পরিচালকরা কোন ব্যাংক থেকে কতো টাকা ঋণ নিয়েছেন দেখে নিন
শেয়ারবাজার রিপোর্ট: ব্যাংকের পরিচালকেরাই ব্যাংক থেকে নিজ নামে কিংবা অন্য নামে ঋণ নিচ্ছেন। সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৭ এর পর্যন্ত ব্যাংকগুলো গ্রাহকদের ঋণ দিয়েছে সাত লাখ ৫২ হাজার ৭৩০ কোটি টাকা। এর মধ্যে ব্যাংকের পরিচালকরা ঋণ নিয়েছেন এক লাখ ৪৩ হাজার ৭০৭ কোটি টাকা। যা মোট ঋণের ১৯ শতাংশ।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, দেশের ব্যাংকগুলোর মোট পরিচালকের সংখ্যা প্রায় এক হাজার। এর মধ্যে সমঝোতা করে বড় অঙ্কের ঋণ নিয়েছেন শতাধিক পরিচালক। এরা একজন আরেক জনের ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছেন। এর বাইরে দুই ডজনের বেশি ব্যাংক থেকে পরিচালকরা আত্মীয়ের নামে আরও প্রায় দেড় লাখ কোটি টাকার ঋণ নিয়েছেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইসলামী ব্যাংক থেকে বিভিন্ন ব্যাংকের পরিচালকরা ঋণ নিয়েছেন ১১ হাজার ৯১০ কোটি টাকা, এক্সিম ব্যাংক থেকে নিয়েছেন ৯ হাজার ১০৬ কোটি টাকা।
পরিচালকরা জনতা ব্যাংক থেকে ৮ হাজার ৮১৭ কোটি টাকা, ন্যাশনাল ব্যাংক থেকে ৬ হাজার ৫৫০ কোটি টাকা, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক থেকে ৬ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়েছেন।
ব্যাংক এশিয়া থেকে ঋণ নিয়েছেন ৫ হাজার ৬২৩ কোটি টাকা। ঢাকা ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছেন ৫ হাজার ৫৩ কোটি টাকা। এর বাইরে আরও ৫০টি ব্যাংক থেকে পরিচালকরা প্রায় এক লাখ কোটি টাকার ঋণ নিয়েছেন। এর মধ্যে বিভিন্ন ব্যাংকের পরিচালকরা মেঘনা ব্যাংক থেকে ৪২৮ কোটি টাকা, মিডল্যান্ড ব্যাংক থেকে ৩৫৩ কোটি টাকা, মধুমতি ব্যাংক থেকে ৪০২ কোটি টাকা, এনআরবি ব্যাংক থেকে ১৭৪ কোটি টাকা, এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক থেকে ৯৪৯ কোটি টাকা, এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক থেকে ৬২১ কোটি টাকা, সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংক থেকে ৫৮৮ কোটি টাকা, দি ফারমার্স ব্যাংক থেকে ২০৮ কোটি টাকা, ইউনিয়ন ব্যাংক থেকে ৭০০ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসের শেষ দিন পর্যন্ত ২৯টি ব্যাংকের পরিচালকেরা নিজের ব্যাংক থেকেই ঋণ নিয়েছেন ৩৮৩ কোটি ২২ লাখ টাকা। এর মধ্যে মেঘনা ব্যাংকের কয়েকজন পরিচালক ওই ব্যাংক নিয়েছেন ১০ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। মিডল্যান্ড ব্যাংক থেকে নিয়েছেন ১৮ কোটি টাকা, মধুমতি ব্যাংক থেকে নিয়েছেন ৩ কোটি ৩০ লাখ টাকা, এনআরবি ব্যাংক থেকে নিয়েছেন ২ কোটি ১০ লাখ টাকা, সীমান্ত ব্যাংক থেকে নিয়েছেন ৩৭ কোটি ৬৯ লাখ টাকা, সাউথ বাংলা এগ্রিকালচারার ব্যাংক থেকে নিয়েছেন ৬৩ কোটি ৯১ লাখ টাকা।
নিজেদের ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়া ব্যাংকগুলো হলো— ন্যাশনাল ব্যাংক, ন্যাশনাল ক্রেডিট অ্যান্ড কমার্স ব্যাংক, ওয়ান ব্যাংক, প্রিমিয়ার ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক, পূবালী ব্যাংক, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক, এবি ব্যাংক, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক, দি সিটি ব্যাংক, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক ও উত্তরা ব্যাংক, আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া, ব্র্যাক ব্যাংক, ঢাকা ব্যাংক, ডাচ-বাংলা ব্যাংক, ইস্টার্ন ব্যাংক, যমুনা ব্যাংক, মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক, সাউথইস্ট ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী, কোনও পরিচালক তার মোট শেয়ারের ৫০ শতাংশের বেশি ঋণ নিজ ব্যাংক থেকে নিতে পারবেন না। এ কারণে পরিচালকরা নিজ ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়া কমিয়ে অন্য ব্যাংক থেকে বেশি পরিমাণ ঋণ নেন।
শেয়ারবাজারনিউজ/আ