পথ হারাল ইসির রোডম্যাপ
শেয়ারবাজার ডেস্ক: একাদশ সংসদ নির্বাচনের জন্য ঢাকঢোল পিটিয়ে রোডম্যাপ প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। কিন্তু সেই অনুযায়ী ডিসেম্বরের মধ্যে সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণ এবং আইন প্রণয়নের কাজ শেষ করতে পারছে না নির্বাচন অনুষ্ঠানের দায়িত্বে থাকা সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি। এতে অনেকেই রোডম্যাপে মিসটেক হয়েছে বলে মনে করছেন। তারা বলছেন, হয়তো এপ্রিলের স্থলে ডিসেম্বর প্রিন্ট হয়েছে।
জানা গেছে, একাদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে সংসদীয় আসনের পুনর্বিন্যস্ত সীমানার চূড়ান্ত গেজেট চলতি ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকাশ করার কথা নির্বাচন কমিশনের। এ লক্ষ্যে অক্টোবরে ৩০০ আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণ করে খসড়া তালিকা প্রণয়ন; নভেম্বরে খসড়া তালিকা প্রকাশ করে দাবি, আপত্তি, সুপারিশ আহ্বান এবং নভেম্বর-ডিসেম্বরে আপত্তির বিষয়ে অঞ্চলভিত্তিক শুনানি শেষ করে নিষ্পত্তি করার পরিকল্পনা ছিল রোডম্যাপে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা ১৬ জুলাই এ রোডম্যাপ আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করেন। এরই মধ্যে ৪০টি রাজনৈতিক দল এবং সুশীলসমাজ, গণমাধ্যম, নারীনেত্রী, পর্যবেক্ষক, নির্বাচন বিশেষজ্ঞসহ ২ শতাধিক প্রতিনিধিকেও লিখিত রোডম্যাপটি দিয়েছে সংস্থাটি।
ইসির যুগ্ম সচিব ও জনসংযোগ পরিচালক এস এম আসাদুজ্জামান বলেন, রোডম্যাপ ধরে সংলাপ হয়েছে। এটা শেষ করে প্রতিবেদন করার প্রস্তুতি চলছে। নতুন দলের নিবন্ধনের আবেদন প্রক্রিয়া চলছে। ভোটার তালিকা হালনাগাদ কাজ শেষ করে খসড়া প্রকাশের প্রস্তুতিও চলছে। কিন্তু রোডম্যাপের অন্যতম অনুষঙ্গ সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণের কাজ যেন ‘পথ হারিয়ে’ ফেলেছে।
তিনি বলেন, রোডম্যাপের সংসদীয় আসনের সীমানা বিষয়টি ঠিক সময় হলো না এটি ইসির একটি মিসটেক বলা যায়। কমিশন কী করবে, বুঝতে পারছি না।
নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা বলছেন, সীমানা নির্ধারণ ইস্যুতে রোডে নেই রোডম্যাপ, যেন দুই নৌকায় পা দিয়েছে সংস্থাটি। একদিকে সীমানা নির্ধারণের জন্য নতুন আইন করবে নাকি বিদ্যমান অধ্যাদেশেই সীমানা নির্ধারণ করবে তার সুস্পষ্ট ঘোষণা দেয়নি ইসি। কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী, জুলাই-অগাস্টে সীমানা পুনর্নির্ধারণ করে আগের নীতিমালা পর্যারলোচনা করে একটি নতুন নীতিমালা প্রস্তুত করার কথা। সেই সঙ্গে জিওগ্রাফিক্যাল ইনফরমেশন সিস্টেমস সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত গ্রহণও করবে ইসি।
যুগ্ম সচিব পর্যায়ের এক কর্মকর্তা বলেন, এ দুইটি কাজের কিছুটা অগ্রগতি হয়েছে। সেটাও নভেম্বরে এসে। একটা খসড়া নীতিমালা করা হয়েছে, জিআইএস সংশ্লিষ্টদের কাছে তথ্য চাওয়া হয়েছে। কিন্তু কাজের কাজ আর এগোয়নি। নির্বাচন কমিশনাররাই স্পষ্ট করে বলতে পারছেন না কীভাবে এগোবে? নির্বাচন কমিশনার কবিতা খানম ডিসেম্বরের শুরুতে বলেন, সংসদ নির্বাচন সীমানা আইন করতে আমরা সময় নিচ্ছি, এটা কবে চূড়ান্ত হবে বলা যাচ্ছে না। কমিশন এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। আমরা যে আইন করছি, এটাতে ২০ থেকে ৩০ বছরে কারও হাত দেয়া লাগবে না।
এদিকে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সীমানা নির্ধারণ নিয়ে বিপরীতমুখী অবস্থানে রয়েছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ চাইছে, বিদ্যমান সীমানাতেই সংসদ নির্বাচন হোক, নতুন আইন করলে জটিলতা হবে। বিএনপি বলছে, ২০০১ সালের আগের সীমানায় ফিরে যেতে হবে। এ অবস্থায় কমিশনের ভূমিকায় সন্দেহ প্রকাশ করছে বিএনপি।
দলটির পক্ষে সংলাপে এসে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ইসির প্রকাশিত রোডম্যাপে উল্লেখ করা হয়েছে, নির্বাচনী আসন পুনর্নির্ধারণের জন্য আইন চূড়ান্ত করা হবে ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে। অথচ একই রোডম্যাপে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০১৭ সালের ডিসেম্বর মাসেই নির্বাচনী আসন পুনর্বিন্যাস সম্পন্ন করে গেজেট প্রকাশ করা হবে, যা পরস্পরবিরোধী, অযৌক্তিক ও অগ্রহণযোগ্য। ১২ অক্টোবর সংলাপে অংশ নিয়ে এসব বলেন বিএনপির মহাসচিব।
এ অবস্থায় রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, নির্বাচন কমিশন হয়তো অনিচ্ছাকৃতভাবে রোডম্যাপে এ ধরনের ভুল করেছে বা প্রিন্টিংয়ে ভুল করেছে। যদি রোডম্যাপ ভুল হয়ে থাকে তাহলে কমিশনকে আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠি দিয়ে বা রোডম্যাপটি শুদ্ধ করে পুনরায় প্রিন্ট করতে হবে। তারপর সব দলসহ সব স্টেকহোল্ডারদের কাছে পাঠাতে হবে। ডিসেম্বরের মধ্যে সব কাজ শেষ করার কথা লিখিতভাবে থাকলেও তা যথাসময়ে করতে না পারাকে ব্যর্থতাও বলছেন সংশ্লিষ্টরা।
অনেক কর্মকর্তা জানান, খসড়া রোডম্যাপে সীমানা পুনর্নির্ধারণের কাজ শেষ করার কথা এপ্রিলে লেখা ছিল। কিন্তু ভুল করে বা কেউ তা চেক না করায় করণিক ত্রুটিতে ডিসেম্বরে সীমানার গেজেট করার কথা রয়ে গেছে। এটা সংশোধন করা ছাড়া উপায় নেই। তা না হলে দলসহ সবাই ইসির এ লিখিত ডকুমেন্ট নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়াবে। তবে নির্বাচন কমিশনের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, রোডম্যাপের সীমানা নিয়ে টাইমলাইন ঠিক রয়েছে। হয়তো ডিসেম্বরের কাজ শেষ করার টার্গেট ছিল, কিন্তু তা যথাসময়ে শেষ করতে পারেনি। আরও কয়েক মাস লাগবে; এ ধরনের বিষয় ঘটে থাকে। রোডম্যাপ তো কাজ এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য।
শেয়ারবাজারনিউজ/মু