নুসরাতের ভিডিও করে ফেঁসে যাচ্ছেন ওসি মোয়াজ্জেম (ভিডিও)
শেয়ারবাজার ডেস্ক: ফেনীর সোনাগাজীতে মাদরাসা ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে (১৮) অধ্যক্ষের যৌন নিপীড়নের পর কেরোসিন ঢেলে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় বুধবার (১০ এপ্রিল) রাতে মারা যান তিনি। এ ঘটনায় ফেঁসে যাচ্ছেন তৎকালীন সোনাগাজী মডেল থানা পুলিশের ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন। যৌন নিপীড়নের ঘটনাকে ‘নাটক’ ও পরবর্তীতে অগ্নিদগ্ধের ঘটনাকে ‘আত্মহত্যার’ রূপ দিতে মরিয়া হয়ে চেষ্টা চালিয়ে ছিলেন।
দুটি ঘটনায় অধ্যক্ষ সিরাজউদ্দৌলাসহ তার সহযোগীদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ধরনের আরও অসংখ্য অভিযোগে ১০ এপ্রিল বুধবার সোনাগাজী মডেল থানা থেকে তাকে প্রত্যাহার করা হয়।
এর আগে গত ২৭ মার্চ ওই ছাত্রীকে অধ্যক্ষ শ্রেণিকক্ষে নিয়ে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ উঠলে দুজনকে থানায় নিয়ে যান ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন।
ওসি নিয়ম ভেঙে জেরা করতে করতেই নুসরাতের বক্তব্য ভিডিও করেন। মৌখিক অভিযোগ নেয়ার সময় দুই পুরুষের কণ্ঠ শোনা গেলেও সেখানে নুসরাত ছাড়া অন্য কোনো নারী বা তার আইনজীবী ছিলেন না। ভিডিওটি প্রকাশ হলে অধ্যক্ষ ও তার সহযোগীদের সঙ্গে ওসির সখ্যতার বিষয়টি স্পষ্ট হয়।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে নুসরাত পুলিশের কাছে অভিযোগ করছেন।
ওই ভিডিওতে নুসরাত জাহান রাফি পুলিশকে জানান, ক্লাসে থাকা অবস্থায় তাকে ডেকে নিয়ে যায় মাদ্রাসার অধ্যক্ষ। তার এবার আলিম পরীক্ষা দেওয়ার কথা ছিল।
নুসরাত জানায়, তিনি যখন প্রথম বর্ষে ছিলেন তখনই তাকে প্রেমের প্রস্তাব দিয়েছিল অধ্যক্ষ সিরাজউদ্দৌলা। অধ্যক্ষ নুসরাতকে বলে ‘তোকে আমার অনেক ভালো লাগে।’ জবাবে নুসরাত বলেন, আমি আপনার ছাত্রী, মেয়ের মতো। এসব কি বলছেন! আমার আব্বুও একজন শিক্ষক। আপনি এসব বইলেন না। আমার খুব খারাপ লাগে।
এখানেই শেষ নয়, প্রথম বর্ষে থাকাকালীন সময়ই অধ্যক্ষ নুসরাতকে ২-৩ তিনবার তার কক্ষে ডেকেছিল বলে অভিযোগে উল্লেখ করে নুসরাত।
নুসরাত সে সময় জানান তার মাদ্রাসার বড় হুজুরকে তিনি জানিয়েছে অধ্যক্ষের কথা। কিন্তু হুজুর শুধু তাকে আশ্বস্তই করেন।
অধ্যক্ষ নুসরাতকে বলে, তোর জীবনে তো আগে একটা কলঙ্ক আছে। এখন তোকে কেউ বিশ্বাস করবে না। এখন আমার কাছে থাক।
এরপর ওই ভিডিওতে নুসরাতকে বলতে শোনা যায়, আগামীকাল তার শেষ ক্লাস। আর আজ অধ্যক্ষ পিয়ন দিয়ে তাকে ডেকেছে। আর ডেকে তার গায়ে হাত দেওয়া সহ অনেক বাজে কিছু করেছে। যা সে কখনো কল্পনাই করতে পারেন না। নুসরাত জানায় তার দুই বান্ধবীও তার সাথে অধ্যক্ষের রুমে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাদের যেতে দেওয়া হয়নি।
নুসরাত জানায় তার ওই দুই বান্ধবীর নাম নিশাত আর ফুর্তি।
