আজ: শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪ইং, ২০শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২২শে শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

২০ মার্চ ২০২৩, সোমবার |

kidarkar

আইএমএফের শর্তে ৯ শতাংশ সুদহার তুলে নিচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক

নিজস্ব প্রতিবেদক : উচ্চ মূল্যস্ফীতি প্রভাবে কমেছে সঞ্চয় প্রবণতা অন্যদিকে ৯ শতাংশ সুদের কারণে উচ্চ সুদে আমানত নিতে পারছে না ব্যাংক। ফলে তারল্য সংকট সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণের অন্যতম শর্ত সুদহার বাজারভিত্তিক করা। এমন পরিস্থিতিতে অনড় সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তুলে দেওয়া হচ্ছে সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ ঋণের সুদহার।

রোববার (১৯ মার্চ) বাংলাদেশ ব্যাংকের মুদ্রানীতি সংক্রান্ত এক বৈঠকে এ বিষয়ে আলোচনা হয়। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার। এ সময় ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নরসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগের নির্বাহী পরিচালক ও কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

ব্যাংকাররা জানান, ব্যাংকগুলো অনেক দিন ধরেই সুদহারের সীমা তুলে দেওয়ার দাবি জানিয়ে আসছে। কেননা ঋণে ৯ শতাংশ সুদের সীমা থাকায় আমানতে সুদ বাড়াতে পারছে না ব্যাংকগুলো। আবার সুদ না বাড়িয়েও ঋণ পাচ্ছে না। আইএমএফের সাড়ে ৪ বিলিয়ন ডলার ঋণের অন্যতম শর্ত সুদহার বাজারভিত্তিক করা। সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের এক গবেষণা প্রতিবেদনেও সুদহারের সীমা প্রত্যাহার অথবা বাড়ানোর সুপারিশ করা হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজবাউল হক বলেন, নতুন মুদ্রানীতি নিয়ে কাজ শুরু হয়েছে। আগামী জুনের তৃতীয় সপ্তাহে মুদ্রানীতি ঘোষণা করা হবে। চলমান মুদ্রানীতির কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ ও আগামী মুদ্রানীতিতে কী কী থাকবে বৈঠকে সেসব বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, নতুন মুদ্রানীতিতে ব্যাংক ঋণের সুদহার কি করা যায় সে বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এখানে ব্যান্ডিং ও রেফারেন্সের রেটের কথা ভাবা হচ্ছে। এসব বিষয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে। আগামী মুদ্রানীতিতে এসব বিষয়ে বিস্তারিত ঘোষণা করা হবে।

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও কাঙ্ক্ষিত প্রবৃদ্ধি অর্জনের মধ্যে ভারসাম্য রাখতে মুদ্রানীতি প্রণয়ন ও প্রকাশ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। দেশের আর্থিক ব্যবস্থাপনায় মুদ্রানীতি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এর মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ ঋণ, মুদ্রা সরবরাহ, অভ্যন্তরীণ সম্পদ, বৈদেশিক সম্পদ কতটুকু বাড়বে বা কমবে এর একটি পরিকল্পনা তুলে ধরা হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, দুই বছর মেয়াদি বন্ডে ৭ দশমিক ৫৫ শতাংশ, পাঁচ বছর মেয়াদি বন্ডে ৭ দশমিক ৯০ শতাংশ, ১০ বছর মেয়াদি বন্ডে ৮ দশমিক ৩৩ শতাংশ, ১৫ বছর মেয়াদি বন্ডে ৮ দশমিক ৭৭ শতাংশ ও ২০ বছর মেয়াদি বন্ডে সুদের হার ৮ দশমিক ৯৫ শতাংশ। অর্থাৎ এই পাঁচ ধরনের বন্ডে সুদহারের গড় ৮ দশমিক ৩০ শতাংশ। এই রেটের সঙ্গে যদি বাংলাদেশ ব্যাংক পাঁচ শতাংশ করিডোর রেট নির্ধারণ করে দেয় তাহলে ১৩ দশমিক ৩০ শতাংশে ঋণ বিতরণের সুযোগ পাবে ব্যাংক। অর্থাৎ এই নীতিমালা বাস্তবায়ন হলে ব্যাংক ঋণের সর্বনিম্ন সুদহার এক লাফে চার শতাংশ বৃদ্ধি পাবে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও আইএমএফের ঋণ পাওয়ার শর্ত পূরণ করতেই এ সিদ্ধান্তের কথা ভাবছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

