আজ: বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪ইং, ১১ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৩ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

০৬ জুন ২০১৭, মঙ্গলবার |

kidarkar

মালয়েশিয়ায় গিয়ে তুলির জীবনে নেমে এলো ঝড়

tuliশেয়ারবাজার ডেস্ক: তুলি, মালয়েশিয়ায় বসবাসকারী বাংলাদেশি তরুণী। বিয়ের পর স্বামীর সঙ্গে চলে আসেন মালয়েশিয়ায়। এরপর থেকে তার ওপর অত্যাচার শুরু হয়। মেয়ের ওপর এ অত্যাচার সইতে না পেরে তার বাবা স্ট্রোক করে মারা যান। এরপর থেকেই তার জীবনে নেমে আসে বড় ঝড়। বর্তমানে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে অর্থাভাবে না পারছে চিকিৎসা নিতে, না পারছে টিকিট কেটে দেশে ফিরে যেতে।

তুলির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মালয়েশিয়ায় তাকে নিয়ে আসা হয়েছিল পড়ালেখা করানোর কথা বলে। গত ২৩ মে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ দূতাবাসে এক কর্মকর্তার কক্ষে বসে তুলির জীবনে ঘটে যাওয়া ঝড়ের এ গল্প যেন শেষ হচ্ছিল না। ঢাকার দক্ষিণ খানের (রাজলক্ষ্মী মুন্সি মার্কেট) জলিল মোল্লার ছেলে মো. মোস্তফা কামালের স্ত্রী ও মুন্সিগঞ্জের ফুলতলার আমিনুল হকের মেয়ে তুলি (২০)। সবার পছন্দে পারিবারিকভাবেই ২০১৫ সালে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয় তুলি আকতার ও মোস্তফা কামাল।

বিয়ের এক সপ্তাহ পর মালয়েশিয়ায় চলে আসে মোস্তফা কামাল। মেয়ে তুলে নেয়ার আগ পর্যন্ত তার বাবার বাড়িতে থেকে পড়ালেখার সুযোগ দেয়া হবে, বিয়ের আগে এমন কথা থাকলেও শ্বশুরবাড়ি থেকেই পড়ালেখা চালাতে হয় তুলিকে। সব খরচ তুলির বাবাই বহন করতেন। স্বামীর সঙ্গে বিদেশ আসার পর নানা অত্যাচার ও তুলির কাছে ১০ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করে তার শ্বশুরবাড়ির লোকজন। এসব যন্ত্রণা আর নিষ্ঠুরতা মেনে নিয়েই চলতে থাকে তুলির সংসার। এর মধ্যে তার স্বামী কামাল দেশে চলে যায়। তুলির বাবাও যৌতুক দেয়ার জন্য পাঁচ লাখ টাকা ম্যানেজ করেন। পরে একমাত্র মেয়ের অত্যাচারের কথা সইতে না পেরে স্ট্রোক করে হাসপাতালেই মারা যান তিনি। যৌতুকের টাকা আর দেয়া হয়নি।

তুলির জীবনের এ গল্পের বাকিটা শুনি তুলির মুখ থেকেই। ‘হাসপাতালে শয্যাশায়িত আমার বাবার হাতে হাত রেখে সে (কামাল) ওয়াদা করে যে, আপনার মেয়েকে আমি মালয়েশিয়া নিয়ে যাচ্ছি, সেখানে সে পড়ালেখা করবে, আমি তার যত্ন নেব। সবার ইচ্ছামতো আমি ওর সাথে গত ২৪ শে ফেব্রুয়ারি মালয়েশিয়ায় আসি। এই নতুন পরিবেশে সে ব্যবসায়িক কাজের কথা বলে ওই দিনই আমাকে একা ফেলে অন্য একটা শহরে চলে গিয়েছিল। কাপড় গোছাতে যেয়ে তার আলমারিতে মেয়ের দুইটা ড্রেস পাই। দুইদিন পর বাসায় ফেরে কামাল। মেয়ের ড্রেসের ব্যাপারে জানতে চাইলে আমাকে বলে, এখানে এক মালয় মেয়েকে বিয়ে করেছে সে। এমন কথা শোনার পর আমার চারদিক অন্ধকার হয়ে আসে। মাথায় যেন আমার আকাশ ভেঙে পড়ে।’

এরপর থেকেই নানাভাবে অত্যাচার শুরু হয় তুলির ওপর। কামাল তাকে গলা টিপেও ধরেছিল কয়েকবার। মালয়েশিয়ার দুটি হাসপাতাল থেকে চিকিৎসাও নিতে হয়েছে তাকে। একপর্যায়ে কামাল তুলিকে ডিভোর্স দিয়ে দেশে চলে যেতে বলছে। না গেলে হত্যার হুমকি দিয়েছে কামাল।

এসব ঘটনার পর তুলি অন্য বাংলাদেশিদের আশ্রয়ে যায়। তাদের মাধ্যমে মালয়েশিয়াস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের সবযোগিতায় আইনের আশ্রয় নেয় তুলি। ইতোমধ্যে একটি থানাতে ও আকামা ইসলামে অভিযোগ দায়ের করেছে তুলি। এর আগে, মারধরের অভিযোগে একবার আটক হয়েছিল কামাল, পরে জামিনে মুক্তি পায় সে। সর্বশেষ পাওয়া তথ্যে জানা গেছে, আকামা ইসলাম এ ব্যাপারে তদন্ত করছে।

এসব প্রসঙ্গে তুলি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমার বাবার মৃত্যুর সময় তার পাশে থাকতে পারিনি। কামালকে এমন শাস্তি দেয়া হোক যাতে আর কোনো মেয়েকে তার স্বামীর লোভের শিকার না হতে হয়, নিষ্ঠুরতার রোলে যেন আর কাউকে পিষ্ট হতে না হয়। আমার ক্ষতিপূরণসহ সে আমাকে ডিভোর্স দিয়ে দিক আমি দেশে চলে যাব।’

এসব নির্মমতার পরও তুলির জীবনে নেমে এলো আরও বড় ঝড়। ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে অর্থ অভাবে না পারছে চিকিৎসা নিতে, না পারছে টিকিট কেটে দেশে ফিরে যেতে। তার এ দূরবস্থায় কোনো হৃদয়বান ব্যক্তি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে তার পাশে দাঁড়াবে এমনটাই প্রত্যাশা তুলির।

সার্বিক বিষয়ে জানতে মোস্তাফা কামালের মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

শেয়ারবাজারনিউজ/মু

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published.

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.