জিই ও এক্সিলারেট এনার্জির সঙ্গে যৌথভাবে ১ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে সামিট
শেয়ারবাজার রিপোর্ট: গ্যাসভিত্তিক কম্বাইন্ড পাওয়ার প্লান্ট ও ভাসমান তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) সরবরাহে বড় বিনিয়োগ করছে সামিট গ্রুপ। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান জেনারেল ইলেকট্রিকের (জিই) সঙ্গে যৌথভাবে ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগের একটি রূপরেখাও ঘোষণা করেছে প্রতিষ্ঠানটি। এজন্য গতকাল সিঙ্গাপুরের একটি হোটেলে প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করেছে সামিট গ্রুপের নবগঠিত প্রতিষ্ঠান সামিট পাওয়ার ইন্টারন্যাশনাল। একই সঙ্গে এলএনজি টার্মিনালে গ্যাস সরবরাহে এক্সিলারেট এনার্জির সঙ্গে আরেকটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে সামিট এলএনজি টার্মিনাল কোম্পানি। এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ তথ্য জানিয়েছে সামিট।
সামিট ও জেনারেল ইলেকট্রিকের মধ্যে সমঝোতা চুক্তিটিতে সই করেন সামিট কর্পোরেশনের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফয়সাল খান ও জিই-এর দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলের প্রেসিডেন্ট বানমালী আগারওয়াল। অন্যদিকে সামিট ও এক্সিলারেট এনার্জির মধ্যে স্বাক্ষরিত চুক্তিতে সই করেন সামিট এলএনজি টার্মিনালের এমডি এ এন এম তারিকুর রশিদ ও এক্সিলারেট এনার্জি এশিয়ার মহাব্যবস্থাপক কার্লমান থাম। সিঙ্গাপুরের দি ফুলারটোন হোটেলে আয়োজিত চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন বোর্ডের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান কাজী আমিনুল ইসলাম, বাংলাদেশ সরকারের এসডিজির প্রধান সমন্বয়ক মো. আবুল কালাম আজাদ, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির, সিঙ্গাপুর সরকারের সাবেক মন্ত্রী লিম উই উয়া, ইন্টারন্যাশনাল এন্টারপ্রাইজ (আইই) সিঙ্গাপুরের অ্যাসিসটেন্ট সিইও সাতভিন্দর সিং ও সামিট গ্রুপের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ আজিজ খান উপস্থিত ছিলেন।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাংলাদেশে গ্যাসভিত্তিক কম্বাইন্ড সাইকেল পাওয়ার প্লান্ট ও একটি ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল উন্নয়নে যৌথভাবে কাজ করবে সামিট। ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগে এসব উন্নয়নে কাজে সামিট পাওয়ার ইন্টারন্যাশনালের অংশীদারিত্ব থাকবে ৫০ শতাংশ বা ৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
বিশ্বব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান আন্তর্জাতিক ফিন্যান্স করপোরেশন (আইএফসি) বাংলাদেশে সামিটের মেঘনাঘাট ২ প্রাকৃতিক গ্যাসভিত্তিক কম্বাইন্ড সাইকেল পাওয়ার প্লান্ট উন্নয়ন কার্যক্রমে এরই মধ্যে অর্থায়নে কাজ করছে। আগামী ৩ বছর মেয়াদে শেষ হওয়া এ প্রকল্পে ৫০ শতাংশ ইকুইটি শেয়ার করে কাজ করবে যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক ডিজিটাল ইন্ডাস্ট্রিয়াল কোম্পানি জেনারেল ইলেকট্রিক (জিই)-এর আর্থিক অঙ্গপ্রতিষ্ঠান জিই ক্যাপিটালস এনার্জি ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস। জিই মূলত গ্যাসভিত্তিক পাওয়ার প্লান্ট প্রকল্পগুলোতে উন্নত প্রযুক্তির যন্ত্রপাতি সরবরাহ করবে। এটি সম্পন্ন হলে সামিট পাওয়ার ইন্টারন্যাশনাল ৩ হাজার মেগাওয়াটের বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা অর্জন করবে।
অন্যদিকে ভাসমান এলএনজি টার্মিনালে গ্যাস সরবরাহে সামিট এলএনজি টার্মিনালের সঙ্গে মার্কিন বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান এক্সিলারেট এনার্জির ১৫ বছরমেয়াদি চুক্তি অনুযায়ী, এক্সিলারেট এনার্জি তাদের বিদ্যমান একটি ফ্লোটিং স্টোরেজ রি-গ্যাসিফিকেশন ইউনিট (এফএসআরইউ) থেকে সামিটকে গ্যাস সরবরাহ করবে। যদিও এ প্রকল্পের জন্য ২০১৫ সালের ১৮ জুলাই এক্সিলারেট এনার্জির সঙ্গে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করে সামিট। সমঝোতা অনুযায়ী এলএনজি টার্মিনালে ৫০ কোটি মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করবে সামিট। কোম্পানিটির আমদানীকৃত এলএনজি ভাসমান সংরক্ষণাগারে সংরক্ষণ এবং পুনরায় গ্যাসে রূপান্তর করে তা গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি লিমিটেডের (জিটিসিএল) কাছে সরবরাহ করবে সামিট।
সামিটের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ আজিজ খান বলেন, গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পগুলোর উন্নয়নে আগামী ৩ বছর মেয়াদে ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বিনিয়োগ চুক্তি হয়েছে। এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা যাবে। এসব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হওয়ার কারণে সামিট এখন অধিক নির্ভরযোগ্য প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। এলএনজি টার্মিনাল উন্নয়নে এক্সিলারেট এনার্জির সঙ্গে প্রথমবারের মতো এ চুক্তির ফলে এশিয়ার অন্যতম বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান হিসাবে সামিট প্রতিষ্ঠা লাভ করবে।
জিই দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলের প্রেসিডেন্ট বানমালী আগারওয়াল বলেন, কৌশলগত এ চুক্তির মাধ্যমে সামিটের সঙ্গে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ খাতের উন্নয়নে জিই প্রযুক্তি, অর্থসহায়তা ও বিভিন্ন ধরনের সেবা দেবে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ খাত নতুন মাত্রা যোগ হবে।
এক্সিলারেট এনার্জির মহাব্যবস্থাপক কার্লমান থাম বলেন, গুরুত্বপূর্ণ এই প্রকল্পের উন্নয়নে সামিটের অংশীদারিত্ব চুক্তির ফলে এফএসআরইউতে আমাদের অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা আগামী দিনে বাংলাদেশের জন্য কার্যকর ও নির্ভরযোগ্য প্রকল্প নিশ্চিত করবে।
উল্লেখ্য, সামিট গ্রুপের দুটি প্রতিষ্ঠান শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত রয়েছে। এর মধ্যে সামিট করপোরেশনের অধীনে রয়েছে একক মালিকানার প্রতিষ্ঠান সামিট পাওয়ার লিমিটেড ও সামিট হোল্ডিংসের অধীনে যৌথ বিনিয়োগে সামিট পোর্ট অ্যালায়েন্স লিমিটেড।
শেয়ারবাজারনিউজ/আ