এডি রেশিও না কমাতে বাংলাদেশ ব্যাংককে চিঠি: এক বছর সময় চায় এবিবি
শেয়ারবাজার রিপোর্ট: আসন্ন মুদ্রানীতিতে ঋণের লাগাম টেনে ধরতে অ্যাডভান্স ডিপোজিট রেশিও বা এডিআর কমানোর উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আর এই এডি রেশিও কমানো আতঙ্কে পুঁজিবাজারে পড়েছে নেতিবাচক প্রভাব। তবে বাংলাদেশ ব্যাংককে এ পরিকল্পনা থেকে সরে আসতে বিভিন্ন যুক্তি উপস্থাপন করে চিঠি দিয়েছে ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি)।
সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংককে পাঠানো এ সংক্রান্ত চিঠিতে বলা হয়েছে, নির্বাচনী বছরে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হলে তাতে সুদহার ও মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাবে। এমনকি নতুন ঋণসীমা নির্ধারণ করা হলে তা সমন্বয় করতে বাড়তি ২০-২৫ হাজার কোটি টাকা নতুন আমানত প্রয়োজন হবে। ঋণের হার কমানো হলে চলতি মূলধন, সাধারণ ঋণ বিতরণ, আমদানি বিল ও বিভিন্ন প্রকল্পে অর্থায়ন অব্যাহত রাখা চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়বে। ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প খাতের পাশাপাশি করপোরেট উদ্যোক্তারা তহবিল সংকটে পড়বে। তাই নির্বাচনী বছরে এমন পরিস্থিতি মোকাবিলা করা ব্যাংকগুলোর জন্য কঠিন হবে। এ অবস্থায় নতুন ঋণসীমা নীতিমালা করা হলে তা বাস্তবায়নে এক বছর সময় চেয়েছে এবিবি।
উল্লেখ্য, গত ৩ জানুয়ারি সব ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত ব্যাংকার্স সভায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে জানানো হয়, সর্বশেষ মুদ্রানীতিতে ঘোষিত লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে বেসরকারি খাতের ঋণপ্রবাহ। মুদ্রানীতিতে লক্ষ্য ছিল এ খাতে ঋণপ্রবাহ ১৬ দশমিক ২ শতাংশে সীমাবদ্ধ থাকবে, নভেম্বরেই তা ১৯ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ হয়ে গেছে। তাই ঋণের সদ্ব্যবহার নিশ্চিত করতে ঋণ আমানত অনুপাত (অ্যাডভান্স ডিপোজিট রেশিও বা এডিআর) কমিয়ে আনা হবে বলে ওই সভায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে জানানো হয়। বর্তমানে প্রচলিত ব্যাংকগুলোর জন্য ঋণ আমানত অনুপাত ৮৫ শতাংশ ও ইসলামি ধারার ব্যাংকগুলোর জন্য ৯০ শতাংশ।
আর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে এমন সিদ্ধান্ত নেয়ার পর থেকেই পুঁজিবাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে থাকে। বিনিয়োগকারীদের মনে নতুন আতঙ্কের সৃষ্টি হয়। এক পর্যায়ে ব্যাংকগুলোর সংগঠনের পক্ষ থেকে বলা হয়, এডি রেশিও কমানো হলে উন্নয়ন ব্যাহত হবে। তাদের পক্ষ থেকে বলা হয়, এটা নির্বাচনী বছর, তাই উন্নয়নকাজ বেশি হবে। ঠিকাদারসহ অনেকের ঋণের চাহিদাও বাড়বে। আর উন্নয়ন না হলে দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধিও বাধাগ্রস্ত হবে। এ কারণে হঠাৎ করে ঋণ আমানত অনুপাত কমিয়ে আনার সিদ্ধান্ত আসবে না।
এবিবি বলেছে, ‘আমরা উদ্বিগ্ন যে নিকট ভবিষ্যতে ঋণ আমানত অনুপাত কমিয়ে ৮০ দশমিক ৫ শতাংশ বা এর আশপাশে নামিয়ে আনা হবে। এমনটা হলে ব্যাংক খাতে অতিরিক্ত ২০ থেকে ২৫ হাজার কোটি টাকার আমানতের প্রয়োজন হবে। আমরা আরও উদ্বিগ্ন যে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নতুন নীতিমালা বাস্তবায়িত হলে ব্যাংকগুলোর আমানতের সুদের হার বাড়বে। কারণ, বাড়তি আমানত সংগ্রহের জন্য ব্যাংকগুলোকে আমানতের সুদ বাড়িয়ে দিতে হবে। তাতে শুধু এক ব্যাংকের আমানত আরেক ব্যাংকে চলে যাবে, নতুন আমানত আসবে না। কারণ, যে ব্যাংক আমানতের সুদ বাড়াবে, বিদ্যমান আমানতকারীরা অন্য ব্যাংক থেকে অর্থ তুলে সেই ব্যাংকে খাটাবে। আবার আমানতের সুদ বাড়লে ব্যাংকগুলো ঋণের সুদও বাড়িয়ে দেবে, যা মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির ক্ষেত্রে চাপ সৃষ্টি করবে।’
এ অবস্থায় নতুন ঋণসীমা নীতিমালা করা হলে তা বাস্তবায়নে এক বছর সময় চেয়েছে এবিবি। সংগঠনটি বলেছে, যাদের ঋণসীমা বেশি, তাদের ক্যামেলস রেটিং নেতিবাচক করা যেতে পারে। এ ছাড়া ব্যাংকের মূলধনের ভিত্তি বাড়াতে টায়ার-২-এর আওতায় সাব-অর্ডিনেটেড বন্ডের যে তহবিল রয়েছে, সেটা ঋণসীমা হার হিসেবে গণ্য করার দাবি জানিয়েছে এবিবি। একই সঙ্গে অব ব্যালেন্সশিট আইটেমের বিপরীতে ব্যাংকের যে ১ শতাংশ সঞ্চিতি সংরক্ষণ করতে হয়, তাতেও ছাড় চেয়েছে এবিবি।
শেয়ারবাজারনিউজ/ম.সা