কি কারণে প্রাসাদ ছাড়ছেন রাজকুমারী?
শেয়ারবাজার ডেস্ক: ‘লাভ অ্যাট ফার্স্ট সাইট’! প্রেম, প্রথম দর্শনেই! রাজপথ নয়, জনপথই পছন্দ জাপানের রাজকুমারীর! প্রাসাদ নয়, রাজকুমারীর পছন্দ হবু বরের ‘ছোট্ট কুঁড়ে’!
শৈশব থেকে প্রাসাদের বৈভব তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করার পর এবার সম্ভবত বৈরাগ্য এসেছে তার! তাই রাজপ্রাসাদের বিলাস, বৈভবের মোহ ছেড়েছুড়ে তিনি মেতে গিয়েছেন আমজনতার স্রোতে। বিয়ে করতে চলেছেন এক সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলেকে। পাত্র কেই কোমুরো তার বহুদিনের প্রেমিক। কলেজে পড়তে পড়তেই তার সঙ্গে আলাপ জাপানের রাজকুমারী মাকোর। হালে চার হাতে জোড় বাঁধার পাকাপাকি সিদ্ধান্তটা নিয়েই ফেলেছেন তিনি। আর তা নিয়েই হইচই পড়ে গেছে জাপানজুড়ে। ভালোবাসার টানে বরাবরের জন্য প্রাসাদ ছেড়ে রাজকুমারী চলে যাবেন সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারে, মন থেকে অনেকেই এটা মেনে নিতে পারছেন না।
সম্রাট আকিহিতোর জাপানে রাজবংশকে যে এখনও কিছুটা সম্ভ্রমের চোখেই দেখে আমজনতা, তারও প্রমাণ মিলতে শুরু করেছে। কেউ কেউ ‘আহা, উহু’ করে বলতে শুরু করেছেন, ‘করছেন কী রাজকুমারী!’ কিন্তু রাজকুমারী মাকো তাঁর দাদা সম্রাট আকিহিতোর মতোই পাকাপাকি সিদ্ধান্তটা নিয়েই ফেলেছেন। দাদা সম্রাট আকিহিতো যেমন ঠিক করে ফেলেছেন, রাজদণ্ড রক্ষা করার দায়িত্বটা তিনি আর পালন করবেন না। বয়স হয়ে গিয়েছে ৮৩। সম্রাট আকিহিতোর শরীর আর গুরুদায়িত্বের বোঝা বইবার ধকল সইতে পারছে না। তাঁর নাতনি রাজকুমারী মাকোও তেমনই ঠিক করে ফেলেছেন, বাকি জীবনটা তিনি আর রাজপ্রাসাদের বিলাস, বৈভবে ডুবে থাকবেন না। প্রাসাদ ছেড়েছুড়ে এসে উঠবেন তাঁর কলেজের সহপাঠী কেই কোমুরোর ‘ছোট্ট কুঁড়ে’তে! সম্রাট আকিহিতোর তিন নাতনি মাকো, কাকো আর আইকো। নাতি একটিই, ১০ বছরের রাজকুমার হিসাহিতো। মাকোই এদের মধ্যে বয়সে সবচেয়ে বড়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রাজপ্রাসাদের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, দাদা সম্রাট আকিহিতোর খুব আদরের নাতনি ২৫ বছর বয়সী রাজকুমারী মাকো লিসেস্টার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নিয়ে মাসকয়েক আগেই গবেষকের কাজ নিয়েছেন একটি মিউজিয়ামে। আর তার ২৫ বছর বয়সের প্রেমিক কেই কোমুরো কাজ করেন টোকিওর একটি ল’ ফার্মে। । খুব একটা উঁচু পদে কাজ করেন তিনি, এমনটাও নয়। তবে মা, বাবার কাছ থেকে কোমুরোকে লুকিয়ে রাখেননি রাজকুমারী মাকো। তাদের সঙ্গে কোমুরোকে অনেক আগেই আলাপ করিয়ে দিয়েছেন রাজকুমারী।
খবরটা রটে যাওয়ার পর পরই সাংবাদিকদের এড়িয়ে চলতে শুরু করেছেন রাজকুমারীর প্রেমিক। কোমুরো বলেছেন, ‘এখন কিছু বলতে পারব না। সময় হলে সব বলব। মঙ্গলবার মাকো (রাজকুমারী) আমাকে ফোন করেছিল। খুব অল্প সময়ের জন্য। ‘ আর রাজকুমারী মাকো তার ঘনিষ্ঠ মহলে বলেছেন, তার ইচ্ছা একটাই, ইন্টারন্যাশনাল ক্রিশ্চান ইউনিভার্সিটি কলেজ থেকে কোমুরো গ্রাজুয়েটটা হয়ে নিক। বছর পাঁচেক আগে এই কলেজেই কোমুরোর সঙ্গে প্রথম দেখা হয় রাজকুমারীর।
