মিউচ্যুয়াল ফান্ডের বোনাস শেয়ারে নিষেধাজ্ঞা: উদ্যোগ নিলেও কার্যকর নেই
শেয়ারবাজার রিপোর্ট: মিউচুয়াল ফান্ডে লভ্যাংশ হিসেবে রি-ইনভেস্টমেন্ট বা বোনাস ইউনিট দেয়া হলে বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হন। সে কারণে এ সংক্রান্ত আইন সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছিল বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। কিন্তু উদ্যোগ নেয়ার ১০ মাস পেরিয়ে গেলেও তা কার্যকর হয়নি। অথচ যে সময়ে মিউচ্যুয়াল ফান্ড সংশ্লিষ্ট আইনটি সংশোধনের উদ্যোগ নেয়া হয় একই সময়ে অন্য আরেকটি আইন অর্থাৎ পাবলিক ইস্যু রুলস সংশোধনেরও উদ্যোগ নেয়া হয়। লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে, পাবলিক ইস্যু রুলসটি চূড়ান্ত করা হলেও এখনো আড়ালে রয়ে গেছে মিউচ্যুয়াল ফান্ড আইনের সংশোধন। দীর্ঘদিন অতিবাহিত হলেও আইনটি আলোর মুখ না দেখায় বাজার সংশ্লিষ্টদের মনে নানা প্রশ্নের জন্ম দিচ্ছে। কেউ কেউ বলছে নির্দিষ্ট একটি গোষ্ঠিকে বিশেষ সুবিধা পাইয়ে দেবার জন্য আইনটি এখনো সংশোধন করা হচ্ছে না।
এ বিষয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থার এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, মিউচুয়াল ফান্ডের অবসায়ন নিয়ে উচ্চ আদালতে কয়েকটি রিট মামলা দায়েরের পর আইন সংশোধনের প্রক্রিয়া বন্ধ ছিল। এর কারণ রিটের বিষয়ের সঙ্গে সংশোধন ইস্যুর কিছুটা সংশ্লিষ্টতা ছিল। এসব বিবেচনায় সংশোধন কার্যক্রম স্থগিত রাখা হয় বলে জানান তিনি।
তবে ওই কর্মকর্তা জানান, মিউচুয়াল ফান্ড-সংক্রান্ত মামলাটি ইতিমধ্যে নিষ্পত্তি হয়েছে। এর পরও আইনটির সংশোধন প্রক্রিয়া ঝুলে থাকার বিষয়ে কিছু জানাতে পারেননি তিনি।
শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্ট কয়েকটি সূত্র জানিয়েছে, মিউচুয়াল ফান্ড ব্যবস্থাপনাকারী একাধিক সম্পদ ব্যবস্থাপক কোম্পানি চায় না, আইনের প্রস্তাবিত সংশোধন চূড়ান্ত হোক। তারা প্রস্তাবিত সংশোধনে ব্যাপক রদবদল করার চেষ্টা চালাচ্ছে। যোগাযোগ করা হলে সম্পদ ব্যবস্থাপক কোম্পানিগুলোর এ বিষয়ে মন্তব্য পাওয়া যায়নি। কমিশনও এ বিষয়ে মুখ খুলছে না।
গত বছরের ১২ ডিসেম্বর বিএসইসি এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে মিউচুয়াল ফান্ড বিধিমালার প্রস্তাবিত সংশোধনের ধারণা প্রকাশ করে। সেখানে বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ বিবেচনা করে গুরুত্বপূর্ণ ধারাগুলোতে সংশোধন আনার কথা বলা হয়।
