জুন ক্লোজিংয়ে বিএসইসির আইনি ছাড়: তবুও জটিলতার আশঙ্কা
শেয়ারবাজার রিপোর্ট: অর্থ আইন, ২০১৫ এ ব্যাংক, বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান ব্যাতিত অন্য সকল কোম্পানিকে আর্থিক বছর জুন ক্লোজিং করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। আর আইনটি জুলাই, ২০১৬ থেকে কার্যকর হবে। তাই পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি সকল তালিকাভুক্ত কোম্পানিকে জুন ক্লোজিং করার নির্দেশ দিয়েছে। আর এ নির্দেশনা পালনের জন্য তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোকে বেশ কিছু আইনি ছাড়ও দিয়েছে বিএসইসি। তবে বিএসইসি’র আইনি ছাড় সত্ত্বেও কোম্পানিগুলোর আর্থিক বছর জুন ক্লোজিংয়ের এর ক্ষেত্রে জটিলতার আশঙ্কা রয়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
প্রসঙ্গত, নির্দেশনা অনুযায়ী পুঁজিবাজারের ৮৯টি কোম্পানি রয়েছে যাদের হিসাব জুন ক্লোজিং করতে হবে। ব্যাংক, বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান ছাড়া ডিসেম্বর ক্লোজিং রয়েছে এমন কোম্পানির সংখ্যা ৭৩টি। এছাড়া মার্চ ক্লোজিং ৫টি, এপ্রিল ক্লোজিং ২টি, জুলাই ক্লোজিং ১টি, আগস্ট ক্লোজিং ১টি, সেপ্টেম্বর ক্লোজিং ৫টি এবং অক্টোবর ক্লোজিং রয়েছে ১টি কোম্পানি।
এ প্রসঙ্গে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক কোম্পানির শীর্ষ কর্মকর্তারা জানান, আর্থিক বছর পরিবর্তনের জন্য কোম্পানিগুলোকে রেজিষ্ট্রার অব জয়েন্ট স্টক (আরজেএসসি) থেকে অনুমোদন নিতে হবে। আর এ সংস্থাটি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আওতায় রয়েছে। তাছাড়া আরজেএসসি থেকে অনুমোদন পাওয়া বেশ সময়ের ব্যাপার। তাই আইনি সময়সীমার মধ্যে অধিকাংশ কোম্পানিই জুন ক্লোজিং করতে পারবে না।
এদিকে, দেশের দুই স্টক এক্সচেঞ্জ ডিএসই এবং সিএসই তাদের বাজেট প্রস্তাবনায় পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোকে জুন ক্লোজিং এর বাধ্যবাধকতা থেকে অব্যাহতি দেওয়ার দাবী জানিয়েছিল।
এ প্রসঙ্গে সংবাদ সম্মেলনে ডিএসই এবং সিএসই’র পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, আন্তর্জাতিক অ্যাকাউন্ট স্ট্যান্ডার্ড সকল কোম্পানিকে আর্থিক বছর নিজেদের ইচ্ছানুযায়ী নির্ধারণ করার স্বাধীনতা দিয়েছে। তাছাড়া পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর আর্থিক বছর জুন ক্লোজিংয়ের ক্ষেত্রে বেশ কিছু জটিলতা রয়েছে। কারণ এখানে বিদেশী বিনিয়োগ রয়েছে। আর সরকারের এ ধরণের সিদ্ধান্ত বিদেশী বিনিয়োগকে নিরুৎসাহিত করতে পারে।
জুন ক্লোজিং এর ক্ষেত্রে বিএসইসি যেসব আইনি ছাড় দিয়েছিল তা নীচে উল্লেখ করা হলো:
পার্ট ১:
