আজ: বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪ইং, ১৪ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ১৬ই রমজান, ১৪৪৫ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

১২ নভেম্বর ২০১৭, রবিবার |

kidarkar

বেশি প্রিমিয়াম ভাল না সেকেন্ডারিতে বেশি দামে শেয়ার কেনা ভাল?

book buildingশেয়ারবাজার রিপোর্ট: বুকবিল্ডিং পদ্ধতিকে ঘিরে ফের বিতর্ক তৈরি হয়েছে। বাজার সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, সিন্ডিকেশনের মাধ্যমে যোগ্য বিনিয়োগকারীরা কোম্পানির শেয়ারের মূল্য অতিমূল্যায়িত করছেন।

আর এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) সম্প্রতি বুকবিল্ডিংয়ের মাধ্যমে নির্ধারিত বসুন্ধরা পেপারের শেয়ার দর অতিমূল্যায়িত হয়েছে কী না তদন্তের জন্য উভয় স্টক এক্সচেঞ্জকে নির্দেশ দিয়েছে। এতে বাজার সংশ্লিষ্টদের মধ্যে দেখা দিয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া।

শীর্ষ স্থানীয় মার্চেন্ট ব্যাংকারদের কর্তাব্যক্তিরা এ প্রসঙ্গে বলেন, বিশ্বব্যাপী বুকবিল্ডিং পদ্ধতি শেয়ার দর নির্ধারণের জন্য একই স্বচ্ছ ও পরিক্ষীত প্রক্রিয়া। আর এখানে বিতর্কের সুযোগ কম। তাছাড়া বুকবিল্ডিং আইন অনুযায়ী যোগ্য বিনিয়োগকারীদের শেয়ার দর নির্ধারণে স্বাধীনতা আছে।

তারা আরো বলেন, আমাদের পুঁজিবাজারে ভাল কোম্পানির অভাব রয়েছে। আর দেশের অধিকাংশ ভাল কোম্পানি শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্তির জন্য বুকবিল্ডিং পদ্ধতিকেই অগ্রাধীকার দিচ্ছে। কারণ ভাল কোম্পানি সমূহ তাদের ব্র্যান্ড ভ্যালু অনুযায়ী শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্তির ক্ষেত্রে ভাল প্রিমিয়াম চায়। তবে বুকবিল্ডিং পদ্ধতিতেও শেয়ার দর নির্ধারণ নিয়ে এমন বিতর্ক তৈরি হলে ভাল কোম্পানি সমূহ পুঁজিবাজারে আসতে নিরুতসাহিত হবে।

জানা যায়, সম্প্রতি অনুষ্ঠিত বসুন্ধরা পেপারের বিডিংয়ে কোম্পানিটির শেয়ারের কাট-অফ প্রাইস নির্ধারণ হয়েছে ৮০ টাকা। যা অতিমূল্যায়িত বলে অনেকেই মনে করেন। তাছাড়া আমরা নেটওয়ার্কের কাট-অফ প্রাইস নির্ধারণ হয়েছিল ৩৯ টাকা। যা নিয়ে সে সময়েও বিতর্ক তৈরি হয়েছিল। এছাড়া সম্প্রতি অনুষ্ঠিত আমান কটন ফাইবার্সের বিডিংয়ে কোম্পানিটির শেয়ারের কাট-অফ প্রাইস নির্ধারণ হয়েছে ৪০ টাকা।

এ প্রসঙ্গে একাধিক মার্চেন্ট ব্যাংকের শীর্ষ ব্যক্তিরা বলেন, ভাল কোম্পানির ব্র্যান্ড ভ্যালু রয়েছে। সেকেন্ডারি মার্কেটে দেখা যায় যে সব কোম্পানি ভাল ডিভিডেন্ড এবং ইপিএস দেখাচ্ছে তাদের শেয়ার দর বেশি হলেও পিই রেশিও ঝুঁকিপূর্ণ নয়। আর বাজারে আসতে ইচ্ছুক এসব কোম্পানি শেয়ারের ভাল মূল্য চান। তাছাড়া যোগ্য প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা বিডিংয়ের সময় কোম্পানির আর্থিক অবস্থার পাশাপাশি ব্র্যান্ড ভ্যালুর বিষয়টিও বিবেচনায় নেন। দর নির্ধারণে প্রথম ঝুঁকিটি যোগ্য বিনিয়োগকারীরাই নেন। কারণ সাধারণ বিনিয়োগকারীরা শেয়ারটি পাচ্ছেন কাট-অফ প্রাইসের চেয়ে ১০ শতাংশ কম দরে। তাছাড়া বাজারে মৌলভিত্তি সম্পন্ন কোম্পানি তালিকাভুক্ত হলে সেটা সাধারণ বিনিয়োগকারীর জন্যও ভাল আবার শেয়ারবাজারের জন্যও ভাল।