রাজবংশের বাইরে সাধারণ পরিবারের কাউকে বিয়ে করলেই তাকে বরাবরের জন্য রাজপ্রাসাদের যাবতীয় মোহ, সম্পত্তির অংশ পুরোপুরি ছেড়ে দিতে হবে। তিনি রাজা হোন, রাজপুত্র, রাজকুমারী হোন বা রাজপরিবারের যেকোনো সদস্যই হোন না কেন। জাপানের রাজবংশের এটাই নিয়ম।
ভালোবাসার টানে সব ছাড়তে রাজি, সাফ জানিয়ে দিয়েছেন জাপানের রাজকুমারী মাকো। যেমন বার্ধক্যর জন্য তার রাজ-দায়িত্ব পুরোপুরি ছাড়তে চান, স্পষ্টই বলে দিয়েছেন সম্রাট আকিহিতোও।
সরকারি সূত্রের খবর, সম্রাটের সেই ইচ্ছাকে সম্মান জানাতে শুক্রবার সংশ্লিষ্ট বিলে অনুমোদন দিতে চলেছে জাপানের মন্ত্রিসভা। মজার কথাটা এই যে, সম্রাট ও রাজকুমারী যখন তাদের সাহসী সিদ্ধান্তটা নিয়ে তা প্রকাশ্যে বলার সাহসটা দেখাতে পেরেছেন, জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো অ্যাবের রক্ষণশীল দলের সরকার কিন্তু ততটা সাহস দেখাতে পারেনি। পারেনি বলেই, রাজবংশের ক্ষমতার পরম্পরা মহিলাদের ওপরও বর্তাতে পারে কি না, সে ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি জাপান সরকার। যদিও তরুণ প্রজন্মের একটা অংশ বলাবলি শুরু করে দিয়েছেন, এটা খুব দরকার। রাজদণ্ড শুধুই রাজবংশের পুরুষদের হাতে থাকবে কেন? তা কেন রাজবংশের মহিলাদের হাতে যাবে না?
জাপানি রাজবংশের নিয়ম রাজ-দায়িত্ব শুধুই পুরুষের হাত থেকে যাবে পুরুষের হাতে। বংশের মহিলারা রাজকুমারী থেকে কোনোদিন রানি হতে পারবেন না। রাজার মৃত্যুর পর রানির হাতে রাজদণ্ড যাবে না। তাকে ‘রাজার রানি’ হয়েই থাকতে হবে! রাজবংশের বাইরে কাউকে বিয়ে করলে তাকে রাজবংশও ছাড়তে হবে। এর আগে রাজকুমারীর এক ফুপুও এই ভাবেই বিয়ে করেছিলেন এক সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলেকে। তার জন্য তাকেও রাজবংশ ছেড়ে দিয়ে চলে যেতে হয় চিরতরে। এই ধারাটা বদলানোর কানাঘুষো জাপানে চলছে বেশ কিছু দিন ধরে। কিন্তু জাপানে এখনও রাজবংশের প্রতি ভোটারদের একটা অংশের সম্ভ্রম রয়েছে বলে, জাপানের রক্ষণশীল সরকার এ ব্যাপের কোনো সাহসী সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি। জাপানের চিফ ক্যাবিনেট সেক্রেটারি য়োশিদে সুগা বুধবার সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘রাজদণ্ড কী ভাবে এক প্রজন্ম থেকে পরের প্রজন্মের হাতে যাবে, তা নিয়ে আমাদের ভাবনা-চিন্তায় কোনো বদল হয়নি। ‘
সম্রাট আকিহিতো ‘রিটায়ার’ করলে কে তার আসনে বসবেন, তা নিয়েও শুরু হয়ে গিয়েছে জল্পনা। নাম রয়েছে চার জনের। সম্রাটের দুই মধ্যবয়সী ছেলে। আকিহিতোর অশীতিপর ভাই। আর ১০ বছরের নাতি রাজকুমার হিসাহিতো।
রাজকুমারী মাকোর বিয়েটা ঠিক হয়ে গেলেও, সম্রাট আকিহিতোর সিংহাসনে বসবেন কে, তা এখনও চূড়ান্ত হয়নি!
শেয়ারবাজারনিউজ/মা