সূত্র জানায়, আগামী অর্থবছরের মুদ্রানীতি নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক কাজ শুরু করেছে। নতুন মুদ্রানীতিতে পলিসি রেট ও ঋণের সুদহার নির্ধারণের বিষয়ে কাজ চলছে। ব্যাংক ঋণের সুদহারের ক্ষেত্রে রেফারেন্স রেট ও করিডোর রেট নিয়ে প্রাথমিকভাবে চিন্তা করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। রেফারেন্স রেট হবে মূলত বন্ডের সুদহারের গড় সুদহার। আর করিডোর রেট বাংলাদেশ ব্যাংক নির্ধারণ করে দেওয়ার কথা রয়েছে। দুটোর যোগ করে যে রেট হবে সেটাই হবে ব্যাংক ঋণের সুদহার।

এর আগে, ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের আয়োজনে আন্তর্জাতিক বিজনেস সামিটে ব্যাংক ঋণের সুদহারে পরিবর্তন আসছে এমন ইঙ্গিত দিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার। ওই অনুষ্ঠানে গভর্নর বলেছিলেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ ব্যাংক পলিসিগত কাজ করছে। চাহিদা কমিয়ে মূল্যস্ফীতি কমানোর উদ্যোগ নেওয়া হবে। এছাড়া ডলারের বিনিময় হার স্থিতিশীল রাখার চেষ্টা করছি। একাধিক হারও বাদ দেব। বিনিময় হার হবে বাজারভিত্তিক ও এক। আমরা এর কাছাকাছি। শিগগির একটি বাজারভিত্তিক বিনিময় হার ব্যবস্থা দেখতে পাবেন। আর সুদের হার নিয়েও কাজ শুরু করেছি। এরই মধ্যে আমানতের সুদের হারের ফ্লোর ও সিলিং প্রত্যাহার করেছি। বাজারভিত্তিক সুদহার নির্ধারণ করে করিডোর প্রথা চালু করা হবে। শিগগির এ নতুন উদ্যোগ চালু করতে সক্ষম হব।

২০২০ সালে ১ এপ্রিল থেকে ক্রেডিট কার্ড ছাড়া অন্য সব ধরনের ঋণের সুদহার এক অঙ্কে নামিয়ে আনার নির্দেশ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। সেই নির্দেশনা এখনো কার্যকর আছে। তবে চলতি ২০২২–২৩ অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধের (জানুয়ারি-জুন) জন্য ঘোষিত নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণাকালে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ব্যাংক আমানতের সুদহার সীমার মধ্যে না রেখে উন্মুক্ত করা হয়েছে। এখন থেকে ব্যাংক ও নন ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো প্রয়োজন অনুযায়ী আমানতের সুদহার নিজেরাই নির্ধারণ করতে পারবে। ফলে আমানতের সুদ হারে যে নির্ধারিত সীমা ছিল তা আর থাকছে না। পাশাপাশি ভোক্তা ঋণেরও সুদহার বাড়াতে পারবে ব্যাংক।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানায়, আমানতের সুদহার উন্মুক্ত করে দেওয়া ও ঋণ সুদহারে কিছুটা শিথিল করায় তা আমানতের সুদহার বাড়াতে সহায়তা করবে। বর্তমান বাজার পরিস্থিতি বিবেচনায় আমানতের সর্বনিম্ন সুদহার তুলে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ভোক্তাঋণের ক্ষেত্রে সুদহার ৩ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো যাবে। বর্তমানে ব্যাংকের সব ধরনের ঋণের সুদহার ৯ শতাংশ। ভোক্তাঋণের সুদহার বাড়ানোর ফলে ব্যাংকগুলো তা ১২ শতাংশ পর্যন্ত করতে পারবে।

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published.

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.