আজ: বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪ইং, ১১ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৩ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

২০ অগাস্ট ২০১৭, রবিবার |

kidarkar

বিদ্যুৎ খাতে ব্যাংক মূলধনের ২৫ ভাগের বেশি ঋণ প্রস্তাব নাকচ

gov and bbশেয়ারবাজার রিপোর্ট: বিদ্যুৎ খাতে বিনিয়োগের জন্য ব্যাংকের মোট মূলধনের ২৫ শতাংশের বেশি ঋণ নিতে পারবেন না কোনো উদ্যোক্তা। এ বিষয়ে যে প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল তা নাকচ করে দিয়েছে ব্যাংক কোম্পানি আইন সংশোধন সংক্রান্ত কমিটি।

তবে সরকারের গ্যারান্টি থাকলে আইন মেনে ২৫ শতাংশের বেশি ঋণ দেয়া যেতে পারে। এক্ষেত্রে ব্যাংক কোম্পানি আইন সংশোধনের প্রয়োজন হবে না। বিদ্যুৎ খাতে বড় ঋণ দেয়ার ব্যাপারে ব্যাংক কোম্পানি আইন সংশোধনে সরকার গঠিত কমিটি সম্প্রতি এ রিপোর্ট দিয়েছে। বিদ্যুৎ খাতে বড় ঋণ পেতে ব্যাংক কোম্পানি আইন কোনো বাধা সৃষ্টি করবে কিনা, তা যাচাইয়ে একটি কমিটি করেছিল বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়। সংশ্লিষ্ট সূত্রে পাওয়া গেছে এ তথ্য।

জানা গেছে, বর্তমানে ব্যাংক মূলধনের ২৫ শতাংশের বেশি ঋণ না দেয়ার নিয়ম বহাল রয়েছে। সরকারের গঠিত কমিটি নতুন কোনো সংশোধন করেনি। আগের নিয়ম বহাল রেখেই সরকারকে রিপোর্ট দিয়েছে।

ব্যাংক কোম্পানি আইন ১৯৯১ (২০১৩ পর্যন্ত সংশোধিত)-এর ২৬(খ)১ ধারা অনুযায়ী, একজন ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা গ্রুপকে একটি ব্যাংকের মূলধনের মোট ২৫ শতাংশের সমান অর্থ এককভাবে একজন ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা গ্রুপ কোম্পানিকে ঋণ দিতে পারে। তবে জাতীয় স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিশেষ করে সরকারের কার্যাদেশের বিপরীতে বিদ্যুৎ উৎপাদন, সঞ্চালন ও বিতরণ প্রকল্পের ক্ষেত্রে ২৫ শতাংশের বেশি ঋণ দেয়ার বিধান রয়েছে। এ ধরনের ঋণের ক্ষেত্রে অবশ্যই বহুজাতিক বা আন্তর্জাতিক উন্নয়ন ব্যাংক এবং সরকারের গ্যারান্টি ঋণ গ্রহীতার পক্ষে থাকতে হবে। বিদ্যুৎ খাতের উদ্যোক্তারাও সেই অনুযায়ী ঋণ সুবিধা পেয়ে থাকেন।

জানা গেছে, বিদ্যুৎ খাতের উদ্যোক্তাদের কেউ কেউ একটি ব্যাংকের কাছেই বড় অঙ্কের ঋণ চাইছেন। চলতি বছরের শুরুতে একাধিক উদ্যোক্তা একক হিসেবে ব্যাংকে মোট মূলধনের ২৫ শতাংশের বেশি ঋণ চেয়েছেন।

সম্প্রতি ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহীদের নিয়ে সভা করেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। ওই সভায় প্রতিমন্ত্রী জানিয়ে দেন, আগামী ছয় মাসের মধ্যে বিদ্যুৎ খাতে ২০ হাজার কোটি টাকা ঋণ দিতে হবে। এ সময় ব্যাংকের নির্বাহীরা জানান, এ পরিমাণ ঋণ দিতে হলে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের মূলধনের ২৫ শতাংশের বেশি ঋণ দিতে হবে। কারণ রাষ্ট্রায়ত্ত সব ব্যাংকের একসঙ্গে মোট মূলধনের ২৫ শতাংশের পরিমাণ ২০ হাজার কোটি টাকা হবে না। ফলে আইন অনুযায়ী এ পরিমাণ ঋণ দেয়ার সুযোগ নেই। এ ঋণ দিতে হলে ব্যাংক কোম্পানি আইন সংশোধন করে একক ব্যক্তি ঋণ দেয়ার পরিমাণ ব্যাংকের মোট মূলধনের ২৫ শতাংশের বেশি নির্ধারণ করতে হবে।

