বিনিয়োগকারীদের দিকে নজর নেই : ৩০০ কোম্পানির রিজার্ভ ৬৭ হাজার কোটি টাকা

শেয়ারবাজার রিপোর্ট: বিনিয়োগকারীরা প্রতিটি কোম্পানির কাছ থেকেই ভালো ডিভিডেন্ড প্রত্যাশা করেন। কিছু কোম্পানি তাদের প্রত্যাশা পূরণ করলেও বেশিরভাগ কোম্পানির বিনিয়োগকারীদের দিকে নজর নেই। এদিকে পুঁজিবাজারে ১৯ খাতের ৩০০টি কোম্পানির রিজার্ভ ও সারপ্লাসের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৬৭ হাজার কোটি টাকা। কোম্পানির ভীত মজবুতের জন্য বিষয়টি সুখকর হলেও প্রাপ্য ডিভিডেন্ড থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা। অন্যদিকে পুঁজিবাজারে তারল্য সংকট চলছে। এসব কোম্পানির অলস অর্থ পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করলে একদিকে যেমন কোম্পানি লাভবান হতো। অন্যদিকে বাজারে স্থিতিশীলতা ফিরে আসতো বলে মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।
তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ১৯ খাতে রিজার্ভের পরিমাণ রয়েছে ৬৭ হাজার ৮০ কোটি ৯১ লাখ ৮০ হাজার টাকা। খাতগুলো হলো: ব্যাংক, আর্থিক, মিউচ্যুয়াল ফান্ড, প্রকৌশল, খাদ্য ও আনুসাঙ্গিক, জ্বালানী ও বিদ্যুৎ, পাট, বস্ত্র, ওষুধ ও রসায়ন, সেবা ও আবাসন, সিমেন্ট, তথ্য ও প্রযুক্তি, চামড়া, সিরামিক, বীমা, টেলিযোগাযোগ, কাগজ ও মুদ্রণ, ভ্রমণ ও অবকাশ এবং বিবিধ।
জানা যায়, ব্যাংক খাতে থাকা ৩০টি কোম্পানির মধ্যে ২৯টির রিজার্ভের পরিমাণ ২৩ হাজার ২৬৭ কোটি ৭০ লাখ ৮০ হাজার টাকা। আর্থিক খাতের ২৩টি কোম্পানির মধ্যে ২২টির রিজার্ভের পরিমাণ ৫ হাজার ৪১ কোটি ৩২ লাখ ৯০ হাজার টাকা। মিউচ্যুয়াল ফান্ড খাতের ৪১টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৪০টির রিজার্ভের পরিমাণ ৬৮৯ কোটি ৬৫ লাখ ৮০ হাজার টাকা। প্রকৌশল খাতের ৩০টি কোম্পানির মধ্যে ২৫টির রিজার্ভের পরিমাণ ৩ হাজার ৯৬১ কোটি ৭৯ লাখ টাকা।
খাদ্য ও আনুসাঙ্গিক খাতের ১৮টি কোম্পানির মধ্যে ১১টির ১ হাজার ৪৫২ কোটি ৫ লাখ ৮০ হাজার টাকা। জ্বালানী ও বিদ্যুৎ খাতের ১৮টি কোম্পানির মধ্যে ১৭টির রিজার্ভের পরিমাণ ৯ হাজার ৫২৯ কোটি ৫২ লাখ ৬০ হাজার টাকা।
পাট খাতের ৩টি কোম্পানির মধ্যে ২টির রিজার্ভের পরিমাণ ৬৯ কোটি ৮৭ লাখ ২০ হাজার টাকা। বস্ত্র খতের ৪০টি কোম্পানির মধ্যে ৩৯টির রিজার্ভের পরিমাণ ৩ হাজার ৪৪৩ কোটি ৬৫ লাখ ৭০ হাজার টাকা। ওষুধ ও রসায়ন খাতের ২৭টি কোম্পানির মধ্যে ২৫টির রিজার্ভের পরিমাণ ৫৯ হাজার কোটি ১ লাখ ১০ হাজার টাকা। কাগজ ও মূদ্রণ খাতের ২টি কোম্পানির রিজার্ভের পরিমাণ ৭৯ কোটি ৩ লাখ ২০ হাজার টাকা । সেবা ও আবাসন খাতের ৪টি কোম্পানির রিজার্ভের পরিমাণ ১ হাজার ১২৭ কোটি ৮১ লাখ ৪০ হাজার টাকা। সিমেন্ট খাতের ৭টি কোম্পানির মধ্যে ৬টির রিজার্ভের পরিমাণ ১ হাজার ১২৩ কোটি ৮৭ লাখ ৩০ হাজার টাকা। তথ্য ও প্রযুক্তি খাতের ৬টি কোম্পানির রিজার্ভের পরিমাণ ২৭ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। চামড়া খাতের ৫টি কোম্পানির রিজার্ভের পরিমাণ ৫২১ কোটি ৫১ লাখ ৭০ হাজার টাকা।
সিরামিক খাতের ৫টি কোম্পানির রিজার্ভের পরিমাণ ৬৪৬ কোটি ৩৬ লাখ ৪০ হাজার টাকা।
বীমা খাতের ৪৬টি কোম্পানির রিজার্ভের পরিমাণ ১ হাজার ৭৯১ কোটি ২৭ লাখ ৭০ হাজার টাকা। টেলিযোগাযোগ খাতের ২টি কোম্পানির রিজার্ভের পরিমাণ ১ হাজার ১৮৫ কোটি ১৪ লাখ ৩০ হাজার টাকা। ভ্রমণ ও অবকাশ খাতের ৪টি কোম্পানির রিজার্ভের পরিমাণ ১ হাজার ৮৮৮ কোটি ৫৬ লাখ ৮০ হাজার টাকা।
সর্বশেষ বিবিধ খাতে থাকা ১১টি কোম্পানির মধ্যে ১০টির রিজার্ভের পরিমাণ রয়েছে ৫ হাজার ৩৩৪ হাজার ৩৯ লাখ ৯০ হাজার টাকা।
বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পুঁজিবাজারের বর্তমান ক্রান্তিলগ্নে কোম্পানিগুলো রিজার্ভের অর্থ যদি পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করে তাহলে বাজারে স্থিতিশীলতা ফিরে আসবে। প্রাইস আর্নি (পিই) রেশিও ভিত্তিতে বর্তমান বাজার বিনিয়োগবান্ধব হওয়ায় কোম্পানিগুলো অত্যন্ত লাভবান হতে পারতো। পাশাপাশি বছর শেষে বিনিয়োগকারীরাও ভালো পরিমাণ ডিভিডেন্ড পেতেন। তাই এ বিষয়ে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) দৃষ্টি দেয়া উচিত বলে মনে করেন তারা।
শেয়ারবাজারনিউজ/মু/সা