অপমান ও শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত: ১০ দিন লড়াইয়ের পর মরেই গেলেন কৃষক মোসলেম
জাতীয় ডেস্ক: অবৈধ খোঁয়াড় মালিকের দাবিকৃত অন্যায্য অর্থ পরিশোধ করতে না পেরে অপমান ও শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত হয়ে গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন কৃষক মোসলেম শেখ (৬০)।
গুরুতর অবস্থায় প্রতিবেশীরা তাকে উদ্ধার করে মাগুরা ২৫০ শয্যা হাসপাতালে ভর্তি করেন। ১০ দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে আজ শনিবার সকাল পৌনে ১০টায় মারা যান তিনি।
মাগুরা হাসপাতালের জরুরী বিভাগের চিকিৎসক ডা. অমর প্রসাদ বিশ্বাস মৃত্যুর ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
কৃষক মোসলেম শেখের বাড়ি মাগুরা সদর উপজেলার ধর্মদাহ গ্রামে।
তার স্ত্রী আমেন খাতুন জানান, ক্ষেতের ফসল নষ্ট করার অভিযোগে তারই প্রতিবেশী নজরুল শেখ গত ১০ মার্চ দুপুরে দুটি বাচ্চাসহ তাদের একটি রামছাগল কালাম শেখের খোঁয়াড়ে দিয়ে আসেন। খবর পেয়ে তার স্বামী ছাগল ফিরিয়ে আনতে গেলে কালাম শেখ ১ হাজার টাকা দাবি করেন। বাধ্য হয়ে গ্রামের কয়েকজনের কাছ থেকে ৩শ টাকা ধার করে আবার সেখানে যান। কিন্তু পুরো টাকা নিয়ে যেতে না পারায় খোঁয়াড় মালিক তার স্বামীকে গলাধাক্কা দিয়ে মারধর করে ফিরিয়ে দিয়েছেন। এ অপমানে সেখান থেকে ফিরে মোসলেম শেখ বাড়ির পেছনের বাগানে গলায় ফাঁস নেন।
প্রতিবেশীরা তাকে উদ্ধারের পর মাগুরা ২৫০ শয্যা হাসপাতালে ভর্তি করেন। অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় ওই দিনই তাকে ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। সেখান থেকে তারাও রেফার্ড করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে পাঠায়। কিন্তু আর্থিক সঙ্গতি না থাকায় আমেনা খাতুন স্বামীকে নিয়ে ফিরে আসেন মাগুরায়। তিনি মাগুরা ২৫০ শয্যা হাসপাতালের বারান্দায় চিকিৎসাধীন ছিলেন। আজ (শনিবার) সকালে তিনি মারা যান।
এ বিষয়ে মাগুরা ২৫০ শয্যা হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক সফিউর রহমান বলেন, তার শারীরিক অবস্থা খুবই আশঙ্কাজনক ছিল।
এদিকে কালাম শেখের খোঁয়াড় কার্যক্রমের বিষয়ে খোঁজ নিতে স্থানীয় শত্রুজিতপুর ইউনিয়ন পরিষদে গেলে দায়িত্বরত সচিব আবদুস সালাম জানান, খোঁয়াড় নিয়ে অনেক বাদানুবাদের ঘটনা ঘটায় ওই গ্রামে কাউকে কোনো ইজারা দেওয়া হয়নি। অথচ অবৈধভাবে কালাম শেখসহ একটি সংঘবদ্ধ চক্র অন্যের গবাদিপশু আটকে রেখে জোরপূর্বক ইচ্ছামাফিক অর্থ আদায় করে যাচ্ছে বলে গ্রামবাসী অভিযোগ করেছেন।
বিষয়টি নিয়ে ধর্মদাহ গ্রামের অনুমোদনবিহীন খোঁয়াড় মালিক কালাম শেখের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি মোসলেম শেখকে লাঞ্ছিত ও মারধর করার বিষয়টি অস্বীকার করেন। আর সরকারি অনুমোদন না থাকলেও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মেম্বারদের সহযোগিতায় খোঁয়াড়ের কার্যক্রম চলছে বলে তিনি জানান।
তবে তার বক্তব্য অস্বীকার করেছেন শত্রুজিতপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট সনজিত বিশ্বাস।
এদিকে সহায়-সম্বলহীন কৃষকের স্ত্রী আমেনা খাতুন স্বামীর এমন পরিস্থিতির বিচার চেয়ে ১৭ মার্চ মাগুরা সদর থানায় একটি অভিযোগ দিলেও পুলিশি তৎপরতা না থাকায় তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
মাগুরা সদর থানার ওসি জয়নাল আবেদিন আমেনা খাতুনের লিখিত অভিযোগ পাওয়ার কথা স্বীকার করেছেন। ময়না তদন্তের জন্য লাশ মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তিনি জানিয়েছেন।