তিন কোম্পানির বিষয়ে অডিটরের নেতিবাচক মন্তব্য
শেয়ারবাজার রিপোর্ট: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত তিন কোম্পানির বিষয়ে নেতিবাচক মন্তব্য করেছে কোম্পানিগুলোর সংশ্লিষ্ট নিরীক্ষক। কোম্পানির অডিটররা আর্থিক প্রতিবেদন তৈরিতে বিভিন্ন আইন পরিপালন না করার বিষয়গুলো তুলে ধরেছে। কোম্পানিগুলো হলো: বিডি ওয়েল্ডিং, ইনফরমেশন সার্ভিস নেটওয়ার্ক এবং গোল্ডেন সন লিমিটেড। ডিএসইর ওয়েবসাইট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। নিম্নে কোম্পানিগুলো সম্পর্কে নিরীক্ষকের প্রতিবেদন তুলে ধরা হলো:
বিডি ওয়েল্ডিং:
বিডি ওয়েল্ডিং কর্তৃপক্ষের প্রদত্ত ২০১৬-১৭ অর্থবছরের আর্থিক হিসাবে মজুদ পণ্যের (ইনভেন্টরী) সত্যতা পাওয়া যায়নি। এছাড়া আর্থিক হিসাবে বাংলাদেশ হিসাব মান (বিএএস) এর ১২ ও ৩৬ লংঘন করা হয়েছে। এমতাবস্থায় কোম্পানিটির নিরীক্ষক ২০১৬-১৭ অর্থবছরের আর্থিক হিসাব নিয়ে আপত্তি জানিয়েছেন।
বিডি ওয়েল্ডিংয়ের কারখানা ২০১৬-১৭ অর্থবছরে চিটাগাং থেকে ঢাকায় স্থানান্তর করা হয়েছে। এমতাবস্থায় বাংলাদেশ হিসাব মান (বিএএস)-৩৬ অনুযায়ি, কোম্পানিটির ১৭ কোটি ৪২ লাখ টাকার স্থায়ী সম্পদে ইমপেয়ারম্যান্ট টেস্ট করানোর প্রয়োজন ছিল। কিন্তু কোম্পানি কর্তৃপক্ষ তা করেনি। এমতাবস্থায় কোম্পানি কর্তৃপক্ষ মুনাফা ও সম্পদ বেশি দেখিয়েছে।
এদিকে মজুদ পণ্য হিসাবে ২০ কোটি ৫৮ লাখ টাকা উল্লেখ করা হলেও কোম্পানি কর্তৃপক্ষ তার পক্ষে সঠিক কোন তথ্য প্রদান করতে পারেনি। এছাড়া নিরীক্ষক স্বশরীরে তা যাছাই করতে পারেননি। যার কারণে মজুদ পণ্যের সত্যতা যাছাই করা যায়নি।
বিএএস-১২ অনুযায়ি, প্রযোজ্য হলেও কোম্পানি কর্তৃপক্ষ অ্যাকাউন্টিং বেসিস ও টেক্স বেসিসে স্বল্পমেয়াদি পার্থক্যে ডেফার্ড টেক্স গণনা করেনি। তারা শুধুমাত্র রিভ্যালুয়েশন সারপ্লাসের উপরে ডেফার্ড টেক্স গণনা করেছে। এছাড়া কোম্পানিটিতে শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশবাবদ ৩৩ লাখ টাকা পাওনা থাকলেও কোম্পানিতে এ জাতীয় কোন ফান্ড নাই।
ইনফরমেশন সার্ভিসেস নেটওয়ার্ক
ইনফরমেশন সার্ভিসেস নেটওয়ার্কের ২০১৬-১৭ অর্থবছরের আর্থিক হিসাবে বাংলাদেশ হিসাব মান (বিএএস) লংঘন করা হয়েছে।
কোম্পানিটির বিভিন্ন দেনাদারের কাছে ২০১৬-১৭ অর্থবছরের শেষে ১০ কোটি ৩৬ লাখ টাকা পাওনা রয়েছে। তবে এই পাওনার মধ্যে কতটাকা কতদিন ধরে বকেয়া রয়েছে, তা প্রকাশ না করার মাধ্যমে ১৯৯৪ সালের কোম্পানি আইন লংঘন করা হয়েছে। এছাড়া দেনাদারদের কাছ থেকে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে নামমাত্র টাকা আদায় সত্ত্বেও ইমপেয়ারম্যান্ট লস দেখানো হয়নি। যাতে মুনাফা ও সম্পদ বেশি দেখানো হয়েছে।
শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিতে ইনফরমেশন সার্ভিসেস থেকে বিনিয়োগ করা হলেও বিএএস-৩৯ অনুযায়ি তা পরিমাপ করা হয়নি। এছাড়া বিএএস-৫৫ অনুযায়ি, এই বিনিয়োগের বিপরীতে গেইন বা লস দেখানো হয়নি। এছাড়া বিএএস-১২ অনুযায়ি কোম্পানিটিতে ডেফার্ড টেক্স গণনা করা হয়নি।
এদিকে বিভিন্ন জনের কাছে ৪৯ কোটি ৪৫ লাখ টাকা পাওনা হিসাবে কয়েক বছর ধরে ইনফরমেশন সার্ভিসেসের আর্থিক হিসাবে দেখানো হচ্ছে। যা আদায় হচ্ছে না। এমতাবস্থায় বিএএস-৩৬ অনুযায়ি, ইমপেয়ারম্যান্ট করার বাধ্যবাধকতা থাকলেও তা করা হয়নি।
গোল্ডেন সন
শুল্ক না দিয়ে অবৈধভাবে কাঁচামাল আমদানি করা ও খোলা বাজারে পণ্য বিক্রির অভিযোগে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত গোল্ডেন সনকে ২৭ লাখ টাকা জরিমানা করেছে কাস্টমস।
জানা গেছে, গোল্ডেন সনের বিরুদ্ধে বন্ড সুবিধায় কাঁচামাল আমদানি এবং অবৈধভাবে খোলা বাজারে ওইসব পণ্য বিক্রিসহ হস্তান্তর বিষয়ে একটি অভিযোগ আনা হয়েছে। আমদানি শুল্কমুক্ত কাঁচামাল থেকে উৎপাদিত অবৈধ হস্তান্তর বিষয়টি তদন্তের পর কোম্পানির বিরুদ্ধে এ অভিযোগ আনা হয়।
কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট ১৯৬৯ সালের কাস্টমস আইন ধারা ১১১ অনুযায়ী, কোম্পানির বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো প্রমাণিত হওয়ার কারণে মোট ২৭ লাখ ১ হাজার ৭০০ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। আগামী ১৫ দিনের জরিমানার এই অর্থ পরিশোধ নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
শেয়ারবাজারনিউজ/ম.সা