আর্থিক সক্ষমতার বাইরে ব্যবসা করতে পারবে না বীমা কোম্পানি
শেয়ারবাজার রিপোর্ট: আর্থিক সক্ষমতার বাইরে গিয়ে ব্যবসা সংগ্রহ করতে পারবে না বলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে প্রথমবারের মতো সাধারণ ও জীবন বীমা কোম্পানিগুলোর জন্য পৃথক সলভেন্সি মার্জিন প্রবিধানমালা প্রণয়ন করছে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)। এরই মধ্যে দুটি খসড়া প্রবিধানমালা তৈরি করে মতামতের জন্য বীমা খাতের প্রধান নির্বাহীদের কাছে পাঠিয়েছে সংস্থাটি।
আইডিআরএ সূত্রে জানা যায়, ‘লাইফ বীমাকারীর সলভেন্সি প্রবিধানমালা, ২০১৭’ এবং ‘নন-লাইফ বীমাকারীর সলভেন্সি প্রবিধানমালা, ২০১৭’-এর খসড়ার বিষয়ে বীমা কোম্পানিগুলোর পাশাপাশি এ খাতের বিশেষজ্ঞ এবং সাধারণ মানুষও তাদের মতামত প্রদান করতে পারবেন। এরই মধ্যে খসড়া প্রবিধানমালা দুটি আইডিআরএর ওয়েবসাইটে আপলোড করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের মতামত আমলে নিয়ে আন্তর্জাতিক নিয়মনীতি অনুসরণ করে এটি গেজেট আকারে প্রকাশ করা হবে। এরপর তা কার্যকর হবে।
সলভেন্সি মার্জিন প্রবিধানমালার খসড়ায় প্রত্যেক বীমা কোম্পানির সম্পদের মূল্যায়ন, দায়ের পরিমাণ ও সলভেন্সি মার্জিন নির্ধারিত ফরমে দাখিল করতে বলা হয়েছে। এছাড়া আর্থিক বিবরণী ও নিরীক্ষকের প্রতিবেদন প্রস্তুতকরণ প্রবিধানমালা-২০১১ অনুসারে বীমা কোম্পানির সব সম্পদ মূল্যায়নের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে এতে।
খসড়া প্রবিধানমালায় জীবন বীমা কোম্পানিগুলোর দায় মূল্যায়নের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, দায় মূল্যায়নের ক্ষেত্রে অ্যাকচুয়ারি কর্তৃক ব্যবহূত মুনাফার হার মূল্যায়ন হবে অংশগ্রহণকারী পলিসিগুলোর জন্য সর্বোচ্চ ৪ শতাংশ হারে। আর অংশগ্রহণে বিরত পলিসির (ল্যাপস) জন্য এ হার হবে সর্বোচ্চ ৭ শতাংশ। অর্থাৎ বীমা কোম্পানির মোট ঝুঁকি থেকে ৪ শতাংশ হারে এবং ল্যাপস পলিসি থেকে সর্বোচ্চ ৭ শতাংশ হারে তহবিল সংরক্ষণ করতে হবে। এতে কোম্পানি ভবিষ্যতে কোনো ধরনের সংকটে পড়লেও গ্রাহকরা সংরক্ষিত তহবিল থেকে বীমার টাকা ফেরত পাবেন ।
জীবন বীমা কোম্পানির সলভেন্সি মার্জিন প্রবিধানমালার খসড়ার ব্যাখ্যা অংশে বলা হয়েছে, অ্যাকচুরিয়াল তদন্ত সম্পর্কিত মূল্যায়ন তারিখ বলতে তদন্তের তারিখকেই বোঝায়। আর গাণিতিক মজুদ বলতে বীমা আইন ২০১০-এর ৩০ ধারা উপ-ধারা (৭)-এ উল্লিখিত দায়ের সর্বনিম্ন গাণিতিক মজুদকে বোঝানো হয়েছে।
গাণিতিক মজুদ নির্ধারণের পদ্ধতি সম্পর্কে বলা হয়েছে, প্রত্যেক চুক্তির জন্য আলাদাভাবে সম্ভাব্য মূল্যায়ন পদ্ধতিতে গাণিতিক মজুদ নির্ধারণ করতে হবে। মূল্যায়ন পদ্ধতিকে নিট প্রিমিয়াম পদ্ধতি বলা হবে।