১. ডিএসই ও সিএসই’র লিস্টিং রেগুলেশন এর ১৭নং ধারায় বলা হয়েছে লাইফ ইন্স্যুরেন্স ব্যাতিত সকল কোম্পানিকে প্রান্তিক শেষ হওয়ার ৪৫ দিনের মধ্যে প্রথম প্রান্তিকের আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করতে হবে। আর লাইফ ইন্স্যুরেন্সের ক্ষেত্রে তা ৯০ দিনের মধ্যে করতে হবে।
এর পাশাপাশি ২য় ও ৩য় প্রান্তিকের প্রতিবেদন ৩০ দিনের মধ্যে প্রকাশ করতে হবে। অন্যথায় ৩০ দিনের পর থেকে দিন প্রতি ৫ হাজার করে টাকা জরিমানা হবে।
একই আইনের ১৮ নং ধারায় বলা হয়েছে আর্থিক বছর শেষ হও-য়ার ১২০ দিনের মধ্যে আর্ষিক প্রতিবেদন তৈরী করতে হবে এবং ১৪ দিনের মধ্যে তা স্টক এক্সচেঞ্জ ও কমিশনে জমা দিতে হবে।
২. এসইসি’র ২০০৯ সালের ২৭ সেস্পেম্বর দেয়া SEC/CMRRCD/2008-183/Admin/03-34 নং নোটিফিকেশনে বলা হয়েছে লাইফ ইন্স্যুরেন্স ব্যাতিত সকল কোম্পানিকে প্রান্তিক শেষ হওয়ার ৪৫ দিনের মধ্যে আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করতে হবে। আর লাইফ ইন্স্যুরেন্সের ক্ষেত্রে তা ৯০ দিনের মধ্যে করতে হবে। এর পাশাপাশি ৩য় প্রান্তিকের আর্থিক প্রতিবেদন ৩০ দিনের মধ্যে প্রকাশ করতে হবে।
৩. সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ রুলস ১৯৮৭ এর ১২(৩এ) এবং ১৩নং ধারায় বলা হয়েছে বছর শেষ হওয়ার ১২০ দিনের মধ্যে আর্ষিক প্রতিবেদন তৈরী করতে হবে এবং ১৪ দিনের মধ্যে তা স্টক এক্সচেঞ্জ ও কমিশনে জমা দিতে হবে।
এজিএম সংক্রান্ত:
১. ২. ২০১০ সালের ৪ মে এসইসির প্রতাশিত SEC/CMRRCD/part-11/35aDMIN/03-43 নং নোটিফিকেশন এবং লিস্টিং রেগুলেশন ২০১৫ এর ২৪(১) ধারায় বলা হয়েছে রেক— ডেট এর ৪৫ দিনের মধ্যে অনুষ্ঠিত করতে হবে।
পার্ট-২
১. স্টক এক্সচেঞ্জ (সেটেলম্যান্ট অব ট্রানজেকশন) আইন ২০১৩ সালের ৭ নং ধারায় বলা হয়েছে প্রকাশিত আর্থিক প্রতিবেদন ও ঘোষিত ডিভিডেন্ডের ওপর ভিত্তি করে কোম্পানির ক্যাটাগরি নির্ধারিত হবে।
ডিভিডেন্ড সংক্রান্ত:
১. লিস্টিং রেগুলেশন ২০১৫ এর ২৮ এবং ২৯ নং ধারায় বলা হয়েছে ডিভিডেন্ড অনুমোদনের ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে তা বিনিয়োগাকারীদের কাছে পাঠাতে হবে। এবং পাঠানো ৭ দিনের মধ্যে তা স্টক এক্সচেঞ্জ এবং নিয়ন্ত্রক সংস্থায় জানাতে হবে।
২. এসইসির দেয়া ২০০৯ সালের ১ জুনের SEC/CMRRCD/2009-193/Admin/03-31 অনুযায়ী যে কোন বোর্ড মিটিংয়ে নেয়া সিদ্ধান্ত (AGM, Record Date, EPS, NAV, NCFPS) প্রকাশ করতে হবে।
৩. ২০১০ সালের ৯ ফেব্রুয়ারী প্রকাশিত নোটিফিকেশন SEC/CMRRCD/2009-19318/Admin38 এ বলা হয়েছে অনুমোদনের ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে তা বিনিয়োগাকারীদের কাছে পাঠাতে হবে।
শেয়ারবাজারনিউজ/আ