অস্থির শেয়ারবাজার: সংকট কাটাতে ১৯ দফা প্রস্তাব
শেয়ারবাজার রিপোর্ট : শেয়ারবাজারে দীর্ঘদিন ধরে অস্থিরতা বিরাজ করছে। বিনিয়োগকারীরা পুঁজি হারিয়ে রাস্তায় নেমে এ পর্যন্ত বহুবার মানবন্ধন,বিক্ষোভ করেছেন। অন্যদিকে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার জন্য নীতিনির্ধারণী মহলও নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। কিন্তু দেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি সংকটের কারণে বাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।
এরই ধারবাহিকতায় সোমবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) ৫৮ পয়েন্ট সূচক কমায় বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের ব্যানারে বিনিয়োগকারীরা রাস্তায় নেমে মানববন্ধন করেছেন। সেই সঙ্গে বাজারে স্থিতিশীলতায় বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে (বিএসইসি) বিনিয়োগকারীরা ১৯ দফা প্রস্তাব দিয়েছেন।
বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সভাপতি একেএম মিজানুর রশিদ চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক কাজী আবদুর রাজ্জাক স্বাক্ষরিত এক প্রস্তাবনা দেয়া হয়েছে।
প্রস্তাবগুলো হলো : ০১. শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত নয় এমন কোন সিকিউরিটিজে ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগ শেয়ারবাজার এক্সপোজার থেকে বাদ দিতে হবে।
০২. শেয়ারবাজারে ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। প্রয়োজনে আইন সংশোধন করে পূর্বের ন্যায় ব্যাংক সমূহকে মোট দায়ের ১০ শতাংশ শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের সুযোগ দিতে হবে। এছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের অযাচিত হস্তক্ষেপ বন্ধ করতে হবে।
০৩. জিএমজি এয়ারলায়েন্সসহ অন্যান্য কোম্পানির প্লেসমেন্টের মাধ্যমে লুটে নেয়া অর্থ ফেরতের ব্যবস্থা করতে হবে। উদাহরণস্বরুপ : ভারতের সাহারা গ্রুপের মালিক সুব্রত রায়কে অনৈতিকভাবে বাজার থেকে ২০ হাজার কোটি রুপি উত্তোলনের জন্য আইনের মাধ্যমে তাকে জেলে পাঠিয়ে বিনিয়োগকারীদের টাকা ফেরতের ব্যবস্থা করেছে ভারতের সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন।
০৪. যেসব কোম্পানি ব্যাংক ঋণ পরিশোধ করার জন্য/কোম্পানির প্রয়োজনে শেয়ারবাজারে আসতে চাইবে তাদেরকে তালিকাভুক্তির পরের বছর থেকে বাধ্যতামূলকভাবে নূন্যতম ১০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিতে হবে। এতে বাজারে দুর্বল কোম্পানির প্রবেশ বন্ধ হবে। পাশাপাশি ওভার দ্য কাউন্টার (ওটিসি) মার্কেট ও জেড ক্যাটাগরিতে কোনো কোম্পানিকে যেতে হবে না। বাজার স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার আওতায় এসে বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়িয়ে দেবে।
০৫. এ পর্যন্ত অতিরিক্ত প্রিমিয়াম/ডাইরেক্ট লিষ্টিং/বুক বিল্ডিং প্রক্রিয়ায় কারসাজির মাধ্যমে বাজার থেকে লুটে নেয়া অর্থ অনতিবিলম্বে বিনিয়োগকারীদের ফেরত দানের ব্যবস্থা করতে হবে।
০৬. ২০১১ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত মার্জিন ঋণে জর্জরিত বিনিয়োগকারীদের সুদ সম্পূর্ণ মওকুফ করতে হবে।
০৭. বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কর্মরত ব্যক্তিদের কমিশনার পর্যন্ত পদোন্নতি দিতে হবে। এতে দীর্ঘদিন শেয়ারবাজারের সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যক্তিরা বাজার উন্নয়নে তাদের অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে পারবে।
০৮. ৫ শতাংশ সরল সুদে পুঁজিবাজারের জন্য ১৫ হাজার কোটি টাকা ঋণ সরবরাহ করতে হবে।
০৯. শেয়ারবাজারের বৃহত্তর স্বার্থে অবিলম্বে (নুঁ ইধপশ) বাই ব্যাক আইন পাস করতে হবে। এক্ষেত্রে ইস্যূ মূল্যে বা ঘঅঠ এর ৫ শতাংশ কম মূল্যের যেটি বেশি সেই মূল্যে কোম্পানিগুলোকে শেয়ার বাই ব্যাক করতে হবে।
১০. শেয়ারবাজারের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার জন্য ঋরহধহপরধষ জবঢ়ড়ৎঃরহম অপঃ বাস্তবায়ন করতে হবে।
১১. বাজার সম্পূর্ণ স্থিতিশীল না হওয়া পর্যন্ত বুক বিল্ডিং এবং ডাইরেক্ট লিষ্টিং পদ্ধতিতে কোন প্রকার ওচঙ অনুমোদন দেয়া যাবে না।
১২. ঋণের ভারে জর্জরিত, রুগ্ন ও সমালোচিত এবং স্বল্প মূলধনী কোম্পানিগুলোকে কোন ভাবেই ওচঙ অনুমোদন দেয়া যাবে না। এছাড়া গণহারে আইপিও অনুমোদন বন্ধ করতে হবে।
১৩. ২০১১ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত যেসব কোম্পানিকে আইপিও অনুমোদন দেয়া হয়েছে,আগামী দশ বছরের মধ্যে এগুলোর অস্তিত্ব হারিয়ে গেলে তার দায়ভার সম্পূর্ণরুপে বিএসইসির বর্তমান কমিশনারদের নিতে হবে।
১৪. অডিট ফার্ম, সকল ইস্যু ম্যানেজার, অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানিগুলোকে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হব।
১৫. পরিচালকদের জন্য ২ শতাংশ অন্যদিকে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের পরিচালক হওয়ার জন্য ৫ শতাংশ শেয়ার ধারণ এই বৈষম্য পরিহার করে পরিচালক হওয়ার যোগ্যতা সবার জন্য ২ শতাংশ শেয়ার ধারণ নির্ধারণ করে দিতে হবে।
১৬. সকল ষ্টেকহোল্ডার, রেগুলেটর ও বিনিয়োগকারীদের মধ্যে সমন্বয়হীনতা দূর করতে হবে।
১৭. ডিএসই ও সিএসই এর পরিচালনা পর্ষদে বিনিয়োগকারীদের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে হব।
১৮. বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত সকল মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে।
১৯. দেশের স্বার্থে জাতীয় স্বার্থে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের স্বার্থে দেশের অর্থনৈতিক মুক্তির স্বার্থে আগামী ২০ বছরের জন্য সর্ব দলীয় জাতীয় সরকার গঠন করুন।
শেয়ারবাজার/সা/মু/ও