খসড়ায় আরো বলা হয়েছে, মূল্যায়ন পদ্ধতির ক্ষেত্রে পলিসি দ্বারা নির্ধারিত সম্ভাব্য সব অনিশ্চয়তা ও যেকোনো ধরনের ব্যয় বিবেচনায় নিতে হবে। সব ধরনের বিষয়ের ওপর যুক্তিসঙ্গত অনুমানের ভিত্তিতে প্রত্যেক পলিসির অধীনে দায় নির্ধারণ করবে অ্যাকচুয়ারি।
এদিকে সাধারণ বীমা কোম্পানিগুলোর দায় নির্ধারণ পদ্ধতিতে ‘নন-লাইফ বীমাকারীর সলভেন্সি প্রবিধানমালা, ২০১৭’-এর খসড়ায় বলা হয়েছে, বীমা কোম্পানির যেসব দাবি অনাদায়ী রয়েছে, সেই পরিমাণ অর্থ তহবিল আকারে সংরক্ষণ করতে হবে। এছাড়া যেসব দাবি পরিশোধ হয়েছে কিন্তু আর্থিক প্রতিবেদনে লিপিবদ্ধ হয়নি, সেগুলো অ্যাকচুরিয়াল নীতিমালা বা সঠিক পরিসংখ্যানগত কৌশল অনুসরণ করে নির্ধারণ করতে হবে।
এ প্রবিধানমালায় আরো বলা হয়েছে, মেয়াদ উত্তীর্ণ না হওয়া ঝুঁকির বিপরীতে অগ্নিবীমা ব্যবসায় ৫০, বিবিধ বীমা ব্যবসায় ৫০, নৌবীমা ব্যবসায় ৫০ এবং নৌ-জাহাজের কাঠামো ব্যবসায় পূর্ববর্তী এক বছরে গৃহীত নিট প্রিমিয়ামের ১০০ শতাংশ সংরক্ষণ করতে হবে।
খসড়া প্রবিধানমালায় সাধারণ বীমা কোম্পানির অন্যান্য দায় হিসেবে যে বিষয়গুলো উল্লেখ করা হয়েছে তা হলো— মন্দ ও সন্দেহযুক্ত ঋণের বিপরীতে সঞ্চিতি, ঘোষিত বা সুপারিশকৃত ডিভিডেন্ড এবং পূর্ণ অনাদায়ী ডিভিডেন্ডের বিপরীতে সংরক্ষণ, করের বিপরীতে সঞ্চিতি, বিবিধ পাওনাদারের কাছে বকেয়ার পরিমাণ, অন্যদের কাছে বকেয়ার পরিমাণ, সঞ্চিত প্রিমিয়াম, ব্যতিক্রমী ক্ষতির জন্য সংরক্ষণ, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ঋণ, বীমা ব্যবসারত অন্য বীমা কোম্পানির কাছে বকেয়ার পরিমাণ ও কর্তৃপক্ষ নির্ধারিত অন্য যেকোনো দায়।
নীতিমালায় সাধারণ ও জীবন বীমা কোম্পানি উভয়েরই যেসব সম্পদ শূন্য মূল্য হিসেবে বিবেচিত হবে সেগুলো হলো— আদায়যোগ্য নয় এমন বিবিধ ঋণ, আসবাবপত্র, স্থাপিত জিনিসপত্র, ডেড-স্টক ও স্টেশনারি মালামাল, বিলম্বিত ও পূর্ব পরিশোধিত দায়, লাভ-ক্ষতির হিসাব সমন্বয় স্থিতি, পুনঃবীমাকারীর তিন মাস অধিককালের অনাদায়ী স্থিতি, কোম্পানি গঠনের প্রাথমিক ব্যয়, অনাদায়ী প্রিমিয়াম ও এজেন্টের সমন্বয় করা হয়নি এমন স্থিতি।
এ প্রসঙ্গে আইডিআরএর সদস্য গকুল চাঁদ দাস বলেন, লাইফ ও নন-লাইফ উভয় বীমা কোম্পানির জন্যই আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুসরণ করে সলভেন্সি মার্জিন প্রবিধানমালা-২০১৭-এর খসড়া তৈরি করা হয়েছে। এটি চূড়ান্ত হলে আর্থিক সক্ষমতার বাইরে গিয়ে লাগামহীনভাবে ব্যবসা নিতে পারবে না বীমা খাতের কোনো প্রতিষ্ঠান। কোম্পানিগুলোর দায়-দেনা ও সম্পদের পরিমাণও আলাদা করে দেখাতে হবে। গ্রাহকদের নিরাপত্তার জন্য দ্রুত প্রবিধানমালাটি চূড়ান্ত হওয়া জরুরি।
শেয়ারবাজারনিউজ/এম.আর