এরপর ৪ জুলাই ব্যাংক কোম্পানি আইনের পর্যালোচনার জন্য কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি গঠনের অফিস আদেশে বলা হয়েছে, বিদ্যুৎ খাতে বড় অঙ্কের অর্থ বিনিয়োগের সুবিধার্থে ব্যাংক কোম্পানি আইন কোনো প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে কিনা, তা পরীক্ষা করে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব দাখিলের জন্য কমিটি গঠন করা হল। কমিটির প্রধান করা হয় অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব জালাল আহমেদকে। কমিটিতে সংশ্লিষ্ট সব নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে সদস্য করা হয়েছে। এ কমিটি কয়েকটি বৈঠক করেছে। এরপর বর্তমান বিধান বহাল রেখেই কমিটি রিপোর্ট দিয়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, ব্যাংক কোম্পানি আইন সংশোধনের ব্যাপারে মতামত সম্প্রতি পাঠানো হয়েছে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে। সেখানে বলা হয়, গ্রাহকের কাছ থেকে চুক্তিভিত্তিক আমানত গ্রহণ করে ব্যাংকগুলো। এরপর লোকসান হলেও পূর্বনির্ধারিত হারেই সুদ পরিশোধ করতে হয়। ফলে ব্যাংকের যে কোনো বিনিয়োগ চুক্তিভিত্তিক হওয়া উচিত। সেখানে আরও বলা হয়, ব্যাংকিং খাতে একই সময়ে কোম্পানিকে ঋণ দেয়ার পাশাপাশি ওই কোম্পানি শেয়ার ধারণ করলে ভবিষ্যতে কোম্পানির সব ধরনের ঝুঁকি ব্যাংকের ওপর বর্তাবে। কারণ ঋণগ্রহীতা যদি কোনো কারণে দেউলিয়া হন, তাহলে যেমন ব্যাংক ঋণ আদায় অনিশ্চিত হবে; পাশাপাশি অবশিষ্টাংশ মূলধন হিসেবে ব্যাংক ফেরত পাবে। এ ধরনের ঝুঁকি নেয়া ব্যাংক গ্রাহকের স্বার্থানুকূল হবে না। আর কোনো কোম্পানির মালিকানায় অংশগ্রহণ বাণিজ্যিক ব্যাংকিংয়ের উদ্দেশ্য নয়। ব্যাংকগুলো এ ধরনের কোম্পানির ব্যবস্থাপনায় জড়িত হলে ব্যাংকিং সেবা পরিচালনা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

জানা গেছে, এর আগে ব্যাংক কোম্পানি আইন সংশোধনের জন্য মতামত চাওয়া হয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে। এ ব্যাপারে কেন্দ্রীয় ব্যাংক তাদের মতামতে বলেছে, নির্ধারিত ২৫ শতাংশের ওপর এক ব্যক্তিকে ঋণ দেয়া হলে ব্যাংকের সম্পদ ঋণগ্রহীতার কাছে কেন্দ্রীভূত হবে। এতে ব্যাংকের ঝুঁকি বাড়বে। কারণ বড় ঋণগ্রহীতা কোনো কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হলে ব্যাংকের ওপর বড় ধরনের বিরূপ প্রভাব পড়বে। একই যুক্তিতে কোনো একটি খাতে ব্যাংকের বিনিয়োগ কেন্দ্রীভূত করা কাম্য নয়। এছাড়া কোনো প্রকল্পে বড় ঋণের প্রয়োজন হলে সেক্ষেত্রে সিন্ডিকেট ঋণের ব্যবস্থা রয়েছে। কয়েকটি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান যৌথভাবে এ ধরনের ঋণ দিতে পারে। আর জাতীয় অগ্রাধিকার প্রকল্পে বড় ঋণের সুযোগ করে দিতে বর্তমান ব্যাংক কোম্পানি আইনের ২৬খ(৩) ধারায় ব্যবস্থা রয়েছে। ওই ধারা অনুযায়ী অগ্রাধিকার বিবেচনায় যে কোনো ঋণে সরকার গ্যারান্টি দিলেই ঋণ মিলবে।

জানা গেছে, দেশে সর্বস্তরে বিদ্যুৎ নিশ্চিত করতে ২০২১ সালের মধ্যে ৩ হাজার কোটি মার্কিন ডলার (২ লাখ ৪০ হাজার কোটি টাকা) বিনিয়োগের প্রয়োজন। একইভাবে ২০৪১ সালে এ খাতে বিনিয়োগের প্রয়োজন হবে ৮ হাজার ৫০০ কোটি ডলার (৬ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা)। এ অর্থ সংগ্রহ করতেই সম্প্রতি সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে বিদ্যুৎ খাতে বড় প্রকল্পে বিনিয়োগের জন্য ব্যাংকগুলোকে সম্পৃক্ত করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। যাতে ব্যাংক ও অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিদ্যুৎ খাতে স্বল্প ও মধ্যমেয়াদি বিনিয়োগ করতে পারে। পাশাপাশি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ‘ইসলামী ডেভেলপমেন্ট ফান্ডে’ জমা সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা বন্ড আকারে আনার সিদ্ধান্তও নেয়া হয়। তবে ওই বৈঠকে নেয়া সিদ্ধান্তগুলো বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বর্তমান ব্যাংক কোম্পানি আইনে কোনো বাধা আছে কিনা, তা খতিয়ে দেখতে বলা হয়েছিল গঠিত কমিটিকে।

 

শেয়ারবাজারনিউজ/আ

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published.

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.