আর এন স্পিনিংয়ের প্রতি নমনীয় বিএসইসি: কাটছে জটিলতা
শেয়ারবাজার রিপোর্ট: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বস্ত্র খাতের কোম্পানি আর এন স্পিনিং মিলস লিমিটেডের প্রতি নমনীয় হয়েছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। দীর্ঘদিন ঝুলে থাকা দ্বন্দ্বের অবশেষে নিষ্পত্তি হতে যাচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় এ কোম্পানির শুধুমাত্র পরিচালকদের আবেদনের প্রেক্ষিতে তাদের ৫০ শতাংশ জরিমানা মওকুফ করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা। অন্যদিকে কোম্পানিকে ধার্য করা জরিমানা মওকুফের কোনো আবেদন না করায় তা বহাল রেখেছে বিএসইসি।
উল্লেখ্য, রাইট শেয়ারে জালিয়াতি করায় ২০১২ সালে এ কোম্পানি ও একাধিক পরিচালককে মোটা অংকের জরিমানা করে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। আর সেই জরিমানার মধ্যে কোম্পানির পুরো জরিমানা এবং পরিচালকদের ৫০ শতাংশ ইতিমধ্যে নিয়ন্ত্রক সংস্থার অনুকূলে জমা হয়েছে।
জানা যায়, জালিয়াতির কারণে আর এন স্পিনিংয়ের বিরুদ্ধে মামলা করে নিয়ন্ত্রক সংস্থা। এরপর বিএসইসির মামলা চ্যালেঞ্জ করে উচ্চ আদালতে রিট করে কোম্পানি কর্তৃপক্ষ। অবশেষে নানা চড়াই উৎড়াই পেরিয়ে সবশেষে নিজেরাই সমঝোতার মাধ্যমে নিষ্পত্তি করছে এ দ্বন্দ্ব।
এ বিষয়ে আর এন স্পিনিংয়ের কোম্পানি সচিব হান্নান মোল্লা শেয়ারবাজারনিউজ ডটকমকে বলেন, আমরা এ বিষয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি’র কাছ থেকে একটি চিঠি গত রোববার (১ জানুয়ারী) পেয়েছি। এর আগে বিএসইসির করা কোম্পানির পরিচালকদের জরিমানা ৫০ শতাংশ কমানোর আবেদন করে। আর তার প্রেক্ষিতে বিএসইসি আমাদের এই চিঠি দিয়েছে।
বিএসইসি’র পক্ষ থেকে ২৯ ডিসেম্বর ২০১৬ তারিখে বিএসইসি’র নির্বাহী পরিচালক (আইন) মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান স্বাক্ষরিত ওই চিঠি’তে বলা হয়েছে- কোম্পানির শতভাগ জরিমানা, পরিচালকদের ৫০ শতাংশ এবং বিএসইসি’র বিরুদ্ধে করা মামলা প্রত্যাহারের শর্তে বিষয়টি বিবেচনা করা যেতে পারে।
হান্নান মোল্লা আরো বলেন, আমরা ইতিমধ্যে কোম্পানির জরিমানার ১০ লাখ এবং পরিচালকদের প্রত্যেকেই জরিমানার ৫০ শতাংশ করে বিএসইসিতে জমা করে দিয়েছি। এখন শুধু বিষয়টি নিয়ন্ত্রক সংস্থার বিবেচনার জন্য অপেক্ষা। আশা করি শিঘ্রই বিএসইসি যেকোন একটি কমিশন সভায় এ বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে একটি নোটিফিকেশন প্রকাশ করবে।
উল্লেখ্য, আর এন স্পিনিংয়ের উদ্যোক্তা-পরিচালকদের বিরুদ্ধে রাইট শেয়ার নিয়ে জালিয়াতির অভিযোগে ২০১২ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর আর এন স্পিনিংয়ের উদ্যোক্তা-পরিচালদের শেয়ার বিক্রি, হস্তান্তর, বন্ধক ও উপহার দেওয়ার নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি। একই সঙ্গে রাইট শেয়ার সংক্রান্ত দাখিল করা কাগজপত্র জাল হওয়ায় আর এন স্পিনিংয়ের বিরুদ্ধে মামলা করে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। বিএসইসির মামলা চ্যালেঞ্জ করে উচ্চ আদালতে রিট করে কোম্পানি কর্তৃপক্ষ।
