আজ: শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪ইং, ১৩ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৫ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

২৩ অক্টোবর ২০১৮, মঙ্গলবার |

kidarkar

বৈঠকের আঁইওয়াশ না দেখিয়ে প্রফেশনাল আচরণ জরুরি

বাজার যখনই ধসের মুখে যায় তখনই মার্কেট মেকারদের বৈঠকের খবর পাওয়া যায়। বৈঠকের পর মার্কেট কিছুদিন ভালো থাকে, তারপর আবার দরপতন শুরু হয়। গেল ৮ বছর ধরে পুঁজিবাজারে এসব কর্মকান্ড দেখে বিনিয়োগকারীরা অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে।

আইসিবি যখন মার্কেট মেকারের ভূমিকা পালন করে, বাজার স্থিতিশীল করার চেষ্টা করে তখন তারা কিছু বাজে কৌশলের আশ্রয় নেয়। যেটা সবচেয়ে লাস্ট শেয়ার এরকম ৫-৬টি শেয়ারের দাম বাড়িয়ে সূচক প্লাস করে রাখে। এতে সূচক বাড়লেও বাস্তবিকে মানুষের পোর্টফো‌লিওর কোনো উন্নতি হয় না। এ অবস্থা থেকে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী, আইসিবি, অ্যাসেট ম্যনেজমেন্টসহ সকল মার্কেট মেকারকে বেরিয়ে আসতে হবে।
এজন্য ব্লু চিপস শেয়ারে বিনিয়োগ করতে হবে। সম্প্রতি অনেক কোম্পানির ভালো ডিভিডেন্ড এসেছে। ভালো ইপিএস দেখানোর পরও শেয়ারের দাম পড়ে যাচ্ছে। আজকে গ্রামীন ফোনের প্রায় ২৫% গ্রোথ এসেছে।
কিন্তু শেয়ারের প্রাইসে কোনো রিফ্লেকশন নাই। এসব আচরণ মার্কেটে কোনো বিনিয়োগ আকর্ষণ করে না। যদি এ ধরণের ঘটনা বার বার ঘটতেই থাকে, মানুষ যখন দেখে আর্নিং বাড়লেও শেয়ারের দাম বাড়ে না তখন শেয়ারবাজারে মানুষ বিনিয়োগ কেন করবে?
আইসিবি, অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টসহ অন্যান্য প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাজ হচ্ছে ভালো কোম্পানিগুলোকে পেট্রোনাইজ করা।
ব্লু চিপস শেয়ার, কিছু ভালো ব্যাংক, কিছু ভালো লোকাল কোম্পানি, কিছু ভালো সরকারি কোম্পানি এরকম ন্যূনতম ২৫টি কোম্পানির শেয়ারকে যদি ভালো মুভমেন্ট করানো যায় তাহলে যারা সাইডলাইনে বসে রয়েছেন তারা বাজারের প্রতি ভালো সিগন্যাল পাবেন। মার্কেটটি যে রিয়েল ফরম্যাটে উঠছে, এখানে বিনিয়োগ করা যায় তখন সেই মেসেজটি তারা পেয়ে যাবেন।
গত তিন বছরের চিত্রে দেখা যায় আইসিবি ও বেশিরভাগ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী বিপুল পরিমাণে নতুন শেয়ারে বিনিয়োগ করে যাচ্ছে। এটা বন্ধ করতে হবে। কারণ নতুন একটি কোম্পানির দুই বছরের এজিএম না দেখে বিনিয়োগ করা উচিত নয়। যার জ্বলন্ত উদাহরণ ইভিন্স টেক্সটাইল লিমিটেড।
আইসিবি ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ইভিন্স টেক্সটাইলে ২ কোটি শেয়ার কিনে প্রায় ৪০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে। যদি কোম্পানিটির দুই বছরের এজিএম দেখা হতো তাহলে আইসিবি এই টাকা বিনিয়োগ করতো না। এখন আইসিবির এই পুরো টাকাটাই আটকে রয়েছে।
এ ধরণের অপেশাজীবী আচরণের কারণে আইসিবির ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। আইসিবির কাছে অনেক মিউচ্যুয়াল ফান্ডের ইউনিট কেনা রয়েছে, তার নিজস্ব ফান্ড, সরকারি ফান্ড,ইউনিট ফান্ডে বিনিয়োগসহ প্রতিষ্ঠানটির মার্কেটে প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ রয়েছে। অথচ এই পরিমাণ টাকা নিয়ে যদি পেশাজীবীর আচরণ করা হতো তাহলে বাজারকে ঠিক করতে মনে হয় না আর কোনো প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীর প্রয়োজন হতো।
কারণ বাংলাদেশের শেয়ারবাজার খুব ছোটো যেখানে মাত্র ৩০০ কোম্পানি লিস্টেড। কিন্তু আইসিবি বারবার এই অপেশাজীবী আচরণের কারণে পুঁজিবাজার পিছিয়ে যাচ্ছে।
আইসিবি কেন ইউনাইটেড এয়ারের ৩০% শেয়ার কিনে বসে রয়েছে? আইসিবি কেন ম্যাকসনসে ৩০% শেয়ার কিনে বসে রয়েছে? আইসিবি কেন জেনারেশন নেক্সটের ২৫% শেয়ার কিনে বসে আছে? আইসিবি ভালো কোম্পানি রেখে এ ধরণের কোম্পানিকে কেন পেট্রোনাইজ করে এ বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) ভাবতে হবে।

