আজ: শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ইং, ৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৮ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

২৩ মে ২০১৫, শনিবার |

kidarkar

পুঁজিবাজার স্থিতিশীলতায় অনুষ্ঠিত গোলটেবিল বৈঠকে যা বললেন বক্তারা

biniogkari dabi copyশেয়ারবাজাররিপোর্ট : পুঁজিবাজারে স্থায়ী স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নে করণীয় লক্ষ্যে শনিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করা হয়। পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী জাতীয় ঐক্য ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে আয়োজিত এই গোলটেবিল বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সাবেক চেয়ারম্যান ড.এ.বি. মির্জা আজিজুল ইসলাম,চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) চেয়ারম্যান ড.এম.এ মজিদ,ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সাবেক সভাপতি মো: রকিবুর রহমান,বাংলাদেশ লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্স কোম্পানিজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আসাদ খান, অর্থনীতিবিধ ও পুঁজিবাজার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড.আবু আহমেদ,অ্যাসোসিয়েশন অব অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানিজ অ্যান্ড মিউচ্যুয়াল ফান্ডের প্রেসিডেন্ট ও জেনারেল সেক্রেটারী ড.হাসান ইমাম, পুঁজিবাজার বিশেষজ্ঞ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো: হেলাল উদ্দিন,ঢাকা ব্যাংক সিকিউরিটিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও পুঁজিবাজার বিশেষজ্ঞ মোহাম্মদ আলীসহ অন্যান্য অতিথিবৃন্দ।

অনুষ্ঠিত গোলটেবিল বৈঠকে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড.এ.বি. মির্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, গত কয়েক কার্যদিবসের বাজার পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে কিছু আস্থা বৃদ্ধি পেয়েছে। বাজারের লেনদেন সন্তোষজনক অবস্থানর দিকে অগ্রসর হচ্ছে। পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বেশিরভাগ কোম্পানির প্রাইস আর্নি (পিই) রেশিও ১৫ এর নিচে রয়েছে । এতে বিনিয়োগযোগ্য অবস্থা তৈরি হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে দুটি দাবি আদায়ের জন্য আমি ব্যক্তিগতভাবে বলে আসছি। সেটা হচ্ছে: গ্রামীণ ব্যাংককে শহর অঞ্চলে কাজ করার সুযোগ প্রদান করা ও ফিন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং অ্যাক্ট বাস্তবায়ন করা। দু:খজনক হলেও সত্য এই দুটি বিষয়ে অনেকদিন ধরে পার্লামেন্টের অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। আরেকটি বিষয় হচ্ছে পুঁজিবাজারের প্রতি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সুনজর দিতে হবে। ঘটনার ঘটার পর নয় বরং আগেই ব্যবস্থা নিতে হবে। যেকোনো সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করলে তা ইতিবাচক ভূমিকা রাখে। বাজারে ভালো কোম্পানি আসা উচিত। পুঁজিবাজার যে অবস্থায় থাকুক না কেন সাপ্লাই বাড়াতে হবে। এতে গুটিকয়েক কোম্পানিকে ঘিরে কোনো কারসাজি করার সুযোগ থাকবে না।

 

চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) চেয়ারম্যান ড.এম এ মজিদ বলেন, পুঁজিবাজার স্থিতিশীলতায় আমরা আসন্ন বাজেটে বেশকিছু প্রস্তাব দিয়েছি। পুঁজিবাজারের স্বার্থে স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত কোম্পানির ক্ষেত্রে ২০ শতাংশের বেশি লভ্যাংশ প্রদানের ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ আয়কর রেয়াত বহাল রাখা জরুরি। স্টক এক্সচেঞ্জের নিজস্ব শেয়ার হস্তান্তর জনিত মূলধনী লাভের উপর প্রযোজ্য উৎসে কর কর্তনের বিধান পরিপালন জনিত জটিলতার কারণে বাতিল করা,করমুক্ত লভ্যাংশের ক্ষেত্রে বিনিয়োগকারীদের জন্য করমুক্ত লভ্যাংশের পরিমাণ ডিএসইর প্রস্তাব অনুসারে ২০ হাজার টাকার পরিবর্তে তা বাড়িয়ে ৫০ হাজার টাকায় উন্নীত করা দরকার। এছাড়া ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগ বাড়াতে এক্সপোজার লিমিট বাড়াতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সুদৃষ্টি প্রয়োজন। গ্রাহকরা ব্যাংকে আমানত রাখতে যেমন নিরাপদ বোধ করেন। তেমনি করে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগেরও নিরাপত্তা তৈরির অবস্থা সৃষ্টি করতে হবে।

 

