ভারত, নেদারল্যান্ড ও নরওয়েতে ৮টি জাহাজ রপ্তানি করবে ওয়েস্টার্ন মেরিন শীপইয়ার্ড
শেয়ারবাজার রিপোর্ট: বিগত দশ বছরের বাংলাদেশ থেকে ৪২টি জাহাজ রপ্তানীর মধ্য ৩১টি জাহাজ নির্মান করেছে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত প্রকৌশল খাতের কোম্পানি ওয়েস্টার্ন মেরিন শীপইয়ার্ড। ৩১টি জাহাজ নিমার্নের মাধ্যমে কোম্পানিটি ১৫০ মিলিয়ন ডলার অর্জন করেছে। বর্তমানে কোম্পানির আরো ৩৮টি জাহাজ নির্মানাধীন অবস্থায় রয়েছে। এর মধ্যে ৩০টি জাহাজ দেশীয় চাহিদা মেটানোর জন্য ও ৮টি ভারত, নেদারল্যান্ড ও নরওয়েতে রপ্তানি করা হবে।
আজ শনিবার বিকেলে রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁ হোটেলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য তুলে ধরেন কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. সাখাওয়াত হোসেন। সম্মেলনে বাংলাদেশের জাহাজ নির্মাণ শিল্পের সম্ভাবনা নিয়ে একটি তথ্যচিত্র উপস্থাপন করেন তিনি।
সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ২০০০ সালে ওয়েস্টার্ন মেরিন কিছু সংখ্যক মেরিনারকে নিয়ে যাত্রা শুরু করে। প্রতিষ্ঠানটি দেশের অভ্যন্তরীণ এবং রপ্তানির জন্য মোট ১৪৩টি জাহাজ নির্মাণ করেছে। এর মধ্যে ৩১টি জাহাজ বিশ্বের ১২টি দেশে রপ্তানি করা হয়েছে। বর্তমানে ৩৮টি জাহাজ নির্মাণাধীন রয়েছে। এর মধ্যে ৮টি জাহাজ ভারত, নেদারল্যান্ড ও নরওয়েতে রপ্তানি করা হবে। বাকিগুলো দেশের চাহিদা পুরণে নির্মিত হচ্ছে।
অর্থনৈতিকে ওয়েস্টার্ন মেরিন অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে বলে উল্লেখ্য করে তিনি বলেন, বিশ্বমন্দা থেকে বেরিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে দেশ। আমরাও ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছি। জাহাজ একটি ভারী শিল্প। আন্তর্জাতিক শিপে ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ড পরিচিতি লাভ করেছে। বিশ্বকে দেখিয়েছি বাংলাদেশও পারে। বিশ্বের জাহাজ শিল্পের বাজারে উদীয়মান প্রতিষ্ঠান হিসেবে দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ড।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, সারা বিশ্বে মাঝারি ও ছোট জাহাজ নির্মাণের ২০০ বিলিয়ন ইউ.এস ডলারের বাজার রয়েছে যা থেকে বাংলাদেশের প্রায় ০১ বিলিয়ন ইউ.এস ডলারের জাহাজ রফতানি নিশ্চিত করতে পারে, যেখানে ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ড বাংলাদেশের মোট সম্ভাব্য অর্জনের ২৫% অর্থাৎ ২৫০ মিলিয়ন ইউ.এস ডলারের লক্ষমাত্রা স্থির করতে পারে। তাছাড়াও বিজনেস ওয়ার, বিশ্বের অর্থনৈতিক তথ্য বিশ্লেষণকারী একটি প্রতিষ্ঠান এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৬ সাল নাগাদ সারাবিশ্বে ৬৫০.৮৩ বিলিয়ন ইউ.