সম্প্রতি গ্রাহকদের ঋন দেওয়ার জন্য আইসিবির কিছু কর্মকর্তা‌কে দুদক গ্রেফতার করেছে। গ্রাহকদের ঋণ দিয়ে বাংলাদেশের লাখ লাখ বিনিয়োগকারীর ইক্যুইটি মাইনাস হয়েছে। কিন্তু এর সঙ্গে অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা‌কে গ্রেফতার না করে আইসিবির এসব কর্মকর্তা‌কে গ্রেফতার করার কারণটা একটু গোলাটে।

আইসিবির যারা নেতৃত্বে বসে রয়েছেন তাদের সিদ্ধান্তে ১৪ টাকা করে ইউনাইটেড এয়ার কেনা হয়েছে ৩০%, জেনারেশন নেক্সট ১৪ টাকা করে টোটাল কোম্পানির ৩০% শেয়ার কেনা হয়েছে, তারপর কেয়া কসমেটিকসের ১০% এর বেশি কিনে বসে রয়েছে। এখানে বিনিয়োগ করে আইসিবির শত শত কোটি টাকা লোকসান হয়েছে।

২০১০ সালের পুঁজিবাজার ধসে অনেক বিনিয়োগকারী শেষ হয়ে গেছে। কিন্তু অন্য কারো বিরুদ্ধে অ্যাকশনে না গিয়ে আইসিবির কর্মকর্তা‌দেরই কেন গ্রেফতার করা হলো? আইসিবির বিভিন্ন অ্যাকাউন্ট থেকে কোটি কোটি টাকা লোপাট হচ্ছে কিনা তা দেখার সময় এসেছে।
প্রতিবারই বৈঠকের কথা বলে মার্কেট উঠানো হয়। তার কিছুদিন পর আবার দরপতন শুরু হয়। সেই চিত্র গত ৮ বছর ধরেই বিনিয়োগকারীরা দেখে আসছে।
আইসিবি ভালো কোম্পানিকে পেট্রোনাইজ না করে ইভিন্স টেক্সটাইলের মতো কোম্পানিকে পেট্রোনাইজ করলে বাজার ভালো হওয়ার কথা নয়।
বিনিয়োগ শিক্ষায় সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কোম্পানির আর্নিং, ইপিএস, ভবিষ্যত গ্রোথ, মৌলভিত্তি দেখে বিনিয়োগ করতে বলা হয়। কিন্তু এ ধরণের মৌলভিত্তি দেখে বক্তারা নিজেরা বিনিয়োগ করেন কিনা সেটা দেখার সময় এসেছে। যদি প্রত্যেককেই যার যার স্থান থেকে প্রফেশনাল আচরণ করতো তাহলে বারবার এই বৈঠকের আঁইওয়াশ বিনিয়োগকারীদের দেখতে হতো না।

শেয়ারবাজারনিউজ/ম.সা

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published.

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.