প্রস্তাবিত সংশোধন খসড়ায় বলা হয়েছে, কোনো মিউচুয়াল ফান্ড থেকে বিনিয়োগকারীদের কখন লভ্যাংশ হিসেবে রি-ইনভেস্টমেন্ট বা পুনর্বিনিয়োগ দিতে পারবে, তা নির্দিষ্ট করে দেওয়া হবে। সংশোধনী খসড়ায় বলা হয়েছে, কোনো মিউচুয়াল ফান্ডের ইউনিটপ্রতি সম্পদ মূল্য (এনএভি) ওই ফান্ডের বাজার দরের তুলনায় কম হলে সম্পদ ব্যবস্থাপক কোম্পানি লভ্যাংশ আকারে রি-ইনভেস্টমেন্টের প্রস্তাব করতে পারবে না। তাছাড়া লভ্যাংশ আকারে রি-ইনভেস্টমেন্ট অনুমোদন হলেও বিনিয়োগকারীকে নগদ বা রি-ইনভেস্টমেন্ট, এই উভয় পদ্ধতির মধ্যে যে কোনো একটি বেছে নেওয়ার সুযোগ দিতে হবে।
গত কয়েক বছর একাধিক সম্পদ ব্যবস্থাপক কোম্পানি রি-ইনভেস্টমেন্ট আকারে বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ দিচ্ছে। এতে দেখা যায়, ৪-৫ টাকা বাজার দরের ফান্ড বিনিয়োগকারীদের বাধ্যতামূলকভাবে ১১ টাকা দরে কিনতে হয়েছে। এতে তাদের অন্তত ৩০০ কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে। জেনে বুঝেই সম্পদ ব্যবস্থাপক কোম্পানি এমন লভ্যাংশ প্রদানের সুপারিশ করেছিল। ফান্ডগুলো ট্রাস্টি বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ বিবেচনা না করে ওই লভ্যাংশ অনুমোদন করে। এ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার প্রেক্ষাপটে নিয়ন্ত্রক সংস্থা এ-সংক্রান্ত আইনের ধারায় সংশোধন আনার উদ্যোগ নেয়।
আইনের নতুন সংশোধনে ফান্ড পরিচালনায় জবাবদিহিতা নিশ্চিতের জন্য দুই বছর অন্তর সাধারণ সভার বিষয়টি যুক্ত করার কথা বলা হয়েছে, যা আগে ছিল না।
জানতে চাইলে কমিশনের এক কর্মকর্তা জানান, এর আগের অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, কোনো সম্পদ ব্যবস্থাপক এক বছর ফান্ড পরিচালনা থেকে মুনাফা করতে না পারায় বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ প্রদানে ব্যর্থ হয়েছে। এ অবস্থায়ও সম্পদ ব্যবস্থাপক কোম্পানি নিজের ব্যবস্থাপনা ফি আদায় করেছে, যা অনাকাঙ্ক্ষিত। এ অবস্থা দূর করতে ব্যবস্থাপনা ফি কেটে রাখার ব্যবস্থার কথা বলা হয়েছে। বিপরীতে নির্দিষ্ট হারের বেশি লভ্যাংশ দিতে পারলে পারফরম্যান্স বোনাস দেওয়ারও কথা বলা হয়েছে।
নতুন সংশোধন খসড়ায় মেয়াদি মিউচুয়াল ফান্ডের সর্বমোট মেয়াদ সর্বোচ্চ ১০ বছর রাখার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা হবে। বর্তমানে এ নীতি কমিশনের একটি নির্দেশনা অনুসারে কার্যকর রয়েছে। খসড়ায় বলা হয়েছে, চাইলে মেয়াদি মিউচুয়াল ফান্ডকে বেমেয়াদিতে রূপান্তরের সুযোগ বহাল থাকবে। এ ছাড়া মেয়াদি ফান্ডের ন্যায় বেমেয়াদি ফান্ড স্টক এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে লেনদেনের সুযোগ সৃষ্টি করা হবে। এক্ষেত্রে এ ধরনের ফান্ডের ক্রয় ও বিক্রয়মূল্যের ব্যবধান ৩ থেকে ৫ শতাংশ সীমাবদ্ধ রাখা নিশ্চিত করা হবে। বিনিয়োগের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে প্রতি মাসে সব ধরনের মিউচুয়াল ফান্ডের মাসিক ভিত্তিতে পোর্টফোলিও প্রকাশ বাধ্যতামূলক করা হবে।
শেয়ারবাজারনিউজ/এমআর/ম.সা