আজ: বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪ইং, ১৪ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ১৭ই রমজান, ১৪৪৫ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

০৩ জুলাই ২০১৭, সোমবার |

kidarkar

রামমন্দির-বাবরি মসজিদ ভোট: এগিয়ে বাবরি মসজিদ

ramশেয়ারবাজার রিপোর্ট: রাম মন্দির থাকবে নাকি বাবরি মসজিদ থাকবে নাকি উভয়ই রাখা উচিত এমন অপশন দিয়ে অনলাইনে ভোট চলছে। ভারতের অযোদ্ধা নগরীতে রাম মন্দির ও বাবরি মসজিদ ইস্যুতে জাগো ইন্ডিয়ান ডটকম ওয়েবসাইটে নির্বাচন চলছে। সর্বশেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত নির্বাচনে এগিয়ে রয়েছে বাবরি মসজিদ।

জানা যায়, এখন পর্যন্ত এই নির্বাচনে মোট ৭৯ লাখ ২৩ হাজার ৯৭৬টি ভোট পড়েছে। এর মধ্যে রাম মন্দির পেয়েছে ৩৯.৩ শতাংশ বা ৩১ লাখ ১৪ হাজার ৪১৪টি ভোট। আর বাবরি মসজিদ পেয়েছে ৪০.৭০ শতাংশ বা ৩২ লাখ ২২ হাজার ৩৮৮টি ভোট। এছাড়া রাম মন্দির এবং বাবরি মসজিদ উভয়ই থাকা উচিত এমন অপশনে ভোট পড়েছে ২০ শতাংশ বা ১৫ লাখ ৮৭ হাজার ১৭৪টি ভোট।

রামমন্দির ও বাবরি মসজিদের ইতিহাস

বাবর ১৫২৬ খ্রিষ্টাব্দে উত্তর ভারতের কিছু অংশ দখল করেন। কিন্তু তাই বলে তাকে মোগল সাম্রাজ্যের স্খাপক বলা যায় না। কারণ কোনো সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করতে হলে কেবল বিস্তীর্ণ ভূ-ভাগ দখল করলে হয় না, সেখানে প্রতিষ্ঠা করতে হয় প্রশাসন। কিন্তু শাসনসংক্রান্ত সংগঠন গড়ে তোলার আগেই বাবর মারা যান। বাবরি মসজিদ বাবর নির্মাণ করেননি। বাবরি মসজিদ নির্মাণ করেন বাবরের সাথে আগত মীর বাকী নামে একজন সম্ভ্রান্ত ব্যক্তি। বাবরি মসজিদের মধ্যে প্রাপ্ত প্রস্তরফলক থেকে জানা যায়, মীর বাকী মসজিদটি স্খাপন করেন ৯৩৫ হিজরিতে, খ্রিষ্টাব্দের হিসাবে যা দাঁড়ায় ১৫২৮। বাবরি মসজিদ একটি মামুলি মসজিদ মাত্র; যা কোনো উন্নত স্খাপত্যের নিদর্শন নয়। বাবর উত্তর ভারতে আসার আগেই উত্তর ভারতে মুসলিম স্খাপত্যের বিশেষ রীতি গড়ে উঠেছিল। তা গড়ে উঠেছিল মিনার, গম্বুজ ও প্রকৃত খিলানকে নির্ভর করে। কেবল উত্তর ভারতে নয়, দক্ষিণ ভারতে বাহমনি সুলতানদের নেতৃত্বেও গড়ে ওঠে একটা বিশিষ্ট মুসলিম স্খাপত্য রীতি। বাবরি মসজিদের নাম বিশেষভাবে আলোচনায় আসতে পেরেছে। তাই এই মসজিদকে কেন্দ্র করে হিন্দু-মুসলিম সঙ্ঘাতের কারণ ঘটছে।