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সাবেক সভাপতি মো: রকিবুর রহমান বলেন, পুঁজিবাজার তালিকাভুক্ত নয় এমন কোম্পানিতে ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগ পুঁজিবাজার এক্সপোজার হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। যা ঠিক নয়। এক্ষেত্রে শুধুমাত্র তালিকাভুক্ত কোম্পানিতে বিনিয়োগকেই ব্যাংকের পুঁজিবাজার এক্সপোজার হিসেবে বিবেচনা করা উচিত। এতে ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগ বাড়বে। বাজারে তারল্য ঘাটতি থাকবে না। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, ঋণ পরিশোধের জন্য কোনো কোম্পানির প্রাথমিক গণ প্রস্তাবের (আইপিও) অনুমোদন দেয়া যাবে না। কোম্পানির উদ্যোক্তরা ঋণ করবে আর সেটার দায় বিনিয়োগকারীরা বহন করবে এটা হয় না। আর তালিকাভুক্তির অনুমোদন দেয়ার আগে অবশ্যই কোম্পানির পরিচালকদের খোঁজ-খবর নিতে হবে। অডিটরদের জবাবদিহিতার আওতায় আনতে ফিন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং অ্যাক্ট সময়ের দাবি হলেও দীর্ঘদিন ধরে বিষয়টা সংসদের অনুমোদনের অপেক্ষায় ঝুলে রয়েছে। পুঁজিবাজারের জন্য ফিন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং অ্যাক্ট খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

অর্থনীতিবিধ ও পুঁজিবাজার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড.আবু আহমেদ বলেন, কিছুদিন আগে একটি কসমেটিকস কোম্পানির (কেয়া কসমেটিকস) ২০ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড স্টকে রূপান্তর করা হয়েছে। অথচ এ কোম্পানির রেকর্ড ডেট ক্যাশ ডিভিডেন্ডের ওপর নির্ধারিত ছিল। এটা সম্পূর্ণ বেআইনী কাজ। এ বিষয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নিরব ভূমিকা পালন করা উচিত হচ্ছে না।স্টক ডিভিডেন্ড প্রদানের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কোম্পানির পরিচালকদের শেয়ার বিক্রির লকইন নির্ধারণ করা উচিত। অন্যান্য দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি সে দেশের শেয়ারবাজারের ওপর নির্ভর করে। চায়না,ভারতসহ বেশিরভাগ দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধি পাচ্ছে শেয়ারবাজারের উন্নয়নের জন্য। তাই আমাদের দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধি করতে হলে শেয়ারবাজার ভালো করতে হবে।

অ্যাসোসিয়েশন অব অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানিজ অ্যান্ড মিউচ্যুয়াল ফান্ডের প্রেসিডেন্ট ও জেনারেল সেক্রেটারী ড.হাসান ইমাম বলেন, বর্তমান বাজার পরিস্থিতি অনুযায়ী ব্যাংকের বিনিয়োগ ও একক গ্রাহক ঋণসীমা সমন্বয় করার সময়সীমা ২০১৬ সালের পরিবর্তে ২০২০ সাল পর্যন্ত বর্ধিত করতে হবে। বাজারে তারল্য প্রবাহ বৃদ্ধি ও স্থায়ী স্থিতিশীলতা আনয়নের জন্য এ মূহুর্ত্বে ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগ বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই। আর বিনিয়োগ বাড়াতে এক্সপোজারের সময়সীমা বৃদ্ধি ও বিনিয়োগ হিসাব পদ্ধতি সংশোধন করা জরুরি।

 

পুঁজিবাজার বিশেষজ্ঞ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো: হেলাল উদ্দিন বলেন, আমাদের শেয়ারবাজারে নূন্যতম ১০ শতাংশ ডিভিডেন্ড ঘোষনা করলেই তা ‘এ’ ক্যাটাগরিতে স্থান করে নেয়। একটি কোম্পানি ১০ টাকার শেয়ার অতিরিক্ত প্রিমিয়াম যুক্ত করে বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ সংগ্রহ করছে। এই অর্থ যদি কোনো ব্যাংক থেকে নেয়া হতো তাহলে তাকে সুদ দিতে হতো। ব্যাংকের প্রতি কোম্পানির আন্তরিকতার কোনো অভাব থাকতো না। কিন্তু বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে কোম্পানি ডিভিডেন্ড দিতে কৃপণতা করছে। নামে মাত্র ডিভিডেন্ড দিয়ে ক্যাটাগরি ধরে রাখছে। এক্ষেত্রে যে কোম্পানি বাজার থেকে শেয়ার প্রতি যত টাকা করে উত্তোলন করবে তাকে সেই পরিমাণ ডিভিডেন্ড দিতে হবে। তবেই সেটি ‘এ’ ক্যাটাগরিতে স্থান করে নেবে। ক্যাটাগরি নির্ধারণে এমন আইন প্রণয়ন করা উচিত যেখানে বিনিয়োগকারীদের পুঁজির নিরাপত্তা বজায় থাকে। ব্যাংক লুটপাট হলে যেমন গ্রাহকদের অর্থ ফেরতের ব্যবস্থা করা হয়। সারাদেশে হইচই পড়ে যায়। অথচ দীর্ঘদিন ধরে শেয়ারবাজার লুটপাট হচ্ছে সেদিকে কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। আরেকটি বিষয় হচ্ছে ঘন ঘন আইপিও অনুমোদন বন্ধ করতে হবে। শেয়ারবাজারে বর্তমানে সাপ্লাই আছে ডিমান্ড নাই। তালিকাভুক্ত কোম্পানির শেয়ার দর অনেক নিচে নেমে যাচ্ছে। এই অবস্থায় ঘন ঘন নতুন কোম্পানির অনুমোদন দেয়ার দরকার নেই।

 

শেয়ারবাজারনিউজ/সা

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published.

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.