আজ: শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ইং, ৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৮ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

২৯ মার্চ ২০১৮, বৃহস্পতিবার |

kidarkar

মেয়েদের ক্যান্সারের হার বেশি কেন?

শেয়ারবাজার ডেস্ক: চিকিৎসা বিষয়ক জার্নাল ল্যানচেট এর এক গবেষণা বলছে, ভারতে পুরুষদের তুলনায় মেয়েদের ক্যান্সার ধরা পড়ছে বেশি। বিশ্বজুড়ে নারীদের তুলনায় পুরুষদের ক্যান্সার আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা ২৫ শতাংশ বেশি। সেখানে ভারতে উল্টো চিত্র । তবে ভারতে মেয়েদের তুলনায় পুরুষরা ক্যান্সারে মারা যাচ্ছেন বেশি।

এক প্রতিবেদনে কারণ হিসাবে বলা হয়েছে, ভারতে মেয়েদের মধ্যে যেসব ক্যান্সার দেখা যায় তার ৭০% এই স্তন ক্যান্সার, সার্ভিকাল (গর্ভাশয়ের), ডিম্বাশয় এবং জরায়ু ক্যান্সারে আক্রান্তের ঘটনা দেখা যায়। সেসব ক্ষেত্রে চিকিৎসার মাধ্যমে বেঁচে থাকা সম্ভব। আর দেশটির পুরুষরা মূলত ফুসফুস ও মুখের ক্যান্সারে ভোগে। দুটোই ধূমপান এবং তামাকের ব্যবহারের সাথে সম্পর্কিত এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই প্রাণ-ঘাতী এবং বেঁচে থাকার সম্ভাবনা ক্ষীণ।

বলা হচ্ছে, ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে প্রতি বছর প্রায় ৯০ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়। ভারতে মহিলাদের মধ্যে এখন সবচেয়ে বেশি দেখা যায় স্তন ক্যান্সারের সমস্যা যা সেখানকার নারীদের ২৭% ক্যান্সারের জন্য দায়ী। গত কয়েক বছরে যার হার বেড়েছে। মহিলাদের স্তন ও ডিম্বাশয়ে ক্যান্সারের ঘটনাগুলো বেশি দেখা যা ৪৫ থেকে ৫০ বছরের দিকে । উচ্চ আয়ের দেশগুলোতে তা ষাট বছরের দিকে দেখা যায়। জিনগত এবং পরিবেশগত কারণে সেটি হতে পারে।

ক্যান্সার অনেক সময় জিনগত রোগ হিসেবে হয়ে থাকে। যে কারণে অনেক পরিবারে একাধিক মানুষের মাঝে স্তন ক্যান্সার দেখা যাচ্ছে। কিন্তু ভারতে যে স্তন ক্যান্সার হচ্ছে তার ১০ শতাংশের নিচে হচ্ছে উত্তরাধিকার সূত্রে । ফলে মহিলাদের বেশিরভাগ ক্যান্সারের কারণ অনুসন্ধানে জিনগত স্ক্রিনিং খুব একটা কাজে আসবেনা।

তারপর অঞ্চলগত বৈচিত্র্য রয়েছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় স্তন ক্যান্সারে ঘটনা বেশি দেখা যাচ্ছে রাজধানী দিল্লিতে। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা এর কারণ বলতে পারছেন না।
তারা শুধুমাত্র সচেতনতা বৃদ্ধির এবং রোগ পরীক্ষার হার বৃদ্ধির বিষয়ে ধারণা দিচ্ছেন।

ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব ক্যান্সার প্রিভেনশন অ্যান্ড রিসার্চ-এর পরিচালক ও গবেষক ডক্টর রবি মেহরোত্রা বিশ্বাস করেন, স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকির কারণগুলি চর্বিযুক্ত খাবার, স্থূলতা, দেরিতে বিয়ে, কম সন্তান সংখ্যা, প্রসবের পর পর্যাপ্ত বুকের দুধ না খাওয়ানো -এসবই দ্রুত নগরায়নের দেশটিতে বেশি করে এই ধরনের ঘটনার কারণ।

