ঢাকায় এসে ফের উৎপাদনে যাবে বিডি ওয়েল্ডিং
শেয়ারবাজার রিপোর্ট: চট্টগ্রাম থেকে ঢাকার ধামরাইয়ে কারখানা স্থানান্তর করবে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বাংলাদেশ ওয়েল্ডিং ইলেকট্রোডস লিমিটেড। বর্তমানে উৎপাদনে না থাকা কোম্পানিটির উৎপাদন ঢাকায় এসে শুরু করা হবে বলে জানিয়েছেন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
বিডি ওয়েল্ডিংয়ের একজন পরিচালক শেয়ারবাজারনিউজ ডটকমকে বলেন, কোম্পানির কারখানা ঢাকায় স্থানান্তর হবে। তাই কোম্পানির ম্যানেজমেন্ট কারখানার জন্য ধামরাইয়ে ২০০ ডেসিমল জমি নির্বাচন করেছে। জমি কিনতে অন্তত দুই মাস সময় লাগবে। আশা করছি, এর মধ্যে এ বিষয়ে চূড়ান্ত খবরাখবর আনুষ্ঠানিকভাবে বিনিয়োগকারীদের জানানো সম্ভব হবে। আর এ খরচের একটা অংশ মেটানো হবে বিএসআরএমের কাছে জমি বিক্রির টাকা দিয়ে।
দেশের একটি বড় কোম্পানির সঙ্গে বিডি ওয়েল্ডিং এর ব্যবসায়িক চুক্তি হচ্ছে এমন গুজবে শেয়ারটির দাম জুন মাসে বেড়ে যায়। কিন্তু এ বিষয়ে তিনি বলেন, বর্তমানে কোম্পানিটির উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। বড় কোম্পানির সঙ্গে ব্যবসা করবে কী? আইসিবি’র পক্ষ থেকে চেষ্টা করা হচ্ছে লোকসানি কোম্পানিটিকে মুনাফায় আনার জন্য। তাই ব্যবস্থাপনার স্বার্থে কোম্পানিটির কারখানা ঢাকায় স্থানান্তর হচ্ছে। আপাতত কোম্পানিটিকে উৎপাদনে ফেরানোই প্রধান লক্ষ্য। আর শেয়ার দরের বিষয়ে বলেন, আমাকেও অনেকে ফোন করেছিল পরামর্শের জন্য। কিন্তু শেয়ারবাজার তো গুজবে কান দিয়ে বিনিয়োগের জায়গা নয়।
উল্লেখ্য, জুন মাসে কোম্পানিটির শেয়ার দর ১৩ টাকা থেকে ২৩ পর্যন্ত বেড়েছিল। তবে গতকাল কোম্পানিটির শেয়ারের সমাপনি মূল্য ১৭.৫০ টাকা।
গত জুনে স্টক এক্সচেঞ্জ এর মাধ্যমে কোম্পানি বিনিয়োগকারীদের জানিয়েছিল, বিএসআরএম গ্রুপের কাছে চট্টগ্রামের কারখানার জমিটি বিক্রি করে ৪২ কোটি টাকা পাওয়া গেছে। এ টাকা থেকে সাউথইস্ট ব্যাংকের পাওনা পরিশোধ করা হবে। অবশিষ্ট অর্থ নতুন কারখানা স্থাপন, জমি ক্রয় ও উন্নয়নসহ আনুষঙ্গিক কাজে ব্যয় করা হবে।
বিডি ওয়েল্ডিংয়ের সর্বশেষ প্রতিবেদনে নিরীক্ষকের মন্তব্য অনুসারে, সাউথইস্ট ও মার্কেন্টাইল ব্যাংকের কাছে বিডি ওয়েল্ডিংয়ের দেনা অন্তত ৩৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে ২২ কোটি টাকা সাউথইস্ট ব্যাংক ও ১৩ কোটি টাকা মার্কেন্টাইল ব্যাংকের কাছে। তবে মার্কেন্টাইল ব্যাংকের দেনা পরিশোধ করার ব্যাপারে কোম্পানি সূত্রে কিছু জানা যায়নি।
প্রসঙ্গত, লোকসান ও ঋণ পরিশোধে ব্যর্থতার একটি দুষ্টচক্রে আটকে রয়েছে ওয়েল্ডিং ইলেকট্রোড রড ও ইন্ডাস্ট্রিয়াল গ্যাস উৎপাদক বিডি ওয়েল্ডিং। ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ না করায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরোয় (সিআইবি) ঋণখেলাপি হিসেবে কোম্পানিটির নাম উঠে আসে। এ কারণে অন্য কোনো ব্যাংকের কাছ থেকেও ঋণ পাচ্ছে না তারা।
একসময় কাঁচামাল আমদানি করলেও ব্যাংকের সমর্থন না পাওয়ায় এক পর্যায়ে স্থানীয় আমদানিকারকদের কাছ থেকে উচ্চমূল্যে কাঁচামাল কিনে উৎপাদন কার্যক্রম পরিচালনা করছিল বিডি ওয়েল্ডিং। বছরের পর বছর প্রতিযোগীদের কাছে বাজার হারিয়ে ২০১৫ সালে এসে লোকসানে পড়ে তারা।
লোকসানের কারণে ২০১৬ হিসাব বছরের জন্য কোনো লভ্যাংশ দেয়নি বিডি ওয়েল্ডিং। জুন ক্লোজিংয়ের বাধ্যবাধকতায় সেবার ১৮ মাসে হিসাব বছর গণনা করে কোম্পানিটি। সর্বশেষ নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুসারে, ২০১৬ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত ১৮ মাসে বিডি ওয়েল্ডিংয়ের শেয়ারপ্রতি লোকসান হয় ৩.৫০ টাকা। ২০১৬ সালের ৩০ জুন কোম্পানির শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদমূল্য (এনএভিপিএস) ছিল ১২.৮৭ টাকা।
তবে ২০১৬ সালের জুলাই থেকে ২০১৭ সালের মার্চ (প্রথম তিন প্রান্তিক) সময়ে বিডি ওয়েল্ডিংয়ের লোকসান আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় কমেছে। এ সময়ে কোম্পানিটির লোকসান হয়েছে ০.৭২ টাকা, যেখানে আগের বছর একই সময়ে লোকসান ছিল ২.৫৮ টাকা। ৩১ মার্চ কোম্পানির এনএভিপিএস দাঁড়ায় ১২.১৬ টাকা।
শেয়ারবাজারনিউজ/আ