২০১৮ সালের মধ্যে সরকারি কোম্পানিকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির নির্দেশ অর্থমন্ত্রীর
শেয়ারবাজার রিপোর্ট: ২০১৮ সালের ৩১ মের মধ্যে শিল্প, পর্যটন, টেলিযোগাযোগ খাতের এবং একই বছরের ৩০ জুনের মধ্যে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের কোম্পানিগুলোকে পুঁজিবাজারে আসার সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করার নির্দেশ দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী।
এর জন্য অতিরিক্ত সচিব মুসলিম চৌধুরীকে প্রধান করে ৫ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিতে জ্বালানি ও বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ এবং বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের প্রতিনিধি সদস্য হিসেবে থাকবেন। কমিটিকে আগামী ৪ মাসের মধ্যে সরকারি শেয়ার অফলোডে প্রাথমিক সুপারিশ প্রদানের জন্য নির্দেশ দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। আগামী এক বছরের মধ্যে কমিটিকে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
গতকাল অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সভাপতিত্বে মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে সরকারি কোম্পানিগুলোর তালিকাভুক্তি নিয়ে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে মন্ত্রী সরকারি কোম্পানিগুলো দ্রুত তালিকাভুক্তির ওপর গুরুত্বারোপ করে এমন নির্দেশ দিয়েছেন। এর বাইরে পুঁজিবাজারে এরই মধ্যে তালিকাভুক্ত সরকারি কোম্পানিগুলোর আরো শেয়ার অফলোডের বিষয়েও পদক্ষেপ নেয়ার কথা বলেছেন তিনি।
বৈঠকে এ বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন, ব্যবসা করতে হলে সরকারি কোম্পানিগুলোকে অবশ্যই পুঁজিবাজারে আসতে হবে। এজন্য তাদের এক বছরের মধ্যে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। প্রয়োজনে বিদেশী বিশেষজ্ঞ প্রতিষ্ঠানের সহায়তা নেয়ারও পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
বৈঠক সূত্র জানায়, পুঁজিবাজারে আসতে হলে কোম্পানিকে লাভজনক অবস্থায় থাকার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কিন্তু অধিকাংশ সরকারি কোম্পানিই লোকসানে রয়েছে।
বিদ্যুৎ খাতের কোম্পানিগুলো পুঁজিবাজারে আসার ক্ষেত্রে অনেকটা এগিয়ে রয়েছে বলে অর্থমন্ত্রীকে জানানো হয়েছে। এরই মধ্যে একটি বিদ্যুৎ কোম্পানি বন্ড ছাড়ার উদ্যোগ নিয়েছে। তাছাড়া লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হতে বোস্টন কনসাল্টিং গ্রুপের (বিসিজি) সঙ্গে জ্বালানি খাতের কোম্পানিগুলোর চুক্তির বিষয়টিও সভায় উল্লেখ করা হয়।
তাছাড়া বর্তমানে লাভজনক সরকারি কোম্পানিগুলোকে দ্রুত পুঁজিবাজারে নিয়ে আসার জন্য বিশেষ তাগিদ দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। এ তালিকায় রয়েছে বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ড কোম্পানি লিমিটেড, নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি লিমিটেড, ইলেকট্রিসিটি জেনারেশন কোম্পানি লিমিটেড, বাংলাদেশ কেবল শিল্প সংস্থা লিমিটেড, টেলিফোন শিল্প সংস্থা, এসেনশিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেডসহ আরো কিছু কোম্পানি।
উল্লেখ্য, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত করতে মন্ত্রণালয়ের প্রাথমিক তালিকায় থাকা সরকারি কোম্পানিগুলোর প্রায় অর্ধেকই বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন প্রতিষ্ঠান। এগুলো হলো— এলপি গ্যাস লিমিটেড, বাখরাবাদ গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন লিমিটেড, গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি লিমিটেড, জালালাবাদ গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেম লিমিটেড, পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড, সিলেট গ্যাস ফিল্ড কোম্পানি লিমিটেড, বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ড কোম্পানি লিমিটেড, রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড, নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি লিমিটেড, ইলেকিট্রসিটি জেনারেশন কোম্পানি লিমিটেড ও আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানি লিমিটেড।
তালিকায় শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন প্রতিষ্ঠানগুলো হলো— প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, কর্ণফুলী পেপার মিলস লিমিটেড, বাংলাদেশ ইনসুলেটর অ্যান্ড স্যানিটারি ওয়্যার ফ্যাক্টরি লিমিটেড ও ছাতক সিমেন্ট ফ্যাক্টরি লিমিটেড। বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন হোটেলস ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড এবং বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস লিমিটেডও রয়েছে। অন্যদিকে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন টেলিটক বাংলাদেশ লিমিটেড, বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশনস কোম্পানি লিমিটেড, বাংলাদেশ কেবল শিল্প সংস্থা লিমিটেড ও টেলিফোন শিল্প সংস্থাকেও পুঁজিবাজারে আনতে চায় অর্থ মন্ত্রণালয়।
তালিকায় আরো রয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন সরকারি কোম্পানি এসেনশিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেড। লাভজনক এ কোম্পানি একবার তালিকাভুক্তির উদ্যোগ নিয়েও পিছিয়ে যায়। এ বিষয়ে কোম্পানির বক্তব্য, সরকারকে স্বল্পমূল্যে ওষুধ সরবরাহের চাপ থাকায় তাদের মুনাফা বাড়ানোর সুযোগ কম। পুঁজিবাজারে এলে মুনাফা বাড়াতে গিয়ে কোম্পানিকে বেশি দামে ওষুধ বিক্রি করতে হবে, যার প্রভাব সরকারি স্বাস্থ্যসেবায় পড়তে পারে। এছাড়া ওষুধের বাজারে প্রাইস রেফারেন্স হিসেবেও কাজ করে এ প্রতিষ্ঠান। কোম্পানিটির এ মতামতের পরিপ্রেক্ষিতে মন্ত্রণালয় বলেছে, মুনাফা বাড়ানোর জন্য তারা চাইলে বেসরকারি খাতেও ওষুধ বিক্রি করতে পারে। তবে ওষুধের মূল্যস্তর নিয়ন্ত্রণে এ কোম্পানির ভূমিকার বিষয়টি স্পর্শকাতর বলে উত্থাপিত মতের প্রতি অর্থমন্ত্রীকেও একমত বলে মনে হয়েছে।
এদিকে সভায় বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর তালিকাভুক্তি ও সেসব কোম্পানিতে থাকা সরকারি অংশের শেয়ার অফলোড করার বিষয়ে অর্থমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিচিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান ড. এম খায়রুল হোসেন। এক্ষেত্রে অনেক বহুজাতিক কোম্পানির হেডকোয়ার্টারের অনীহার কথাও সেখানে উত্থাপিত হয়। কোম্পানিগুলোর সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী।
সরকারি ও বহুজাতিক কোম্পানিগুলোকে তালিকাভুক্তির জন্য বিএসইসি প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নেয়ার জন্য প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন কমিশন চেয়ারম্যান। এক্ষেত্রে দুই স্টক এক্সচেঞ্জ ও সরকারের বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান আইসিবিও সহযোগিতা করার কথা জানিয়েছে।
উল্লেখ্য, সভায় বিদ্যুৎ বিভাগ, জ্বালানি বিভাগ, শিল্প মন্ত্রণালয়, ডাক ও টেলিযোগযোগ মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, বিএসইসি, ডিএসই, সিএসই ও আইসিবির প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। তবে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের কোনো প্রতিনিধি সেখানে ছিলেন না।
শেয়ারবাজারনিউজ/আ