১০ জানুয়ারি ২০১২ তারিখে কমিশনের ৪১৫তম সভায় আর এন স্পিনিংকে ১টি সাধারণ শেয়ারের বিপরীতে ১টি রাইট শেয়ার ছেড়ে মূলধন বাড়ানোর অনুমতি দেয় বিএসইসি। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কোম্পানিটি ১৩ কোটি ৯১ লাখ ৪১ হাজার ২৩০টি সাধারণ শেয়ারের বিপরীতে রাইট শেয়ার ছেড়ে বাজার থেকে ২৭৮ কোটি ২৮ লাখ ২৪ হাজার ৬০০ টাকা উত্তোলন করার কথা ছিল। কিন্তু নির্ধারিত সময়ে এ কোম্পানির পরিচালকরা নিজ কোটায় রাইট শেয়ারের অর্থ জমা দিতে না পারায় বিএসইসি’র পক্ষ থেকে রাইটের আকার কমিয়ে ১২০ কোটি টাকা করতে বলা হয়।
এছাড়া, টাকা জমা দিতে না পারার কারণে কোম্পানিকে ১০ লাখ টাকা, পরিচালক শিরিন ফারুককে ২৫ লাখ টাকা এবং কোম্পানির বাকি পরিচালকদের প্রত্যেককে ৫০ লাখ টাকা করে জরিমানা করা হয়। দায়িত্বে অবহেলার কারণে এ কোম্পানির সচিবকে বরখাস্ত করা হয় এবং পরবর্তী ৫ বছর পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোনো কোম্পানিতে চাকরিতে যোগদানের বিষয়ে তার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। একই সাথে ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত আর এন স্পিনিংয়ের উদ্যোক্তা-পরিচালকদের শেয়ার বিক্রির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে বিএসইসি। একই সঙ্গে ব্যাংক হিসাবে কোম্পানির রাইট শেয়ারের ২৭৮ কোটি টাকার জাল কাগজপত্র দাখিলের অভিযোগে ২০১২ সালের ১০ অক্টোবর আর এন স্পিনিংয়ের চেয়ারম্যান, পরিচালকসহ মোট সাত ব্যক্তিকে আসামি করে মামলা করে বিএসইসি।
পরবর্তী সময়ে রাইট শেয়ারের আকার কমানোর নির্দেশনা বিএসইসি’র আইনবর্হিভূত সিদ্ধান্ত মনে করায় কোম্পানির পক্ষ থেকে গত বছরের ১০ মার্চ উচ্চ আদালতে রিট করা হয়। এতে ১৯৬৯ সালের সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন অধ্যাদেশ এর ২৬(২) উপ-ধারা অনুযায়ী বিএসইসি’র গত ১৪ জানুয়ারির (শেয়ার বিক্রির নিষেধাজ্ঞা) সিদ্ধান্তটি পুনর্বিবেচনা করার আবেদন জানান হয়।
এরই পরিপ্রেক্ষিতে বছরের ২০ জুন বিএসইসি’র বিরুদ্ধে ৪ (চার) সপ্তাহের রুল জারি করেন উচ্চ আদালত। এতে আর এন স্পিনিংয়ের শেয়ার বিক্রির নিষেধাজ্ঞা কেন প্রত্যাহার করা হবে না তার কারণ ব্যাখ্যা করতে বলা হয়। একই সঙ্গে বিএসইসির জারি করা নিষেধাজ্ঞা প্রথমবারের মতো পরবর্তী ছয় মাসের জন্য স্থগিত করা হয়। এরপর চলতি বছরের ২৩ জানুয়ারি দ্বিতীয় বারের মতো, ২ জুন তৃতীয়বারের মতো এবং বুধবার ডিএসইতে প্রকাশিত সংবাদ অনুযায়ী চতুর্থবারের মতো বিএসইসির নিষেধাজ্ঞা আরও ছয় মাস স্থগিত করা হয়েছে।
জানা গেছে, আর এন স্পিনিংয়ের পরিচালক ও অবলেখক শেয়ার সাবস্ক্রাইব করতে ব্যর্থ হয়। তবে কোম্পানিটির তিন পরিচালক শিরিন ফারুক, কিম জুং সুক ও এমএল ডায়িং সাবস্ক্রিপশন তারিখ পার হয়ে যাওয়ার পর রাইট শেয়ারের টাকা জমা দেন।
শেয়ারবাজারনিউজ/রু