কোম্পানিগুলো ডিভিডেন্ড প্রদানে নিরুৎসাহিত হবে: বিনিয়োগকারীদের ক্ষতির আশঙ্কা
শেয়ারবাজার রিপোর্ট: ঘোষিত বাজেটে তালিকাভুক্ত কোম্পানির লভ্যাংশ ঘোষণার উপর প্রনোদনা প্রত্যাহার করা হয়েছে। বিদ্যমান আইন অনুযায়ী পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানীগুলো যদি ১০ শতাংশের কম লভ্যাংশ ঘোষণা করে অথবা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) কর্তৃক নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ঘোষিত লভ্যাংশ প্রদান না করে, তাহলে উক্ত তালিকাভুক্ত কোম্পানীর করহার হবে ৩৫%। অন্যদিকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানীসমূহ ৩০% এর চেয়ে বেশী লভ্যাংশ প্রদান করলে ১০% হারে কর রেয়াত প্রদানের বিধান ছিল। এবারের বাজেটে এই কর রেয়াত প্রত্যাহার করা হয়েছে । এতে করে তালিকাভুক্ত কোম্পানীগুলো লভ্যাংশ প্রদানে নিরুৎসাহিত হবে এবং বিনিয়োগকারীরা ক্ষতির সম্মুখীন হবেন। তাই এই বিধান পুনঃপ্রবর্তনের করা জরুরি বলে মনে করে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই)। সোমবার অনুষ্ঠিত বাজেট পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে সিএসইর পক্ষ থেকে এ কথা জানানো হয়।
সিএসইর পক্ষ থেকে বলা হয়, স্বচ্ছ ও স্থিতিশীল পুঁজিবাজারের জন্য একটি শক্তিশালী স্টক এক্সচেঞ্জ হিসেবে যে বিষয়গুলো পুন:বির্বেচনা জরুরি সেগুলো হলো: ১. স্টক এক্সচেঞ্জের কর অবকাশ: কৌশলী বিনিয়োগকারী আকর্ষণকরা-সহ স্টক এক্সচেঞ্জ এর কারিগরি এবং অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য মূলধন পুনঃবিনিয়োগের প্রয়োজন হবে। এই কারনে আমরা ক্রমহ্রাসমানহারে কর অবকাশের পরিবর্তে ৫ বছর মেয়াদী কর অব্যাহতি প্রদানের জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি।
২. স্টক এক্সচেঞ্জ সদস্যদের উপর আয়কর: বিগত কয়েক বছর যাবত পুঁজিবাজারের মন্দা পরিস্থিতির কারনে স্টক এক্সচেঞ্জ লেনদেন উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পেয়েছে। তাই স্টক এক্সচেঞ্জ এর সদস্য/ট্রেকহোল্ডারদের নিকট থেকে উৎস আয়কর কর্তনের হার পুনরায় পূর্ববর্তী ০.০১৫ শতাংশে পুনঃনির্ধারণ করে এরূপে কর্তিত করকে ব্রোকারেজ ব্যবসা হতে উদ্ভূত সমূদয় আয়ের উপর চূড়ান্ত কর দায় বিবেচনা করার জন্য বিনীত অনুরোধ জানাচ্ছি।
৩. লভ্যাংশ: বিনিয়োগকারীর ক্ষেত্রে লভ্যাংশ আয়ের জন্য আমরা করমুক্ত আয়ের সীমা ২০ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫০ হাজার টাকায় উন্নীত করার প্রস্তাব করেছিলাম।প্রস্তাবিত বাজেটে এই সীমা ২৫ হাজার টাকায় উন্নীত করার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। করমুক্ত লভ্যাংশের সীমা ৫০ হাজার টাকায় উন্নীত করা হলে তা বিদ্যমান বাজার পরিস্থিতিতে বিনিয়োগকারীদের ক্ষতি পোষানোর ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হতে পারত। একই সাথে তা দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগের প্রণোদনা হিসেবে কাজ করত। তাই আমরা কর মুক্ত লভ্যাংশের সীমা ৫০ হাজার টাকায় উন্নীত করার প্রস্তাব পুন ব্যক্ত করছি।
এখানে উল্লেখ্য,একজন ব্যক্তিশ্রেণীর বিনিয়োগকারী মোট লভ্যাংশ আয় সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় তথ্য না থাকায় তালিকাভুক্ত কোম্পানিসমূহ লভ্যাংশ আয়ের উপর ১০ শতাংশ হারে উৎসে কর কর্তন করে থাকে {ধারাঃ৫৪ (ও)}। এর ফলে ব্যক্তি শ্রেণীর ক্ষুদ্রবিনিয়োগকারীগন করমুক্ত লভ্যাংশ আয়ের সুবিধা পান না। তাই আমরা এই উদ্দেশে সঠিক পন্থা নিরূপণের বিধান প্রত্যাশা করছি।
৪. SME’র তালিকাভুক্তি করন: দেশে শিল্পায়নের মাধ্যমে উৎপাদন বৃদ্ধি ও নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য পুঁজিবাজারে SME-এর তালিকাভুক্তি উৎসাহিত করার লক্ষ্যে ক্ষুদ্র ও মাঝারি কোম্পানিসমূহকে পৃথক স্কিমের আওতায় এনে এদের জন্য নিম্নোক্ত ভাবে কর্পোরেট কর হার নির্ধারণ করা যেতে পারে :
প্রথম ৫০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত আয় | ০% |
পরবর্তী ৫০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত আয় | ১৫% |
তদুর্ধ আয়ের উপর | ২৫% |
৫. তালিকাভুক্ত কোম্পানির লভ্যাংশ ঘোষণার উপর প্রনোদনা: ঘোষিত বাজেটে তালিকাভূক্ত কোম্পানির লভ্যাংশ ঘোষণার উপর প্রনোদনা প্রত্যাহার করা হয়েছে। বিদ্যমান আইন অনুযায়ী পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানীসমূহ যদি ১০% এর কম লভ্যাংশ ঘোষণা করে অথবা BSEC কর্তৃক নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ঘোষিত লভ্যাংশ প্রদান না করে, তাহলে উক্ত তালিকাভুক্ত কোম্পানীর করহার হবে ৩৫%। অন্যদিকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানীসমূহ ৩০% এর চেয়ে বেশী লভ্যাংশ প্রদান করলে ১০% হারে কর রেয়াত প্রদানের বিধান ছিল। এবারের বাজেটে এই কর রেয়াত প্রত্যাহার করা হয়েছে । এতে করে তালিকাভুক্ত কোম্পানি সমূহ লভ্যাংশ প্রদানে নিরুৎসাহিত হবে এবং বিনিয়োগকারীগণ ক্ষতির সম্মুখীন হবেন। তাই আমরা এই বিধান পুনঃপ্রবর্তনের জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি।
শেয়ারবাজারনিউজ/সা