বড় কোম্পানিতে আগ্রহ থাকলেও লেনদেনে ভাটা
শেয়ারবাজার রিপোর্ট: দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) গত সপ্তাহের ৫ কার্যদিবসের মধ্যে ২ দিনই কমেছে সূচক। আর পতনের মাত্রাও ছিলো অত্যধিক। তাই গত সপ্তাহে (১১ জুন থেকে ১৫ জুন পর্যন্ত) ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) মূল্য সূচক ও লেনদেন উভয় কমেছে। বাজারে সূচক ও লেনদেন পাশাপাশি কমেছে বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ার দর। আলোচিত সপ্তাহটিতে লেনদেন কমেছে প্রায় ১৭ শতাংশ। আর প্রধান সূচক কমেছে ০.১৪ শতাংশ। বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ঈদ যত ঘনিয়ে আসছে, বাজারে লেনদেনে বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণও তত কমছে। একদিকে নতুন করে বাজারে বিনিয়োগ আসছে না, অন্যদিকে পুরোনোদের কেউ কেউ ঈদ সামনে রেখে টাকা তুলে নিচ্ছেন।
বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রমজান মাস শেষ হতে চলেছে। আগামী বৃহস্পতিবার ঈদের আগে পুঁজিবাজারের শেষ কার্যদিবস। সে হিসেবে আর পাঁচ কার্যদিবস পরেই ঈদের ছুটি। ঈদের পর বাজার আবার শুরু হবে নতুন উদ্যোমে। এ বছর রমজান মাস বাজারে তেমন কোনো চমক না থাকলেও হতাশ করেনি বিনিয়োগকারীদের। মাসজুড়েও সূচকে বড় কোন পতন দেখা যায়নি। আর সার্বিক লেনদেন কিছুটা কমলেও বেশিরভাগ দিনই তা সন্তোষজনক ছিল। তবে রমজানের শেষের দিকে সূচক বৃদ্ধি অনেকটা ইতিবাচক। বাজারের বর্তমান আচরণ ইঙ্গিত দিচ্ছে ঈদের পরেও এ ধারা অব্যাহত থাকবে। বিনিয়োগকারীরাও ছুটি কাটিয়ে নতুন উদ্যোমে লেনদেনে ফিরবেন। ফলে ঈদের পর বাজার চাঙ্গা থাকার সমূহ সম্ভাবনা বিদ্যমান বলেও মনে করছেন ওই বিশ্লেষকরা।
সাপ্তাহিক বাজার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, সপ্তাহশেষে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স কমেছে ৭.৪২ পয়েন্ট বা ০.১৪ শতাংশ। আগের সপ্তাহে এ সূচকটি বেড়েছিল ৩৭.০৪ পয়েন্ট বা ০.৬৮ শতাংশ। ডিএসইএক্সর পাশাপাশি কমেছে অপর দুটি মূল্য সূচকও। ডিএসই-৩০ সূচক কমেছে ৫.৭৩ পয়েন্ট বা ০.২৮ শতাংশ। আর ডিএসই শরীয়াহ সূচক কমেছে ৬.৪২ পয়েন্ট বা ০.৫১ শতাংশ।
সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে লেনদেন হওয়া ৩৩৩টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিটের মধ্যে ১৩৯টির দাম বেড়েছে। অপরদিকে দাম কমেছে ১৬৩টির। আর অপরিবর্তিত রয়েছে ৩১টির দাম। এগুলোর ওপর ভর করে সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ২ হাজার ৩১৭ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে লেনদেন হয় ২ হাজার ৭৮০ কোটি ৪ লাখ টাকা। অর্থাৎ গত সপ্তাহে মোট লেনদেন কমেছে ২৫২ কোটি ৬৪ লাখ টাকা বা ৩৫ দশমিক ২৪ শতাংশ। মোট লেনদেনের পাশাপাশি কমেছে দৈনিক গড় লেনদেনের পরিমাণ। গত সপ্তাহের প্রতি কার্যদিবসে গড় লেনদেন হয়েছে ৪৬৩ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। যা তার আগের সপ্তাহে ছিল ৫৫৬ কোটি। অর্থাৎ প্রতি কার্যদিবসে গড় লেনদেন কমেছে ৯২ কোটি ৫২ লাখ টাকা।
লেনদেন ও সূচক কমার পাশাপাশি গত সপ্তাহে বাজার মূলধনের পরিমাণও কমেছে। সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস শেষে ডিএসইর বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৭০ হাজার ৬০৩ কোটি টাকা। যা তার আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ছিল ৩ লাখ ৭১ হাজার ১৮৫ কোটি টাকা। অর্থাৎ ডিএসইতে বাজার মূলধন কমেছে ৫৮২ কোটি টাকা। আর সপ্তাহজুড়ে মোট লেনদেনের ৯১ দশমিক ৮০ শতাংশই ছিল ‘এ’ ক্যাটাগরিভুক্ত কোম্পানির শেয়ারের দখলে। এছাড়া বাকি ৩ দশমিক ৪৭ শতাংশ ‘বি’ ক্যাটাগরিভুক্ত, ২ দশমিক ৮৬ শতাংশ ‘এন’ ক্যাটাগরিভুক্ত এবং ১ দশমিক ৮৭ শতাংশ ‘জেড’ ক্যাটাগরিভুক্ত কোম্পানির শেয়ারের।
এদিকে, সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে টাকার অংকে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে প্যারামাউন্ট টেক্সটাইলের শেয়ার। কোম্পানিটির ১০৬ কোটি ৫৮ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। যা সপ্তাহজুড়ে হওয়া মোট লেনদেনের ৪ দশমিক ৬০ শতাংশ। দ্বিতীয় স্থানে থাকা বাংলাদেশ ফাইন্যান্সের অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্টের শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৬৬ কোটি ১০ লাখ টাকার, যা সপ্তাহের মোট লেনদেনের ২ দশমিক ৮৫ শতাংশ। ৫৪ কোটি ৬ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনে তৃতীয় স্থানে রয়েছে লংকাবাংলা ফাইন্যান্স। লেনদেনে এরপর রয়েছে- বেক্সিমকো ফার্মা, এমজেএল বাংলাদেশ, আর্গন ডেনিম, ব্রিটিশ আমেরিকা টোবাকো বাংলাদেশ, সেন্ট্রাল ফার্মা, স্কয়ার ফার্মা এবং ইফাদ অটোস।
আর সপ্তাহশেষে চট্টগ্রাম স্টক এক্সেচঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক কমেছে দশমিক ২০ শতাংশ। সপ্তাহজুড়ে সিএসইতে তালিকাভুক্ত মোট ২৮০টি কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের শেয়ার লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে দর বেড়েছে ১১৫টি কোম্পানির। আর দর কমেছে ১৪১টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ২৪টির। আর সপ্তাহজুড়ে লেনদেন হয়েছে ১৬৬ কোটি ৬০ লাখ টাকা। যদিও আগের সপ্তাহে সিএসইর সূচক বেড়েছিল দশমিক ৭৫ শতাংশ এবং লেনদেন হয়েছিল ৩৪৬ কোটি ৬৮ লাখ টাকা।
শেয়ারবাজারনিউজ/মু