হিন্দুদের বিশ্বাস, ‘অযোধ্যাই ছিল রাজা রামের রাজত্বের রাজধানী। রাম কেবল রাজা ছিলেন না, তিনি ছিলেন বিষ্ণুর অবতার। রামের মৃত্যুর পর অযোধ্যায় স্খাপিত হয় রাম মন্দির। মীর বাকী এই রাম মন্দির ভেঙে সেখানে নির্মাণ করেন বাবরের নামে বাবরি মসজিদ।’ রামায়ণ ভারতের বিখ্যাত একটি কাব্যগ্রন্থ। এই কাব্যগ্রন্থে বলা হয়েছে, অযোধ্যা রামের জন্মভূমি। কিন্তু রামায়ণের বর্ণনা অনুসরণ করে এ পর্যন্ত অযোধ্যায় কোনো প্রাচীন সভ্যতার ধ্বংসাবশেষ আবিষ্কৃত হয়নি; যেমন আবিষ্কৃত হতে পেরেছে গ্রিক কবি হোমারের ইলিয়াড কাব্যগ্রন্থের বর্ণনা অনুসরণ করে ট্রয় নগরীর ধ্বংসাবশেষ। ইলিয়াডের রচনাকাল ধরা হয় খ্রিষ্টপূর্ব ৯০০ অব্দের কাছাকাছি। ইলিয়াডের ঘটনার সাথে রামায়ণের ঘটনার কিছু কিছু সাদৃশ্য পরিলক্ষিত হয়। এটা প্রাচীন গ্রিকদের প্রভাবের ফল কি না বলা যায় না। রামায়ণে পাওয়া যায় শ্রীলঙ্কার বর্ণনা। শ্রীলঙ্কার রাজা রাবণ রামের স্ত্রী সীতাকে চুরি করে নিয়ে যান। ফলে বাধে রাম-রাবণের যুদ্ধ। রামায়ণে রাবণের রাজধানী কনকলঙ্কার বিশেষ প্রশংসাপূর্ণ বর্ণনা আছে। কিন্তু শ্রীলঙ্কাতেও এখন পর্যন্ত তেমন কোনো প্রাচীন সভ্যতার নিদর্শন আবিষ্কৃত হয়নি। হোমারের বর্ণনা অনুসরণ করে অনেক প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন আবিষ্কৃত হতে পেরেছে তুরস্কে। কিন্তু রামায়ণের বর্ণনা অনুসরণ করে কোনো প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কার এখনো সম্ভব হয়নি। তাই বলা যায় না, যেখানে বাবরি মসজিদ অবস্খিত, এক সময় সেখানে ছিল রাম মন্দির। হতে পারে রামায়ণের কাহিনীর উদ্ভব ভারতে হয়নি, এই কাহিনীর কাঠামো এসেছে বাইরে থেকে। তবে বিষয়টি গবেষক মহলে হয়ে আছে বিতর্কমূলক। কিন্তু এহলাহাবাদ হাইকোর্ট রায় দেয়ার সময় বলেছেন, হিন্দুরা যেহেতু বিশ্বাস করে, রামের জন্মভুমি অযোধ্যা। তাই তাদের সেই বিশ্বাসকে মর্যাদা দিতে হবে। আর ছেড়ে দিতে হবে বাবরি মসজিদের ওয়াক্ফর তিন ভাগের দুই ভাগ জায়গা।’ বিষয়টি বিস্ময়ের জন্ম দিয়েছে অনেকের মনে। কারণ এহলাহাবাদ হাইকোর্ট রায় প্রদান করেছেন হিন্দু বিশ্বাসের ওপর নির্ভর করে, আইন ও সাক্ষ্য-প্রমাণের ওপর ভিত্তি করে নয়।

২০১০ সালের আদালতের রায়

২০১০ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর এলাহাবাদ হাইকোর্ট বাবরী মসজিদ যে স্থানে ছিল সেই ভূমি সম্পর্কিত রায় দেয়।এলাহবাদ হাইকোর্টের তিন জন বিচারপতির সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ তাদের রায়ে ২.৭৭ বা ১.১২ হেক্টর ভূমি সমান তিনভাগে ভাগকরার রায় প্রদান করেন। যার এক অংশ পাবে হিন্দু মহাসভা রাম জন্মভূমিতে রাম মন্দির নির্মাণের জন্য,দ্বিতীয় অংশ পাবে ইসলামিক সুন্নি ওয়াকফ বোর্ড এবং বাকি তৃতীয় অংশ পাবে নির্মোহী আখরা নামে একটি হিন্দু সংগঠন। এই স্থানে রামমন্দির ধ্বংস বাবরী মসজিদ নির্মিত হয়েছিল এ বিষয়ে তিন জন বিচারকের দুজন একমত হয়েছিলেন। তবে তিন জন বিচারকই এই বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছান যে,পূর্বে বাবরী মসজিদের স্থলে একটি সুপ্রাচীন হিন্দু মন্দির বিদ্যমান ছিল। আদালতের তিন জন বিচারপতিঃ বিচারপতি এস আর আলম,বিচারপতি ভানওয়ার সিং এবং বিচারপতি খেমকারণের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চের আদেশে আরকিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইণ্ডিয়া ওই স্থান খনন করে একটি সুবৃহৎ হিন্দু ধর্মীয় স্থাপত্যের সন্ধান পায়।

শেয়ারবাজারনিউজ/ম.সা

 

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published.

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.