ভিডিওতে দেখা যায় বিভিন্ন সময় নুসরাতকে জেরা করা হচ্ছে, কিসে পড়, ক্লাস ছিল? ঘটনা জানাতে গিয়ে নুসরাত বারবার কান্নায় ভেঙে পড়ছিলেন। সেই সময় তাকে জিজ্ঞাসা করা হয়, কারে কারে জানাইসো বিষয়টা? নুসরাত যখন জানায় তাকে অধ্যক্ষ ডেকে নিয়ে গিয়েছিল, তখন প্রশ্ন করা হয়, ডেকেছিল, নাকি তুমি ওখানে গেছিলা? পিয়নের মাধ্যমে ডেকেছিল বলে নুসরাত জানালে প্রশ্ন করা হয় পিয়নের মাধ্যমে ডেকেছিল? পিয়নের নাম কী? নুসরাত ওই সময় পিয়নের নাম বলেন, নূর আলম।
পুরো ভিডিও’তে নুসরাত কাঁদছিলেন। একসময় ভিডিও ধারণকারী তাকে ধমকের সুরে বলেন, কাঁদলে আমি বুঝবো কী করে, তোমাকে বলতে হবে। এমন কিছু হয়নি যে তোমাকে কাঁদতে হবে।
ভিডিওর শেষে নুসরাতের কথা বলা শেষ হলে ধারণকারী বলেন, এইটুকুই? আরও কিছু অশালীন উক্তির পাশাপাশি তাকে উদ্দেশ্য করে ওই ব্যক্তি বলেন, এটা কিছু না, কেউ লিখবেও না তোমার কথা। আমি আইনগত ব্যবস্থা নেব। কিছু হয়নি। রাখো। তুমি বসো।
নুসরাতের এ ভিডিও প্রকাশের পর থেকে ওসিকে বিচারের আওতায় আনার দাবি করেন নারী নেত্রী, মানবাধিকার কর্মী ও স্থানীয়রা। অশ্লীল এ জেরা ও ধারণ অপরাধের মধ্যে পড়ে। আইন না মেনে অভিযোগ করতে যাওয়া কারও ভিডিও করলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার সুযোগ আছে বলেও জানিয়েছেন পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা।
আইনজীবী ও মানবাধিকার কর্মী অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর আলম নান্টু বলেন, যৌন হয়রানির অভিযোগ করার সময় ওসির ভিডিওধারণের ঘটনা জঘন্য। এমন ঘটনা হলে তার বিরুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনে মামলা করার সুযোগ রয়েছে।
এ বিষয়ে পুলিশ সুপার এসএম জাহাঙ্গীর আলম সরকার বলেন, ইতিমধ্যে বিষয়টি পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নজরে এসেছে। তাই এ বিষয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
জানা যায়, ওসির রহস্যজনক আচরণে ক্ষুদ্ধ হয়ে পড়লেও ভয়ে কেউ মুখ খুলেননি। পরে ৯ এপ্রিল এ ঘটনা তদন্তে পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইডি খন্দকার গোলাম ফারুক সোনাগাজীর ওই মাদরাসায় এলে ওসির বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে। ডিআইজি গণমাধ্যমকর্মীদের প্রশ্নের জবাব না দিলেও ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন উত্তেজিত হন। পরদিন দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে তাকে প্রত্যাহার করা হয়।
২০১৪ সালের ১২ নভেম্বর ছাগলনাইয়া থানা থেকে প্রত্যাহার করা হয় ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনকে। সেখানে ঘুষ কেলেঙ্কারি, স্বর্ণ চুরি, মামলার আলামত চুরি করে বিক্রি করে দেয়া, সন্ত্রাসীদের মদদ দেয়া, টোকেন দিয়ে নম্বরবিহীন সিএনজি অটোরিকশা থেকে মাসোয়ারা আদায়, ভুয়া মামলা দিয়ে অর্থ আদায়, নিরীহ গ্রামবাসীর ওপর হামলা, ব্যবসায়ীসহ সর্বস্তরের চাঁদাবাজি এমন অসংখ্য অভিযোগে তাকে প্রত্যাহার করা হয়। তারও আগে ফেনী মডেল থানা থেকে নানা অনিয়ম-দুর্নীতি ও জামায়াতের সঙ্গে সখ্যতার অভিযোগে তাকে ওই থানা থেকে প্রত্যাহার করা হয়।
https://www.youtube.com/watch?time_continue=86&v=2CPgit8PTm0
শেয়ারবাজারনিউজ/মু