আজ: বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ইং, ১২ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৫ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

০৮ জুলাই ২০১৭, শনিবার |

kidarkar

পানি ফুটাতেই দিনে ৫৮ কোটি টাকার গ্যাস পোড়ে!

wotherশেয়ারবাজার ডেস্ক: ঢাকা ওয়াসার পানিতে জীবাণু থাকে, তাই সরাসরি পান করা যায় না—রাজধানীবাসীর এ অভিযোগ দীর্ঘদিনের। এ কারণে নগরবাসী পানি ফুটিয়ে পান করে। আর পানি ফুটানোর কারণে প্রতিদিন গ্যাস পোড়ে ৫৮ কোটি টাকার মতো।

তবে পানিতে কিছু সমস্যার কথা স্বীকার করলেও পানি স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর নয় বলে দাবি ওয়াসার। এ নিয়ে সংবাদ সংস্থা ইউএনবির প্রতিবেদন পাঠকের জন্য তুলে ধরা হলো।

সুরাইয়া আখতার চিতশি রিমা আট সদস্যর পরিবার নিয়ে থাকেন রাজধানীর পুরান ঢাকায়। প্রতিদিন পরিবারের সবার সকালের নাশতা শেষেই তিনি গ্যাসের চুলায় পানি ফোটাতে শুরু করেন। পানি ফুটিয়েই পান করে এই পরিবার। এই পরিবারের মতো রাজধানীতে অনেকেই পানি ফুটিয়ে পান করে।

সুরাইয়া বলেন, ‘ওয়াসার পানি সরাসরি পান করার মতো নিরাপদ নয়। আমি প্রতিদিন পরিবারের খাওয়ার পানির চাহিদা মেটাতে দুই দফায় প্রায় ৩০ মিনিট করে পানি ফুটাই।’ ফুটানো পানি পান করার আগে আবার তা পানি বিশুদ্ধকরণ যন্ত্রে দেওয়ার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, এই পানি পরিশোধন প্রক্রিয়ার কারণে তাঁর পরিবারের খরচ বেড়েছে।

সুরাইয়া বলেন, ‘পানি সরবরাহের জন্য ঢাকা ওয়াসাকে টাকা দিচ্ছি। তাদের উচিত রাজধানীবাসীকে নিরাপদ পানি সরবরাহ করা। কিন্তু এটি করতে তারা সম্পূর্ণ ব্যর্থ।’ তিনি বলেন, ‘এখনো রাজধানীর অনেক মানুষ সরাসরি ওয়াসার পানি পান করছে। আর এ কারণে তারা বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।’

শুধু সুরাইয়াই নন, ঢাকাবাসী অনেকে তাদের সুপেয় পানির চাহিদা মেটানোর জন্য সরকারের সরবরাহ করা বিপুল পরিমাণ গ্যাস পোড়ায়। আর তা করতে গিয়েই বিপুল অর্থ হারাচ্ছে জনসাধারণ।

ওয়াসা কর্মকর্তাদের দাবি, এ সংস্থা যে পানি সরবরাহ করে তা পান করার জন্য নিরাপদ। কিন্তু পাইপলাইনে ফুটো হওয়ার কারণে শহরবাসীর কাছে সরবরাহের সময় পানি দূষিত হয়ে যায়।

তিতাস গ্যাসের তথ্য অনুযায়ী, রাজধানীতে প্রায় ১৭ লাখ ৬৯ হাজার বাড়িতে গ্যাসের (এক ও দুই চুলা) সংযোগ দেওয়া আছে। তিতাস গ্যাসের প্রকৌশলী মো. সাজ্জাদ হোসেইন বলেন, এক চুলায় প্রতি ঘণ্টায় ১২ কিউবিক ঘনমিটার গ্যাস পোড়ে। দুই চুলায় প্রতি ঘণ্টায় পোড়ে ২১ কিউবিক ঘনমিটার। বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন সম্প্রতি প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের দাম নির্ধারণ করেছে ৩২ টাকায়।

সমস্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, রাজধানীবাসী গড়ে প্রতিদিন যদি আধা ঘণ্টা করে পানি ফুটায়, তবে গড়ে দিনে তারা প্রায় ১ কোটি ৮ লাখ ঘনমিটার গ্যাস পোড়ায়। আর এ গ্যাসের আর্থিক মূল্য ৫৮ কোটি টাকা।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মো. মুজিবুর রহমান বলেন, ঢাকা ওয়াসার পানি সরবরাহব্যবস্থার ত্রুটির থাকায় দূষিত পানি ওয়াসা পানিতে মিশে যায়। আর এতে করেই দূষিত হয় পানি।

রাজধানীবাসীর অভিযোগ, ঢাকার ওয়াসার অবহেলার কারণেই নগরবাসী ময়লা ও দূষিত পানি পায়। আর মাঝে মাঝে বাজে গন্ধের কারণে পানি ব্যবহারের অনুপযুক্ত হয়। শান্তিনগরের বাসিন্দা মশিউর রহমান বলেন, ‘পানির জন্য যখন ট্যাপ ছাড়ি, তখন প্রায়ই পানিতে কালো কিছু একটা পাই। ট্যাপের ওই পানিতে কটু গন্ধ পাওয়া যায়। তাই ওই পানি ব্যবহারে আমি নিরুৎসাহিত হই। কিন্তু নোংরা পানি ব্যবহার ছাড়া উপায়ও নেই।’

এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে ঢাকা ওয়াসার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আবদুর রাজ্জাক বলেন, সায়েদাবাদ পানি সরবরাহ প্ল্যান্ট থেকে সরবরাহ করা পানিতে কিছুটা খারাপ গন্ধ রয়েছে। তবে এ পানি স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর নয়।

শেয়ারবাজারনিউজ/মু

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published.

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.