তিনি আরও বলেন, অনেক নারীর ক্ষেত্রেই ক্যান্সার দেরিতে ধরা পড়ে সচেতনতার অভাবে এবং চিকিৎসকের কাছে যেতে অনিচ্ছার কারণে। কিন্তু আমেরিকাতে ৮০% স্তন ক্যান্সার প্রাথমিক এবং দ্বিতীয় স্তরেরই নির্ণয় করা সম্ভব হয়। অন্যদিকে ভারতে বেশিরভাগ স্তন ক্যান্সার ধরা পড়ে তৃতীয় এবং চতুর্থ ধাপে গিয়ে।

ক্যান্সার বিশেষজ্ঞরা বলেন, ভারতে স্তন ক্যান্সারে আক্রান্তরা পাঁচবছর পর্যন্ত বেঁচে থাকেন। যেটি সহজে মোকাবিলা করা সম্ভব সেটি হচ্ছে সার্ভিকাল ক্যান্সার মূলত হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস বা এইচপিভি থেকে সৃষ্ট এবং ভারতে মহিলাদের ২৩% ক্যান্সারের জন্য দায়ী।

২০০৮ সাল থেকে ১১-১৩ বছরের মেয়েদের এইচপিভি ভাইরাসের টিকা কর্মসূচি শুরু হয়। বিশ্বজুড়েই এই ভাইরাসের দ্বারা ক্যান্সার আক্রান্তের ঘটনা কমে এসেছে। ভারতেও এখন দিল্লি এবং পাঞ্জাবেই কেবল এইচপিভি ভাইরাসের টিকাদান কর্মসূচি বহাল রয়েছে। তবে ভারতে এখনো নারীদের ক্ষেত্রে সার্ভিকাল ক্যান্সার বা গর্ভাশয়ের ক্যান্সার দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে। ক্যান্সারে আক্রান্ত মহিলাদের এক-চতুর্থাংশের মৃত্যুর কারণ এটি।

‘এটি সব ধরনের ক্যান্সারের মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রতিরোধ যোগ্য। গর্ভাশয়ের ক্যান্সারে কোনও মহিলার মৃত্যু কাম্য নয়।’

সেজন্য প্রজনন স্বাস্থ্য বিষয়ে আরও খোলামেলা এবং জোরালো-ভাবে কথাবার্তা বলতে হবে। সেইসাথে এইচপিভি-কেও সরকারের বিনামূল্যে গণটিকা কর্মসূচির আওতায় আনতে হবে । ল্যানচেট ক্যান্সার বিষয়ে ভারতের পাঞ্জাবের নারীদের নিয়ে এবং যুক্তরাজ্যে বসবাসকারী পাঞ্জাবিদের নিয়ে সমান্তরালভাবে গবেষণারও পরামর্শ দিয়েছে।

এর ফলে ক্যান্সারের ক্ষেত্রে জিনগত এবং পরিবেশগত প্রভাব নিয়ে গবেষণার সুযোগ তৈরি হবে বলে তারা মনে করছে। ১৯৭৬ সালে ক্যান্সার নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি নিয়েছিল যে দেশ তারা ক্যান্সার প্রতিরোধে জিডিপির মাত্র ১.২% শতাংশ ব্যয় করেছে। তবে এবছর সরকার বিনামূল্যে মুখ, স্তন এবং গর্ভাশয়ের ক্যান্সার শনাক্তকরণ কর্মসূচি নেয়া হচ্ছে দেশের ৭০০ জেলায়।

ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ ড: মেহরোত্রা বলছেন, কিছু অগ্রগতি হচ্ছে। তবে অনেক প্রশ্নের সমাধান পেতে এখনো লম্বা পথ পেরোনো বাকি।

শেয়ারবাজারনিউজ/মু

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published.

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.