আমানত তুলে নেয়ার হুমকি দিচ্ছেন গ্রাহকরা: শুল্ক কমানোর সুযোগ নেই- অর্থমন্ত্রী
শেয়ারবাজার রিপোর্ট: ব্যাংকের আবগারি শুল্ক কমানোর পক্ষে রয়েছেন খোদ ব্যাংকের এমডি-চেয়ারম্যানরা। কিন্তু এই এক্সাইজ ডিউটি বা আবগারি শুল্ক কমানোর কোনো সুযোগ নেই বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত।
মঙ্গলবার শহরে ফরেন এইড ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী বলেছেন, এটা নতুন নয়। অনেক বছর ধরেই ব্যাংকগুলো এই এক্সাইজ ডিউটি প্রদান করে আসছে। এখন শুধুমাত্র এটার রেট পরিবর্তন হয়েছে। এক্সাইজ ডিউটি ফ্রি লিমিট ২০ হাজার টাকা থেকে ১ লাখ টাকা করা হয়েছে। এক লাখ টাকার ওপরে গেলে নূন্যতম আগের ৫০০ টাকার স্থলে এক্সাইজ ডিউটি ৮০০ টাকা করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, অর্থমন্ত্রীর বাজেট ঘোষণা অনুযায়ী, কোনো হিসাবে ১ লাখ ১ টাকা থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত আমানত থাকলে কাটা হবে ৮০০ টাকা। আর ১০ লাখ ১ থেকে ১ কোটি টাকা পর্যন্ত জমা বা উত্তোলন হলে কাটা হবে আড়াই হাজার টাকা, ১ কোটি ১ থেকে ৫ কোটি টাকা হিসাবে থাকলে কাটা হবে ১২ হাজার টাকা এবং ৫ কোটি টাকার বেশি হিসাব থেকে ২৫ হাজার টাকা কেটে রাখা হবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্র বলছে, বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোতে হিসাব রয়েছে ৮ কোটি ১৪ লাখ ২৬ হাজার ৯৪৬টি। এসব হিসাবে জমা রয়েছে ৮ লাখ ৯৯ হাজার ৪১৪ কোটি টাকা।
এর মধ্যে ২৫ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা পর্যন্ত অর্থ আছে এমন হিসাবের সংখ্যা প্রায় সাড়ে ৯৬ লাখ। আর ১ লাখ ১ থেকে ১০ লাখ টাকা আছে এমন হিসাবের সংখ্যা ৭৩ লাখ ১৬ হাজার ৮৬৯ টি। ১০ লাখ ১ থেকে ১ কোটি টাকা আছে এমন হিসাবের সংখ্যা ৯ লাখ ৬২ হাজার, ১ কোটি ১ থেকে ৫ কোটি টাকা হিসাবের সংখ্যা ৫১ হাজার ৭৮১টি এবং ৫ কোটি টাকার বেশি আছে এমন হিসাব ১৪ হাজার ১৬টি।
এদিকে ব্যাংকের আমানতের ওপর আবগারি শুল্ক না বাড়ানোর পক্ষে খোদ ব্যাংকাররা। আবগারি শুল্ক বাড়ানো হলে প্রতিনিয়তই গ্রাহকেরা আমানত তুলে নেয়া হুমকি দিচ্ছেন বলে জানান তারা।
এ ব্যাপারে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সহিদ হোসেন বলেছেন, বাজেট উপস্থাপনের পর কমপক্ষে ১৫ জন গ্রাহকের ফোন পেয়েছেন ব্যাংক হিসাবের ওপর প্রস্তাবিত আবগারি শুল্ক নিয়ে। সবারই বক্তব্য এক, ঘোষিত আবগারি শুল্ক কাটা হলে তাঁরা টাকা তুলে নেবেন। সুদের হার বাড়ানোরও দাবি জানিয়েছেন সবাই। প্রস্তাবিত আবগারি শুল্ক নিয়ে আমানতকারীদের মধ্যে ভীতি ছড়িয়ে পড়েছে। জমা টাকা নিয়ে সবাই চিন্তিত। কমে যায় কি না, এই আশঙ্কাও করছেন কেউ কেউ। শাখায়ও আসছেন অনেকে।
আইএফআইসি ব্যাংকের এমডি শাহ আলম সারওয়ার বলেছেন, এ ঘোষণার পর ছোট গ্রাহকেরা বিভ্রান্ত হয়ে পড়েছেন। এটা প্রত্যাহার করে নিলেই ভালো। এর মাধ্যমে যে অর্থ আসবে, তার চেয়ে বেশি সুনাম ক্ষুণ্ন হবে।
ব্যাংক এশিয়ার এমডি আরফান আলী বলেন, ‘কোনো পণ্যকে নিরুৎসাহিত করতে আবগারি শুল্ক দেওয়া হয়। ব্যাংক হিসাবে তো এ ধরনের শুল্ক হয় না। আমরা বিষয়টা প্রত্যাহারের দাবি জানাই।’
অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি) চেয়ারম্যান ও মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনিস এ খান বলেছেন, এ কারণে আমানতকারীরা ব্যাংকে টাকা রাখতে নিরুৎসাহিত হবেন। এতে আর্থিক খাতে বিশৃঙ্খলা তৈরি হবে।
শেয়ারবাজারনিউজ/ম.সা