এ প্রসঙ্গে ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ডিবিএ) সভাপতি আহমেদ রশীদ লালি শেয়ারবাজারনিউজ ডটকমকে বলেন, বিশ্বব্যাপী বুকবিল্ডিং পদ্ধতি একটি স্বচ্ছ প্রক্রিয়া। আর এ প্রক্রিয়ায় কোম্পানিগুলোও শেয়ারের যৌক্তিক মূল্য পান। আর এ নিয়ে বিতর্ক নেই। তাছাড়া শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থারও অধিকার রয়েছে পদ্ধতিটি ঠিকভাবে চলছে কিনা যাচাই করে দেখার।

এদিকে দেখা যায়, শেয়ারবাজারে নতুন কোম্পানির লেনদেনের প্রথম দিনেই শেয়ার দরে উল্লম্ফন ঘটে। বুকবিল্ডিংয়ের মাধ্যমে আসা আমরা নেটওয়ার্কের শেয়ার দর প্রথম দিন ২৫৮ শতাংশ বেড়ে ১৩৮ টাকা হয়েছিল। এছাড়া ফিক্সড প্রাই পদ্ধতিতে আসা ওয়াইম্যাক্সের শেয়ার দর প্রথমদিনেই ১ হাজার শতাংশ বেড়ে ১১৪ টাকা, শেফার্ড ইন্ডাস্ট্রিজের শেয়ার দর ৪৩১ শতাংশ বেড়ে ৪১.৭০ টাকা এবং বিবিএস ক্যাবলের শেয়ার দর ১০ টাকা থেকে ৮০০ শতাংশ বেড়ে ৯০ টাকা পর্যন্ত হয়েছিল।

এ বিষয়ে বিএসইসি’র সাবেক চেয়ারম্যান এবি মির্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, নতুন কোম্পানির লেনদেনের প্রথম দিনেই শেয়ার দরের এমন উল্লম্ফন অস্বাভাবিক। আর নতুন কোম্পানির শেয়ার লেনদেনের প্রথম কয়েকদিন দেখা যায় সাধারণ বিনিয়োগকারীরা না বুঝে শুনেই শেয়ার লেনদেন করছেন। যা একেবারেই কাম্য নয়। এক্ষেত্রে তাদের সচেতন হতে হবে।

বিএসইসি’র মূখপাত্র মো: সাইফুর রহমান শেয়ারবাজারনিউজ ডটকমকে বলেন, শেয়ার লেনদেনের আগে কিংবা পরে কোন কোম্পানির শেয়ার দর অস্বাভাবিক হলেই কমিশনের কাজ তা যাচাই করে দেখা। আর কমিশন আইনের মধ্য থেকেই প্রয়োজন মতো তদন্ত করছে। এখানে কারো বিরুদ্ধে কারসাজির প্রমাণ পেলেই ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

তবে বাজার সংশ্লিষ্ট অনেকেই বলছেন যে, নির্ধারিত মূল্যে বা প্রতিটি শেয়ার ১০ টাকা মূল্যে অনুমোদনপ্রাপ্ত শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্তির সাথে সাথে সেকেন্ডারি মার্কেটে বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়ে বাজারের টাকা ব্যক্তিগত ব্যবহারে চলে যায়, কিন্তু বুকবিল্ডিং পদ্ধতিতে প্রাপ্ত প্রিমিয়ামের টাকা কোম্পানির বিনিয়োগে ব্যবহৃত হয় এবং নিয়ন্ত্রক সংস্থার তদারকি করার সুযোগ থাকে।

 

শেয়ারবাজারনিউজ/আ

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published.

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.