থায় দৈহিক-মানসিক অমানবিক নির্যাতনের অবসান ঘটানো হবে। আটকাবস্থায় মৃত্যুর প্রতিটি ঘটনার জন্য তদন্তের ব্যবস্থা থাকবে। উচ্চ আদালতে বিচারক নিয়োগের যোগ্যতা ও পদ্ধতি-সংক্রান্ত আইন প্রণয়ন করবে বিএনপি। দুর্নীতির সঙ্গে কোনো আপস করা হবে না।

সংবাদ সম্মেলনের ব্যাপক প্রস্তুতি: ‘ভিশন-২০৩০’ জাতির সামনে উত্থাপন নিয়ে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে বিএনপি। ‘ভিশন-২০৩০’ ইতিমধ্যে বই আকারে ছাপাও হয়েছে। বইটি সংবাদ সম্মেলনে দেওয়া হবে। বিএনপি চেয়ারপারসনের সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত থাকতে আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, জাতীয় দৈনিকের সম্পাদক, টেলিভিশন এবং বার্তা সংস্থার সম্পাদক ও প্রধান, বিদেশি কূটনীতিকসহ বিভিন্ন পেশাজীবীকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

সূত্র জানায়, সংবাদ সম্মেলন সফলভাবে সম্পন্ন করতে দলের পক্ষ থেকে ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যক্তিদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। রাজনৈতিক দলের প্রধান ও সাধারণ সম্পাদকদের আমন্ত্রণ জানাচ্ছে দলের একটি প্রতিনিধি দল, আরেকটি দল জাতীয় দৈনিকের সম্পাদক, টেলিভিশন এবং বার্তা সংস্থার সম্পাদক ও প্রধানদের দাওয়াত কার্ড হাতে হাতে পেঁৗছে দিচ্ছে। বিদেশি কূটনীতিকসহ বিভিন্ন পেশাজীবীকে আমন্ত্রণ জানানোর জন্যও একটি দল রয়েছে। এই সংবাদ সম্মেলন নিয়ে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও ব্যস্ত সময় পার করছেন। তিনিও আমন্ত্রিত অতিথিদের মধ্যে অনেকের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন বলে জানা গেছে।

এদিকে প্রতিনিধি দলের সদস্য ঢাকা বিভাগের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক শহীদুল ইসলাম বাবুল দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদককে আমন্ত্রণ জানাতে গতকাল সোমবার বিকেলে তাদের ধানমণ্ডির কার্যালয়ে গিয়েও আমন্ত্রণপত্র পেঁৗছে দিতে পারিনি। তিনি বলেন, যোগাযোগ করেই গিয়েছি। তবে কার্যালয়ের গেটে যাওয়ার পর যোগাযোগ করে কাউকে পাওয়া যায়নি। এমনকি গেটে যারা ছিলেন তারাও আমন্ত্রণপত্রটি রাখতে আগ্রহী হননি। ফলে আমন্ত্রণপত্র না দিয়েই ফিরে আসতে হয়েছে। তবে আজ মঙ্গলবার আবারও যোগাযোগ করে আমন্ত্রণপত্র পাঠানো হতে পারে বলে জানা গেছে।

শেয়ারবাজারনিউজ/মু

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published.

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.