আজ: শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪ইং, ২০শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২২শে শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

০১ ফেব্রুয়ারী ২০২৩, বুধবার |

kidarkar

আদানি কেলেঙ্কারি : আতঙ্কে ভারতীয় শেয়ার ছাড়ছেন বিদেশিরা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : আদানি গ্রুপের শেয়ারবাজার কারসাজি, অর্থপাচার আর কর ফাঁকি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক শেয়ারবাজার বিশ্লেষক সংস্থা হিনডেনবার্গ রিসার্চের একটি বিশেষ প্রতিবেদন হুলুস্থুল ফেলে দিয়েছে বিশ্বজুড়ে। এর প্রভাব পড়েছে ভারতের শেয়ার মার্কেটেও। দেশটির শেয়ারবাজার ছেড়ে যাচ্ছেন বিদেশি বিনিয়োগকারীরা।

ব্লুমবার্গ বলছে, আদানি গ্রুপ নিয়ে হিনডেনবার্গ রিসার্চের প্রতিবেদনের পর ভারতের শেয়ারবাজারে বিপর্যয়কর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। গত দুই দিনে বিপুলসংখ্যক শেয়ার ছেড়ে দিয়েছেন বিদেশি বিনিয়োগকারীরা।বৈশ্বিক শেয়ার প্রতিষ্ঠানগুলো গত শুক্রবার ও সোমবার (শনিবার ও রবিবার ভারতীয় শেয়ার মার্কেটে বেচাকেনা বন্ধ ছিল) ভারতীয় শেয়ার বিক্রি করে স্টক থেকে ১ দশমিক ৪৫ বিলিয়ন ডলার তুলে নিয়েছে। গত ১৭ জুনের পর এটিই সবচেয়ে বড় শেয়ার বিক্রির ঘটনা। এমনটিই বলছে ব্লুমবার্গ।

এদিকে হিনডেনবার্গ রিসার্চের বিশেষ প্রতিবেদনের পর শেয়ারবাজারে আদানি গ্রুপের প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যাপক দরপতনের পাশাপাশি ভারতের ব্যাংক খাতে দেখা দিয়েছে চরম উদ্বেগ। কারণ ব্যাংকগুলোতে প্রতিষ্ঠানটির বিপুল অঙ্কের ঋণ রয়েছে।আলোচিত এই আদানি গ্রুপের সঙ্গে বিদ্যুৎ সরবরাহের চুক্তি রয়েছে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের। আগামী মার্চ মাসে এ বিদ্যুৎ আসার কথা রয়েছে। হিনডেনবার্গ রিসার্চের প্রতিবেদনের জেরে আদানি গ্রুপের মূলধন কমে যাওয়ায় নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বাংলাদেশে এ বিদ্যুৎ সরবরাহ নিয়ে এক ধরনের শঙ্কা তৈরি হয়েছে। কারণ কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটি উৎপাদনে এলে জ্বালানির ব্যয় হিসেবে বড় ধরনের বিনিয়োগ প্রয়োজন হবে আদানির। এদিকে বিদ্যুৎকেন্দ্রটির বিদ্যুতের দাম ও ক্যাপাসিটি চার্জ তুলনামূলক বেশি বলে পর্যবেক্ষণে উঠে এসেছে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ধারণা, বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি ব্যয়ে বিদ্যুৎ কিনতে হতে পারে এই আদানি গ্রুপ থেকে।

জানা গেছে, ২০১৭ সালের ৫ নভেম্বর বাংলাদেশের বিদ্যুৎ বিভাগ বিদ্যুৎ ক্রয়ের জন্য ভারতের এই বিতর্কিত আদানি পাওয়ার লিমিটেডের সঙ্গে চুক্তি করেছে। এই চুক্তি অনুযায়ী ভারতের ঝাড়খণ্ডে ৮০০ মেগাওয়াট করে ১৬০০ মেগাওয়াটের দুটি ইউনিটের একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে। এই বিদ্যুৎ সঞ্চালনের জন্য ডেডিকেটেড সঞ্চালন লাইন নির্মাণ করা হয়েছে। বাংলাদেশের চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও বগুড়ায় দুটি সাব-স্টেশন ও অন্যান্য  নির্মাণ ও সঞ্চালন কাজ পিজিসিবি করেছে।

এ ছাড়া বাংলাদেশের ভোজ্য তেল খাতে আদানি গ্রুপের বড় বিনিয়োগ রয়েছে। ১৯৯৩ সালে প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ এডিবল অয়েল লিমিটেড (রূপচাঁদা, ফরচুন, কিংস, মিজান ও ভিওলা), সিঙ্গাপুরের উইলমার ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড ও আদানি গ্রুপ মিলে ‘আদানি-উইলমার নামে’ এই যৌথ উদ্যোগ গড়ে তোলে। চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে অর্থনৈতিক অঞ্চলে ভারতীয় বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি বিশেষ জোন নির্মাণের দায়িত্ব পেয়েছে আদানি গ্রুপ।বাংলাদেশে নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতেও বিনিয়োগে আগ্রহী প্রতিষ্ঠানটি। চাল প্রক্রিয়াজাত করে প্যাকেটজাত চাল বিক্রির পাশাপাশি রাইস ব্র্যান অয়েলের ব্যবসায়ও আসতে চায় গ্রুপটি। বাংলাদেশে বন্দরের জেটি ও টার্মিনাল ব্যবস্থাপনার সঙ্গেও যুক্ত হওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে আদানি গ্রুপ। এসব কাজ আদানি গ্রুপকে দেওয়া হলে বাংলাদেশে চলমান ডলার সংকট আরো ভয়াবহ হয়ে উঠতে পারে। সংকটে পড়তে পারে আমাদের পুরো ব্যাংকিং খাত।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বাংলাদেশে বড় বড় প্রকল্পে বিনিয়োগের চেষ্টা করছে আদানি গ্রুপ। বিনিয়োগের জন্য সরকারের কাছে জোর লবিংও চালানো হচ্ছে। এরই মধ্যে দেশের বিদ্যুৎ, বন্দর খাতে বিনিয়োগের জন্য প্রাথমিক সমঝোতা স্বাক্ষরও হয়েছে। এমনিতেই বাংলাদেশ বর্তমানে তীব্র ডলার সংকটে ভুগছে। যার জন্য আইএমএফ থেকে সাড়ে চার বিলিয়ন ডলার ঋণ নিচ্ছে। আদানি গ্রুপ বাংলাদেশে এলে ডলারের একটি বড় অংশ দিতে হবে। তাতে দেশের ডলার সংকট আরো তীব্র হয়ে উঠতে পারে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা। সঙ্গে সংকটে পড়তে পারে দেশের ব্যাংকিং খাত।

এদিকে শেয়ারবাজারে আদানি গ্রুপের প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যাপক দরপতনের পাশাপাশি ভারতের ব্যাংক খাতে দেখা দিয়েছে চরম উদ্বেগ। কারণ ব্যাংকগুলোতে প্রতিষ্ঠানটির বিপুল অঙ্কের ঋণ রয়েছে।

কারসাজি ও জালিয়াতির কারণে এখন বিশ্বের বিভিন্ন দেশ আদানি গ্রুপের সঙ্গে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করবে বলে জানিয়ে দিয়েছে। তাই বাংলাদেশের অর্থনীতিবিদ ও জ্বালানি বিশেষজ্ঞরাও আদানি গ্রুপের সঙ্গে নতুন বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সরকারকে সতর্ক অবস্থানে থাকার জন্য বলেছেন।

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published.

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.