এস ডলার নতুন জাহাজ নির্মাণে ব্যয় করা হবে, যার মধ্যে বাংলাদেশ তার জাহাজ নির্মাণের অভিজ্ঞতা ও জাহাজ নির্মাণের ঐতিহ্যকে পুঁজি করে বিলিয়ন ডলারের এই সুযোগকে কাজে লাগাতে পারে। তাছাড়া এই শিল্প দেশের অভ্যন্তরীন চাহিদার পুরোটাই যোগান দিয়ে যাচ্ছে। প্রায় ০১ বিলিয়ন ইউ.এস ডলারের বাংলাদেশের আভ্যন্তরীন জাহাজ নির্মাণের চাহিদার প্রায় ০১ বিলিয়ন ইউ.এস ডলার, যার মধ্যে ওয়ের্স্টান মেরিন এ যাবৎ ১১২ টি জাহাজ নির্মাণ করে দেশীয় চাহিদা পূরণে গুরুত্বপুর্ণ ভুমিকা পালন করেছে।
সংবাদ সম্মেলনে আরো জানানো হয়, এলএনজি জাহাজ নির্মানের একটি নতুন বাজার সৃষ্টি হয়েছে। যা বাংলাদেশের জন্য নতুন সম্ভাবনার দ্বার উম্মোচন করেছে। সেখানে ওয়েস্টার্ন মেরিন দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার প্রথম শিপইয়ার্ড হিসেবে এলএনজি বাংকার জাহাজ নির্মাণের কাজ নিশ্চিত করেছে।
রপ্তানি উন্নয়ন বুরের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে বাংলাদেশ প্রথম ৫ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) জাহাজ নির্মাণ শিল্প হতে ৩০.৪৫ মিলিয়ন ডলার আয় করেছে, যা গত অর্থ বছরের একই সময়ের চেয়ে ৪৬১ শতাংশ কম, অথ্যাৎ ঐ সময়ে ৫.৪৩ মিলিয়ন আয় হয়েছিল বলে সংবাদ সম্মেলনে তুলে ধরা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন কোম্পানির চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম, উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল মবিন, পরিচালক ক্যাপ্টেন সোহেল হাসান, স্বতন্ত্র পরিচালক ওয়ালি-উল-মারুফ মতিন উপস্থিত ছিলেন।
জাহাজ নির্মানে সরকারের কোন ধরনে সাপোর্ট চান- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে সাইফুল ইসলাম বলেন, জাহাজ শিল্প একটি ভারি শিল্প। এর ফলাফল পেতে দীর্ঘদিন অপেক্ষা করতে হয়। এটি পালং শাক নয় যে লাগালাম আর কিছুদিন পরে তুলে বিক্রি করলাম। এটা অনেকটা নারকেল গাছের মতো লাগানেোর ৭-৮ বছর পর ফল দেয়; তবে তা দীর্ঘসময়ের জন্য। এ উদাহরণ টেনে জাহাজ শিল্পের বিকাশে সরকারের পলিসি সহায়তা চান যাতে দীর্ঘমেয়াদে ঋণ সু্বিধা পাওয়া যায়।
উল্লেখ্য, কার ফেরি, যাত্রীবাহী জাহাজ, মাছ ধরার নৌকা, ট্রলার, বার্জ, টাগবোট তৈরিতে দক্ষতা ও সুনাম রয়েছে ওয়েস্টার্ন মেরিনের। কোম্পানিটি এরই মধ্যে ফরাসী ক্লাসিফিকেশন সোসাইটি ব্যুরো ভারিটাস বা বিভি থেকে আইএসও এবং ওএইচএসএএস সনদ অর্জন করেছে। দেশের জাহাজ নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ওয়েস্টার্ন মেরিনই সর্বপ্রথম এ ধরনের সার্টিফিকেট অর্জন করেছে। এতে ইয়ার্ডে ইন্টিগ্রেটেড ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম বা আইএমএস নিশ্চিত হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি জাতীয় রফতানি ট্রফি পেয়েছে। এছাড়া নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের ন্যাশনাল মেরিটাইম অ্যাওয়ার্ডসহ দেশি-বিদেশি নানা পুরস্কার ও সনদ অর্জন করেছে।
শেয়ারবাজারনিউজ/এম.আর